পাবলিক বাসে মতিয়া চৌধুরী

0 ১০৮

এবারও পাবলিক বাসে চড়েই নিজ নির্বাচনী এলাকা শেরপুর থেকে ঢাকায় গেলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য,সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি।৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনার বাংলা সার্ভিসের একটি বাসযোগে নকলা শহরের জালালপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।এ সময় স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে বিদায় জানান।বিদায় জানানোর ছবিটি স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিলে সেটি ভাইরাল হয়।

জানা যায়,গত ৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা থেকে তার নির্বাচনী এলাকায় মেধাবী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য নকলায় পৌঁছান।এরপর গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার নকলা ও নালিতাবাড়ীতে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করেন।পরে ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবারের মতোই পাবলিক বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।তার পাবলিক বাসে বসে থাকার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।ছবিটি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। তাদের অনেকেই স্যালুট জানান মতিয়া চৌধুরীকে।

এমনই এক প্রতিক্রিয়ায় নিজের ফেসবুক ওয়ালে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শেরপুরের কৃতি সন্তান মনজুরুল আহসান বুলবুল লিখেছেন, ‘এজন্যই তিনি ব্যতিক্রম…।মতিয়া আপার বাসায় একবার আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল।তার রাজনৈতিক দর্শন বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা হতেই পারে।কিন্তু তার সততা সাদামাটা জীবন এগুলো নিয়ে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।এ সাধারণ জীবনযাপনই তাকে অসাধারণ করে তুলেছে।জানি বিলাসী জীবনযাপন করা রাজনীতিবিদরা তাদের কাছ থেকে কিছু শিখবে না।সৈয়দ আশরাফ,মতিয়া চৌধুরীদের জন্য তাই আজীবন ভালোবাসা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে,বাংলার অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরী রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক জাতীয় ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।ছিলেন ডাকসুর জিএস।শুরুতে দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।তিনি শেরপুরের আরেক কৃতি সন্তান, প্রথিতযশা সাংবাদিক বজলুর রহমানের সহধর্মিনী ছিলেন।মতিয়া চৌধুরী ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী)আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এরপর ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ঐক্যমতের সরকারের কৃষি,খাদ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

পরে ২০০১ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তাকে হারানো হলেও ২০০৮ সাল থেকে চলতি মেয়াদ পর্যন্ত টানা ৩ দফাসহ একই আসন থেকে মোট ৫ দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এর মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৪ মেয়াদের  সরকারেও সফলভাবে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন চতুর্থ দফার সরকারের কেবল চলতি মেয়াদেই মন্ত্রী পরিষদে নেই মতিয়া চৌধুরী।

নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক বলেন,তিনি মন্ত্রী হওয়ার সময়কালই হোক আর মন্ত্রী না থাকার সময়কালই হোক, সবসময়ই তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত।যে কারণে মন্ত্রীত্ব থাকার সময়ে নিয়ম রক্ষার খাতিরে সরকারি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতে হলেও মতিয়া চৌধুরী মন্ত্রী হওয়ার আগে এবং মন্ত্রী না থাকার সময়কালে স্বভাবসুলভ জীবনযাপনের ধারাবাহিকতায় পাবলিক বাসে চেপেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত করছেন।যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।

নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন,দলের প্রভাবশালী একজন নেতা হয়েও তার সাদাসিধে জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলাফেরাতেও তার একই ধরন। মন্ত্রী হওয়ার পর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করলেও তার আগে তিনি বাসেই ঢাকা-শেরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতেন,এখনও তাই করছেন।পাবলিক বাসে চেপে নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত-তার সাদামাটা জীবনযাপনেরই অংশ।আর তাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রশ্নে তিনিই আমাদের গর্ব।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!