সন্দ্বীপের মাটি আর মানুষের মনিকোটায় যিনি মিশে আছেন।মৃত্যুর আজ ১৯ বছর পরেও যার জন্য মানুষ এখনো কাঁদেন।যার ভালবাসার ছোঁয়া এখনো খেটে খাওয়া মানুষের আত্মায় নাড়া দেয়।যিনি সন্দ্বীপে ভেঙ্গে পড়া শূন্য আওয়ামী লীগ কে এ দ্বীপের বুকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনিই সন্দ্বীপের গন মানুষের দ্বীপবন্ধু।দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৪৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাউরিয়া ইউনিয়নের কুছিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন।সেখানেই তাঁর শৈশব ও বেরে উঠা।তিনি মুছাপুর বদিউজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক,নাজির হাট কলেজ থেকে আইকম,চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে কর্মজীবন শুরু করেন টবাকো কোম্পানিতে।১৯৬৫ সালে যোগদান করেন তৎকালীন ইউনাইটেড ব্যাংকে।১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ইউনাইটেড ব্যাংক লি. ধামরায় শাখায়।১৯৮৩ সালে ন্যালনাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রনী ভূমিকা রাখেন।
তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সমুহ-বাংলাদেশ কমার্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.,কর্নফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড,রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকোম্পানি লিমিটেড,ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড,সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড,পিয়ারলেস কো-অপারেটিভ সেভিংস এন্ড ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড,রুপালী ক্রেডিট কো-অপারেটিভ লিমিডেট প্রভৃতি।তাঁর সম্পাদনায় বের হত-দৈনিক রুপালী,সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ,সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর,সাপ্তাহিক চৌখে চৌখে,সাপ্তাহিক প্রিয় খেলা,মাসিক গোলাপী,মাসিক ব্যাংকার,দি উইকলি বাংলাদেশ নিউজ প্রভৃতি।তিনি ঘটিয়েছিলেন সংবাদপত্রে এক দারুন বিপ্লব।১৯৮৭ সাল তারই অর্থায়নে ‘সন্দ্বীপের ইতিহাস,সমাজ ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।এটি সন্দ্বীপেরর দ্বিতীয় ইতিহাস গ্রন্থ ।
তিনি সন্দ্বীপ ইয়াং অ্যাসোসিয়েশন-ঢাকা,সন্দ্বীপ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদ-ঢাকা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ-সন্দ্বীপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ‘আমার দেশ’ নামীয় সামাজিক সংগঠনের জন্মদাতাও তিনি।তিনি আবাহনী ক্লাবের সহ-সভাপতি, ধানমন্ডি ক্লাবের সহ-সভাপতি ও মেরিনার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ পর্যস্ত সন্দ্বীপ সমিতি ঢাকা’র সভাপতি ছিলেন।মুস্তফিজুর রহমান যে সব দেশ সফর করেন-যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,ফ্রান্স,অষ্ট্রেলিয়া,জার্মানি,সুইজারল্যান্ড,নরওয়ে,ভারত,সিঙ্গাপুর,সৌদি আরব,থাইল্যান্ড প্রভৃতি।
সন্দ্বীপে লায়ন মুস্তাফিজুর রহমান প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ- মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ(১ জুলাই ১৯৮৮),দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান হাই স্কুল(১ মার্চ ১৯৯৫),দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১ জানুয়ারি ১৯৯০,কাছিয়াপাড়),আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১৯৯৫, ষোলশহর বাজার সংলগ্ন-মগধরা),কালাপানিয়া দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১ জানুয়ারি ১৯৯২),লায়ন মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১৯৮৯,বাংলা বাজার-মগধরা),পূর্ব মুছাপুর মুস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১ জানুয়ারি ১৯৯২),দ্বীপবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(১ অক্টোবর ১৯৯১,সন্তোষপুর),মুস্তাফিজুর রহমান ইবতেদায়ী মাদরাসা(উড়ির চর),দ্বীপবন্ধু আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান এতিমখানা(উড়ির চর),মুস্তাফিজুর রহমান ইসলামিয়া মাদরাসা(হারামিয়া),মুস্তাফিজুর রহমান ফোরকানিয়া মাদরাসা(হরিশপুর),আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান সিনিয়র ফোরকানিয়া মাদরাসা (হারামিয়া),মুস্তাফিজুর রহমান ফোরকানিয়া মোক্তব (বাউরিয়া ফেরিঘাট),মুস্তাফিজুর রহমান মসজিদ (কাছিয়াপাড়),মুস্তাফিজুর রহমান ছাত্রাবাস(পূর্ব সন্দ্বীপ হাই স্কুল),মুস্তাফিজুর রহমান ছাত্রাবাস (এ কে একাডেমি-গাছুয়া),মুস্তাফিজুর রহমান ভবন (মুছাপুর বদিউজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়),মুস্তাফিজুর রহমান মিলনায়তন(সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল),মুস্তাফিজুর রহমান ক্রীড়াঙ্গন(পাবলিক হাই স্কুল),মুস্তাফিজুর রহমান বিজ্ঞান ভবন(দক্ষিন পূর্ব সন্দ্বীপ হাই স্কুল)প্রভৃতি।এর বাইরে তিনি সন্দ্বীপের অসংখ্য বিদ্যালয়ের ভবন-মসজিদ-মন্দির নির্মানে অনুদান দেন।
তাঁর উদ্যোগে আরো প্রতিষ্ঠিত হয়-মুছাপুর নীড বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,মধ্য মুছাপুর নীড বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,নীড বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়(পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ড)।তিনি সন্দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠাগার-ক্লাবে তাঁর প্রকাশিত পত্রিকা,ম্যাগাজিন,সাময়িকী,পাক্ষিক নিয়মিত পাঠাতেন।লায়ন মুস্তাফিজুর রহমান সন্দ্বীপের অশিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত,শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের নিজ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিয়ে নতুন রেকর্ড স্হাপন করেছিলেন।১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সংঘটিত প্রলংকরী ঘুর্ণিঝড়ে সন্দ্বীপের মানুষ যখন দিশেহারা তখন তিনি উল্কার মত হাজির হয়েছিলেন ত্রানকর্তা হিসেবে।
তিনি সর্বাগ্রে ভালবাসতেন সন্দ্বীপ।যখনই সুযোগ পেয়েছেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়েছেন সন্দ্বীপ। ‘সন্দ্বীপ পরিবহন’,’ সন্দ্বীপ ভবন’, ‘সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ’ এ সব নামকরন থেকেই বুঝা যায় তিনি সন্দ্বীপকে কতটা ভালবেসেছিলেন।স্বমহিমায় উজ্বল মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে সন্দ্বীপ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।গণমানুষের আপনজন মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ,সফল ব্যাংকার,চৌকস বীমাবিদ,সম্পাদক,দক্ষ সংগঠক ও সরল সমাজসেবী এবং রাজনীতিবিদ।তাঁর তুলনা কেবলই তিনি।তাঁর কাজের স্বীকৃতি দেয়া প্রতিষ্ঠান সমুহ-মাওলানা আকরাম খাঁ স্মৃতি সংসদ,জাগৃতি চলচ্চিত্র পরিষদ,শাহরিয়ার হাফিজ যীশু স্মৃতি পুরুস্কার,জাচপ স্মারক,রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সম্মাননা পদক,গণমানস নিরীক্ষা কেন্দ্র,নাট্য সভা,পূরবী সাংস্কৃতিক চক্র প্রভৃতি,তিনি তিনবার পবিত্র হজ্ব ব্রত পালন করেন।
মুস্তাফিজুর রহমান ২০০১ সালের ২০ অক্টোবর সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন।তাঁর অকাল মৃত্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন ‘ সন্দ্বীপ হারিয়েছে একজন বলিষ্ঠ,যোগ্য ও সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা।মৃত্যুর পরেও তিনি বেচে আছেন এদ্বীপে,মুকুট বিহীন সম্রাট হয়ে।