শামছুল ইসলাম সোহাগঃ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে মাজেদা বেগম (২১) নামের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত মাজেদা উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাবই গ্রামের আব্দুল মুকিতের স্ত্রী। এ ঘটনায় ৩ জুলাই শুক্রবার রাতে নিহত গৃহবধুর মাতা কবিরুন নেছা গৃহবধুর স্বামী-শাশুড়ীসহ শশুর বাড়ির ৮ জনকে আসামী করে শুক্রবার একটি কুলাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি, দেবরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার এজাহার, পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একই উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্তগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিমের মেয়ে মাজেদা বেগমের সাথে বিয়ে হয় হাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাবই গ্রামের (মোল্লা বাড়ি) মো. হাছলু মিয়ার ছেলে আব্দুল মুকিদের।
স্বামী মুকিত সিলেট নগরে একটি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির কাজ করেন। বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে শাশুড়ী, ননদসহ শশুরবাড়ির লোকজন গৃহবধুকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন।
৪-৫ মাস পূর্বে মাজেদার ননদ হেপী বেগমের বিয়ের জন্য শশুরবাড়ির লোকজন মোটা অংকের টাকা দাবি করে। বিষয়টি মাজেদা তার বাবার বাড়ির সবাইকে জানায়। তারা তাকে বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য বলেন এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থাও তেমনটা ভালো নয় এটা জানান। তাছাড়া মাজেদার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
এ অবস্থায় ননদের বিয়েতে টাকা ও যৌতুকের টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে মাজেদা জানান। এতে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।বৃহস্পতিবার ভোর ৬ টার দিকে ঘরের ভিতর মাজেদাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে গলায় শ্বাসরোধের মাধ্যমে হত্যা করে শশুর বাড়ির লোকজন।
ওই দিন সকাল ৮টার দিকে মাজেদার মা কবিরুন নেছাকে মোবাইলে ফোন করে তাঁর শাশুড়ী ও ননদ জানায় হৃদরোগে সে (মাজেদা) মারা গেছে। খবর পেয়ে শশুরবাড়িতে মাজেদার মা ও স্বজনরা গিয়ে দেখতে পান মাজেদার গলায় এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তড়িঘড়ি করে তাঁরা লাশ দাফনের চেষ্টাও চালানো হয়। এতে স্বজনদের সন্দেহ হয়।
বিষয়টি তাঁরা পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাজেদার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাজেদার শাশুড়ী আফিয়া বেগম (৫০), দেবর মোস্তাক আহমদ (২০), জায়েদ আহমদ (২৩) ও আত্মীয় আব্দুল জলিলকে (৩২) আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল (০৬-০৭) রাত আটটার দিকে নিহত মাজেদার মা কবিরুন্নেছা বাদী হয়ে আটক চারজনসহ মাজেদার ভাশুর মুক্তার মিয়া (২৮), স্বামী মুকিত ও দুই ননদকে আসামী করে মামলা করেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন শ্বাসরোধে গৃহবধু মাজেদাকে হত্যা করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে নিহত মাজেদার স্বামী আব্দুল মুকিতের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই কানাই লাল চক্রবর্তী বলেন, নিহত মাজেদার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনর্চাজ মো. ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর মাতা বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিরা পলাতক রয়েছে তবে তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আগের খবর
পরের খবর