জসিম উদ্দিনঃ মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না। কালজয়ী এই গানের কথা গুলো আজ বড় বেশি মনে পড়ছে।গানের গভীরতা আর বাস্তবতা গভীর ভাবে উপলব্ধি করে চোখের কোনে লোনাজল জমাট বাঁধলেও তা আবার বাঁধাহীন ভাবে গড়িয়ে পড়লো।
বলছিলাম, ছবিতে এই দুখিনী মায়ের কোলে অবুঝ শিশুটির কথা। যে শিশুটি বোঝেনা জীবনের মানে কি। জন্ম থেকেই যার কপাল পোড়া। শার্শার নাভারণে মা ও সন্তানের ভিক্ষাবৃত্তির সময় একান্ত আলাপচারিতায় জানা যায় শিশু টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার জীবনের কথা।
জন্মের পর থেকেই যার স্পর্শকাতর স্থানে বাসা বেঁধে আছে প্রাণঘাতি টিউমার। বয়সের সাথে সাথে টিউমারও বড় হচ্ছে। যার ফলে নিষ্পাপ শিশুটির দেহ অকেজো হচ্ছে দিনে দিনে।শিশুটির নাম ইরফান, বয়স মাত্র ৫ বছর। পিতা মফিজুর তার জন্মের পরপরই তাদেরকে ছেড়ে চলে যায় দুরে কোথাও। আজও ফিরে আসেনি।
জনম দুখিনী মমতাময়ী মা তহমিনা খাতুনের শীতল কোল জুড়ে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে শিশু ইরফান। তহমিনা খাতুন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার ব্রজবকসা ইউনিয়নের বকসা গ্রামের কুতুব উদ্দিনের মেয়ে।তহমিনা খাতুন বলেন, ইরফান জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে তার বাবা আমাদেরকে ফেলে চলে যায়। ইরফান জন্মের সময় শরীরের পেছন সাইডে মাজার শেষ অংশে একটি ছোট টিউমার দেখা যায়।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে টিউমারটিও বড় হতে থাকে। তখনও ভালো ভাবে হাটা চলা দৌড়াদৌড়ি ছিল অন্য সব শিশুদের মতো। কিন্তু ধীরে ধীরে লক্ষ করি ইরফান তার হাটা চলা দৌড়াদৌড়িতে কষ্ট অবুভব করছে। কিছুটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাচল করছে। আজ বিশালাকার টিউমার দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে পায়ের শিরায় টান পড়ে দুই পা-ই বাঁকা হয়ে ইরফান আজ শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধি হয়ে গেছে।
কচি শরীরে বাসা বেঁধেছে ভয়াবহ বহুমুত্র রোগ। প্রতি এক থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রশ্রাব হয় তার। কখনও চিকিৎসকের শরানাপন্ন হয়েছে কিনা জিজ্ঞেসা করলে উত্তরে তহমিনা খাতুন বলেন, স্বামী সংসার হারিয়ে আজ আমি পিত্রালয়ে।
আমার পিতা ভ্যান চালায়। সেখানে অভাবের শেষ নেই। সংসারে অনেক বাস্তবতার সাথে লড়াই করে থাকতে হয় আমার। তারপরও ভিক্ষাবৃত্তি করে জমানো কিছু টাকা দিয়ে দু এক জায়গায় দেখিয়েছি কিন্তু কমেনি। এমন অবস্থায় জীবনে কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াই করছি ছেলেকে নিয়ে।যদি দ্রুত অপারেশন করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে কখনও আর হাটবে না ইরফান। আমি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এদিকে ইরফানকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার সাথে শার্শার কৃতি সন্তান দেশ সেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান অসহায় ইরফানের পরিবারকে মানবিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এগিয়ে আসেন নাভারণ বাজারের বাদল নার্সারীর প্রোপাইটর বাদল হোসেন। দুজন মিলে তাদের জন্য খবার এবং নগদ অর্থ তুলে দেন ইরফানের মায়ের হাতে। পাশাপাশি ইরফানকে নিয়ে ফেসবুকে লাইফ পোস্ট করেন এবং মানবিক সাহায্যের আবেদন করেন।
এসময় উদ্ভাবক মিজান বলেন, শিশু ইরফানের বাস্তব চিত্রটি খুবই দুঃখজনক। এই অবস্থায় তাকে যদি অতি দ্রুত অপারেশন করা না যায় তাহলে পৃথিবীটা তার জন্য খুবই কষ্টের। ভবিষ্যৎটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাই আমি শিশুটির প্রতি মানবিকতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা কছি।
আগের খবর