বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ।

0 ৮৭৫,৪৬৭

বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার তৈরির নামে ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের মিটার বিদেশ থেকে আমদানি করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ হিসেবে সেগুলোর গায়ে চিহ্নিত করে দেশীয় পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে।এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে দ্বিগুণ দামেও এসব পণ্য বিক্রি করা হয়েছে।দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)ও সরকারের তদন্তে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড(বেসিকো),বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি(ওজোপাডিকো)এবং চীনের কোম্পানি হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড ও সেনজেন স্টার ইকুইপমেন্টের মধ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই লুটপাট ও পাচারে জড়িত ছিল।এর প্রধান ছিলেন বিদায়ী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু,তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবাসন ব্যবসায়ী আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল এবং নসরুল হামিদের স্ত্রীর ভাই মাহবুব রহমান তরুণ।

সরকার খরচ কমিয়ে দেশে বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিলেও,এর আড়ালে বিদেশ থেকে নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার নিয়ম লঙ্ঘন করে ‘ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড’(ডিপিএম)এর মাধ্যমে এসব মিটার কেনা হয়েছে।

জানা গেছে,বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং রুরাল পাওয়ার কোম্পানির যৌথ অংশীদারত্বে তৈরি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মাধ্যমে ২ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট মিটার কেনা হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে,বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে মিটারের বাজারদর দ্বিগুণ দেখানো হয়েছে।শুধু মিটারের কাঁচামালই নয়,বিক্রয়োত্তর সেবার নামে ভুয়া বিল তৈরি করে হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।এলসির মাধ্যমে চীনের কোম্পানি হেক্সিংকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে,যা অর্থ পাচারের শামিল।

বেসিকোর অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রিপেইড মিটারের নামে অতিরিক্ত বিল তৈরি করে অর্থ পাচার করা হয়েছে।এর মধ্যে প্রশিক্ষণ,সফটওয়্যার কেনার নামে ৩৬ কোটি টাকার এলসি খোলা হলেও, বাস্তবে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।উদাহরণস্বরূপ, চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ১.২০ কোটি টাকার মিটারের সফটওয়্যার কেনা হলেও,এর পরিবর্তে এলসির মাধ্যমে ১০.৩৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

বেসিকোর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিনের অবসরের পর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার দেবনাথ এই অর্থ পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছেন।তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত আরও প্রসারিত হয়েছে।

ওজোপাডিকোর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শামছুল আলম জানিয়েছেন,এসব ঘটনা তাঁর আমলে ঘটেনি,তবে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা করছে।তিনি চীনের হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ভবিষ্যতে সব টেন্ডারে বেসিকোকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গড়ে ওঠা শক্তিশালী চক্র এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন,এই ধরনের জালিয়াতি বন্ধ করতে যৌথ অংশীদারত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।এছাড়া উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে,যাতে দুর্নীতির সুযোগ কমে যায়।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!