বায়োফ্লকে তরুণ উদ্যোক্তা দিবাকর রোমির সাফল্য

0 ২৭৩

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ ঘরের ভিতর কিংবা আঙিনায় ছোট্ট পরিসরে পুকুর বা জলাশয়ের চেয়ে অধিক পরিমাণে মাছ চাষের এক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নাম বায়োফ্লক।বায়োফ্লকে বাংলাদেশের বহুসংখ্যক তরুণ যুবক এখন স্বপ্ন দেখছেন নিজেদের ভাগ্য বদলের ও মাছ চাষে বাংলাদেশকে নতুন বিপ্লবের দিকে এগিয়ে নেওয়ার।তাদেরই একজন শিক্ষিত যুবক দিবাকর রোমি।যিনি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে হয়ে ওঠেছেন বেকার যুবকদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।খুঁজে পেয়েছেন সাফল্যের দ্বার।

২ বছর আগে বাড়ির বারান্দায় ছোট পরিসরে ড্রামে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন তিনি।পরিক্ষামূলক এ চাষে সফলতাকে দেখতে পেয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বেশি আগ্রহের জন্ম হয় তার মনে।শুরু করেন বায়োফ্লক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা।বায়োফ্লক পদ্ধতির উদ্ভাবক বিজ্ঞানী ইয়ান এভনিমেলেচ এর বই পড়াসহ ভারত থেকে নিয়েছেন বেশ কিছু প্রশিক্ষণ।বায়োফ্লককে পূর্ণ রপ্ত করে হয়ে ওঠেছেন পুরোদস্তর বায়োফ্লকার।চট্টগ্রাম শহরের বুকে অবস্থিত উত্তর কাট্টলীতে নিজস্ব ৬ শতাংশ ভূমিতে ৪ টি ট্যাংকে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন বায়োফ্লক ফার্ম।যেখানে রয়েছে ১৪০০০ হাজার লিটার পানির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪ টি বায়োফ্লক ট্যাংক।আর এসব ট্যাংকের প্রতিটিতে তেলাপিয়া জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়েছে ২৫০০ টি।সার্বক্ষনিক ডিসি মোটর ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিবিড় পরিচর্যায় পরিচালিত হচ্ছে দিবাকর রোমির বায়োফ্লক কনসালটেন্সি বিডি ফার্ম।

তরুণ উদ্যোক্তা দিবাকর রোমি বলেন,বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ মাছ চাষ পদ্ধতি। বায়োফ্লক হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ এবং অনুজীব।যেমন, ডায়াটম,ব্যাকটেরিয়া,প্রোটোজোয়া, এলোজি,ফেকাল ফিলেট,জীবদেহের ধ্বংসাবশেষ এবং অন্যান্য অমেরুদন্ডী প্রাণী ইত্যাদির ম্যাক্রো এগ্রিভেট।এটি এমন একটি একোয়াকালচার যা কার্যকরভাবে পুষ্টি উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে খুব কম পানি পরিবর্তন বা একবারও পানি পরিবর্তন না করে।

এই প্রযুক্তি পানিতে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেন এর সাম্যাবস্থা নিশ্চিত করে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফলতার নাগাল পাওয়া এই যুবক নিজের বায়োফ্লকের গল্পে বলেন,আমি বিশ্বাস করি নিজে কিছু করার মাঝে আনন্দ আছে।চাকরীর বেড়াজালে সময়কে নষ্ট না করে উদ্যমি হয়ে উদ্যোক্তা হওয়াই ভালো।আমি শুরুতে বাসার বারান্দায় ছোট আকারে বায়োফ্লক শুরু করি।সেখান থেকেও আমি একটা ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি।পরে আরো প্রশিক্ষণ ও চিন্তা ভাবনার পর নিজেদের জায়গায় বড় পরিসরে বায়োফ্লক ফার্ম গড়ে তুলি।এখন আমি বায়োফ্লকে সাফল্যকে খু্ঁজে পাচ্ছি এবং তা আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।এসময় তিনি আরো বলেন, আবদ্ধ ট্যাংকের পানিতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে অনেকটা আইসিইউতে মাছ চাষ করার মতো।পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে এ কাজে হাত দেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।তাই যেকাউকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে আসার আগে অবশ্যই এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ঝুঁকি গ্রহণ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলে বায়োফ্লক হতে পারে ভাগ্য বদলের হাতিয়ার। দিবাকর রোমি আরো বলেন, আমার চলার পথ কখনোই মসৃণ ছিলোনা।১৬ টি সরকারি জব পরিক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়িনি।শক্ত মনোবল আর নিজের অটুট বিশ্বাস আমাকে উদ্যমী হতে শিখিয়েছে। তাই আমি বেকার যুবকদের বলবো বায়োফ্লক পদ্ধতিকে আয়ত্ত করে ছোট পরিসরে একটি ট্যাংকে মাছ চাষ শুরু করুন।পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস যার সাফল্য নিশ্চিত তারই।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন,বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ হচ্ছে মাছ চাষের নতুন সম্ভাবনা।এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে বেশি পরিমাণে মাছ চাষ করা যায় বলে এ পদ্ধতি লাভজনক।বর্তমানে সীতাকুণ্ড উপজেলায় যারা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী যুবকদের সেই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে।

উল্লেখ্য দিবাকর রোমি বায়োফ্লকের একজন বৃহৎ উদ্যোক্তা। বায়োফ্লকে ট্যাংকের পানির ধারণ ক্ষমতা ও আকারের উপর ব্যয় নির্ভরশীল।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!