কক্সবাজারে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার

0 ২০৬

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প আগামী
২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প’র আওতায় ২ শত ৫৪ একর জমিতে ২০ টি ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

বৃৃৃৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণেরও কথা রয়েছে।এসব ভবনের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে লিখে ২০টি ভবনের নিম্নরূপ নামকরণ করেছেন।গুলমোহর নামটির প্রচলিত নাম ‘কৃষ্ণচূড়া’ এটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দিয়েছেন সেটাও নিজ হাতে লিখে দিয়েছেন।
১) দোঁলনচাপা, ২) কেওড়া, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কোরাল, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) বাকখালী, ১৯) ইনানী, ২০) সাম্পান।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পাধীন ১৩৯টি ভবনের মধ্যে ২০ টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ৫তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবন ও ১০ তলা বিশিষ্ট ১টি শেখ হাসিনা টাওয়ার। এখানে আশ্রয় পাবে ৪৪০৯টি পরিবার। এ ছাড়া আরো থাকছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারি পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল,
স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনোদনের জন্য পার্ক।

পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য স্থাপত্যশৈলী ও আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায় নির্মিত একটি শুটকি পল্লী।খুরুশকূল আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মূল পর্যটন শহরের সাথে সংযোগের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিমান বন্দরটি সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বিমানবন্দরের আশেপাশের সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত নাজিরারটেক, কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়াসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

খুরুশকূলে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবনগুলোতে এসব এলাকার খাস জমিতে বসবাসকারি পরিবারগুলোকে সরকার আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও চকরিয়াসহ জেলার উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪৪০৯টি পরিবার কক্সবাজার বিমানবন্দরের আশাপাশের এলাকায় খাস জমিতে বসবাস করে আসছিল।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার ফলে এসব পরিবার যাতে আবারো উদ্বাস্তু না হয়, এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের কয়েকটি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।

২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বাঁকখালী নদী মোহনার পাশে নেয়া হয় খুরুশকূল ‘বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ উদ্যোগ। পরে ২০১৭ সালের মার্চে কার্যাদেশের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে দ্রুত এগিয়ে চলে এ প্রকল্পের কাজ। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে ২০টি ভবনের নির্মাণকাজ।যেখানে আশ্রয় পাচ্ছে ৬৪০টি উদ্বাস্তু পরিবার।

এদিকে, ২৩জুলাই বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে সকল প্রস্তুতি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনুষ্ঠানস্থলে সাজ-সজ্জাসহ নানা প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন। এছাড়া নির্মিত ভবনগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের লাইন সংযোগসহ প্রস্তুত করা হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন,আগামী বৃহস্পতিবার (২৩জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলার খুরুশকুলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ভবনগুলোর বসতঘর
উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভার্চুয়াল প্লাটফরমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। এতে গণভবন ও খুরুশকূলের প্রান্ত থেকে নির্ধারিত অতিথিরা অংশগ্রহণ করবেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কর্মসূচীতে থাকছে, সকাল ১০ টায় অতিথিবৃন্দের অনুষ্ঠানস্থলে আগমন ও আসন গ্রহণ, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংকোয়াট হলে আগমন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পৌণে ১১টা পর্যন্ত গণভবন প্রান্ত থেকে প্রকল্পের উপর সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন সঞ্চালনা করবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখবেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সকাল ১০টা ৫০মিনিটে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সূচনা বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই প্রধানমন্ত্রী নির্মিত ২০টি ভবন শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন এবং ১৯জন উপকারভোগীদের মাঝে বসতঘরের চাবি হস্তান্তর করবেন।

এসময় খুরুশকুল প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেমতবিনিময় করবেন কক্সবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সঞ্চালনায় ৩জন উপকারভোগী অনুভূতি প্রকাশ, সেনাবাহিনীর রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মাইন উল্লাহ চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কথা বলবেন।

বেলা পৌণে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্মারক গ্রহন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।খুরুশকূল প্রান্তে ৩জন উপকারভোগী কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্পস্থলে রোপন করা হবে ফলদ, বনজ ও ঔষুধী গাছের চারা।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!