
কবিতায় সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২১ প্রাপ্তিতে “সন্দ্বীপ সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে” কবি আসাদ মান্নান কে সংবর্ধনা দেয়া অনুষ্ঠান সন্দ্বীপ উপজেলা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনফারেন্স হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।সাংবাদিক ও সংগঠনের সদস্য সচিব ইলিয়াস কামাল বাবু র সঞ্চালনায় সংবর্ধিত কবিকে নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সাগরকন্যা সম্পাদক কবি মোস্তফা হায়দার।স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সন্দ্বীপ সাহিত্য পরিষদের আহবায়ক কবি ও গীতিকার কাজী শামসুল আহসান খোকন।
কবিকে নিয়ে স্মৃতি চারণ ও কথামালায় মেতে ওঠেন সন্দ্বীপ প্রাইমারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাইন উদ্দীন,উত্তর সন্দ্বীপ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান,সজাগ সন্দ্বীপ পত্রিকার সম্পাদক প্রভাষক ফছিউল আলম,ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক সাজিদ মোহন, শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ইনসাফ,প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম,কবির প্রতিবেশী বন্ধু কামরুল হাসান টিটু,কবি নীলাঞ্জন বিদ্যুৎ,সাউথ সন্দ্বীপ কলেজের অধ্যাপিকা সুরাইয়া আক্তার সন্দ্বীপ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার আবুল কাশেম শিল্পী,কবি পত্নী নাজমা মান্নান।
সংবর্ধিত কবি আসাদ মান্নান বলেন“সরকারী দায়িত্ব থাকাকালীন মানুষের খেদমত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি,কবিতায় মানুষের কথা বলবার চেষ্টা করেছি।অনুষ্ঠানের সভাপতি সন্দ্বীপ সাহিত্য পরিষদের আহবায়ক কবি ও গীতিকার কাজী শামসুল আহসান খোকন এর ব্ক্তব্যের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।আসাদ মান্নান,বাংলা সাহিত্যে কবিতায় একজন সুপরিচিত নাম। তিনি সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান এই কবির ৩ নভেম্বর ছিলো জন্মদিন।১৯৫৭ সালের এদিন চট্রগ্রামের সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে অনার্স,এমএ করেছেন।
রচনাবলী: ১৪টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার।উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ সুন্দর দক্ষিণে থাকে,সূর্যাস্তের উল্টোদিকে,সৈয়দ বংশের ফুল,দ্বিতীয় জন্মের দিকে,ভালোবাসা আগুনের নদী,তোমার কীর্তন,যে-পারে পার নেই সে-পারে ফিরবে নদী,হে অন্ধ জলের রাজা,নির্বাচিত কবিতা,প্রেমের কবিতা’কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু গদ্যও রচনা করছেন।সুন্দর দক্ষিণে থাকে,হে অন্ধ জলের যাত্রা,সৈয়দ বংশের ফুল,ভালোবাসা আগুনের নদী, ভালোবাসার কবিতা’ প্রভৃতি তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ।
কর্মজীবন: ১৯৮১ সালে কর্মজীবনে তিনি প্রবেশ করেন স্কুল কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে।২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তার যোগদানের পরে অনুষ্ঠান,সংবাদ,নাটক ও অন্যান্য শাখায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার নিরন্তর চেষ্টা করেছেন।তাছাড়া ও তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসহ, রাজশাহী বিভাগীয় করিক্ত সচিব, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, সরকারের সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে কর্মরত ছিলেন।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন-এর একজন সদস্য হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রাপ্তি ও পুরস্কার: তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান উদযাপনের মাধ্যমে বিটিভি’র ৫০ বছরের পুরোনো কলাকুশলী ও দর্শক শুভান্যুধায়ীদের সম্মিলন করে একটি মিলনমেলা করে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে শ্রেষ্ঠ তরুণ কবি হিসেবে পরপর দুবার ‘বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার,২০০৭ সালে জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার,২০১২ সালে কবিকুঞ্জ পদক ও সম্মাননাসহ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
“বিদেশেী কুত্তার পিঠে বিদেশী শকুন
বেশ্যার ছেলের হাতে ইতিহাস খুন
আগুন লেগেছে তাই যমুনার জলে
আগে আগে হনুমান রাম পিছে চলে
সীতাকে হরণ করে রাক্ষস রাবণ
টুঙ্গিপাড়ায় হবে বঙ্গভবন।”
১৯৭৭ সালের সেই সাড়া জাগানো কবিতার একটি স্তবক। যে কবিতার জন্য শুধূ পূরুষ্কার অর্জন নয়, তরুণ বয়সে বাংলা সাহিত্যে কবিকে প্রতিষ্টিত করতে বড় রকমের সহায়ক ছিল।
“আমি কোনো বৈদ্য নই অনবদ্য কবিতা লিখি না
শব্দের সামান্য দাস ইচ্ছে হলে লিখি টুক টাক
গাউস কুতুব যারা উহাদের ভাগ্যে লিখা থাক
খ্যাতির সালসা মধু মদালস রূপসী সখিনা।”
জবাব দেবে না কেউ
এ অস্থির পৃথিবীতে আজ
শিশুরা আনন্দে নেই
ফুলেরা আনন্দে নেই
পাখিও আনন্দে নেই
নদীও আনন্দে নেই
চারিদিকে নেই নেই…
সবখানে দেখি শুধু আনন্দহীনতা
তার সঙ্গে যুক্ত আছে
খুন
হত্যা
লম্পটের আস্ফালন
ধর্ষিতার নিঃশব্দ বিলাপ।
আজ হরিণীর মাংস খেয়ে মানুষ গিয়েছে বনে
বাঘ কিংবা বাঘিনী শিকারে; মনে জাগে অদ্ভুত বাসনা
বাঘিনীর স্তন কেটে যদি খুঁজে পাওয়া যায়
মানুষের রক্তচিহ্ন ; হায়!
এতটা নৃশংস কেন আজ মানব প্রজাতি!
মানুষ যদি না হয় প্রকৃত মানুষ
তবে কি সভ্যতা বাঁচে?
আনন্দের লেশ মাত্র থাকে?
এ সবের জবাব কে দেবে? — জবাব দেবে না কেউ–
মৃতদের জবান থাকে না।