করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। আগামী মাসে মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এতে মহান রবের নৈকট্য লাভের আশায় কোরবানি দেন মুসলমানরা। চলমান করোনায় বিপাকে পড়বেন কোরবানি দেয়া দেশের এসব মধ্যবিত্ত শ্রেণী। যারা কয়েকজন মিলে (শেয়ার) কোরবানি দেন। করোনার কারণে এ শ্রেণীর সবচেয়ে বিপাকে থাকায় অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবেন না। এতে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যেতে পারে। এতে পর্যাপ্ত গরু থাকার পরও দাম পাবে না খামারিরা। এমন উদ্বেগের মধ্যে কোরবানিযোগ্য পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের গরু খামারি, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। যদিও ভারতের গরু আনা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসে জীবন-জীবিকার যুদ্ধে দিশেহারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তিন মাসের করোনায় অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, চাকরি থাকলে বেতন কাটছাঁট হয়েছে। অনেকের বেতন অনিয়ম হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যেই কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন পশুর হাটের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনেই রাজধানীসহ সারা দেশে কোরবানির পশুরহাট বসবে। কিন্তু যারা কোরবানি পশু কিনবেন সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী কি কোরবানি দিতে পারবেন? না পারলে এর প্রভাব পড়বে পশুর খামারি-বেপারীদের ওপর। তাদের দুশ্চিন্তা এবার পশুর দাম পাবো তো?
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর থেকে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। আগে প্রতি বছর ২৪-২৫ লাখ ভারতীয় গরু আসত। ২০১৯ সালে মাত্র ৮৫ হাজার গরু ঢুকেছে। গত বছর সারা দেশে কোরবানিযোগ্য ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশুর কোরবানি হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় এক কোটির বেশি পশুর কোরবানি হতে পারে।
এ দিকে ঈদুল আজহার পশুর সংখ্যা নিরূপণ, কোরবানির হাটবাজারে স্বাস্থ্যসম্মত পশু ক্রয়-বিক্রয় ও স্বাস্থ্যসেবা, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে আগামী সপ্তাহ মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে পশুর সম্ভাব্য একটি দাম নির্ধারণ করা হতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, গত বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ এবার ১ কোটি ২০ লাখ। তিনি বলেন, দেশের পর্যাপ্ত পশু আছে। তবে করোনার কারণে কোরবানির সংখ্যা একটু কমে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, দুই-তিন বছর থেকে আমাদের কোরবানির পশু অন্য দেশ থেকে আনতে হচ্ছে না। গত বছরও ১০ লাখের মতো পশু অবিক্রীত ছিল। এর মানে আমরা গবাদিপশুতে একটা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এবারো পশু চাহিদার চেয়ে বেশিই আছে। তিনি বলেন, পশু কিভাবে বিক্রি হবে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব সংস্থার। যেমন- ঢাকায় ঠিক করবে সিটি করপোরেশন। আমরা সিটি করপোরেশনের ঠিক করা হাটে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যজনিত চিকিৎসা নিশ্চিত করে থাকি। এবার এর হার বাড়ানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ পশু কোরবানি ও জীবন রক্ষা দুটিই জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই কাজ করবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে অন্যান্য বছরের মতো এবারো পশুর হাট বসলে তা হবে আত্মঘাতী। করোনা সংক্রমণের মধ্যে, হাট বসলে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা মোটেই সম্ভব নয়। বরং উল্টো ঝুঁকির আশঙ্কাই বেশি। করোনা মহামারীর এই সময়ে খোলা আকাশের নিচে এই হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা কতটুকু সম্ভব?
এমন বাস্তবতায় কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে গ্রাহকদের জন্য কোরবানির পশু কেনাবেচার সুযোগ করে দিচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোম্পানি সরাসরি কেনাবেচার সাথে জড়িত। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে শুধু গরু কেনাবেচার বিজ্ঞাপন দিয়েছে। যেখানে শুধু বিক্রেতা ও ক্রেতা থাকবেন। আবার গোয়াল থেকেই কাক্সিক্ষত মূল্যে পালিত পশু বিক্রি করতে পারছেন চাষি বা খামারিরা।
বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে এ সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে অনলাইনে বুকিং দিয়ে কিছু অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করলে নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতে গরু পৌঁছে দেবে বিক্রেতা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
কোরবানির পশু বিক্রির এসব ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত গরুর ছবি, কোড নম্বর, দাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিডিও। গরুর দাম ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। দাম ও সাইজ দেখে কেউ যদি কোনো পশু পছন্দ করেন তবে দিয়ে দিতে পারেন অনলাইনে বুকিং। এর পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ই-ক্যাশ, বি-ক্যাশ কিংবা ব্যাংক