মণিরামপুরে অসময়ের বৃষ্টিতে ভাসছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।

0 ১৭৯

মণিরামপুর(যশোর)প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপে দুইদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে যশোরের মণিরামপুরে। গতকার রবিবার ও আজ সোমবারের টানা বৃষ্টিতে পানি জমেছে মাঠ ঘাট ও বসত বাড়ির আনাছে কানাছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন এ উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ। জনশূণ্য হয়ে পড়েছে রাস্তা ঘাট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নস্তরের মানুষ। কাজের সন্ধানে বের হতে পারছেন না তারা।

দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে আমন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পানিতে ভাসছে হাজার হাজার বিঘা পাকা ধান। কারো ভাসছে কেটে রাখা ধান, কারো ডুবেছে আমন খেত। কপালে ভাজ পড়েছে সরিষা ও মসুর চাষিদের। তলিয়ে গেছে বোরোর আগাম বীজতলা। পানি জমেছে শীতকালীন সবজি জমিতে। ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন আলু ও পেয়াজ রসুন চাষিরা।

আজ সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার রঘুনাথপুর বিলে ২৫ কাঠা জমির কেটে রাখা ধান ভাসছে মাহমুদকাটি গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর মিস্ত্রির। হাঁটু পানিতে কাটা ধান ভাসছে একই বিলের চাষি জাকির হোসেন, মইনুদ্দিন হোসেন, আল-আমিন, ইউসুফ আলী ও শহিদুল ইসলামের।

টেংরামারী বিলের কৃষক আব্দুল ওয়াদুদের ১৫ কাঠা, আব্দুল আজিজের ১৫ কাঠা ও ইব্রাহীম হোসেনের ৫ কাঠা জমির কেটে রাখা আমন ধান পানিতে ভাসছে।

আমনের আড়াই বিঘা পাকা খেতে তলিয়ে গেছে রঘুনাথপুর গ্রামের চাষি জয়কৃষ্ণ মণ্ডলের, রোহিতা শেখপাড়া মাঠের চাষি নাজিম উদ্দিনের ২ বিঘা, রঘুনাথপুর মাঠের জামাল হোসেনের ২ বিঘা, নজরুল ইসলামের ২ বিঘা, মাহমুদকাটি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের দেড় বিঘা ও মেসকাত হোসেনের ১ বিঘা আমন খেত হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।

চাষি জামাল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষায় ২ বিঘা আমন তলিয়ে যায়। পানি টানার পরে ধান মোটামুটি ভাল হয়েছিলো। মাসখানেক আগের ঝড়োবৃষ্টিতে ধানগাছ শুয়ে যায়। খেতে পানি থাকায় ধান কাটতে পারিনি। এখনকার বর্ষায় খেতে হাঁটুপানি জমে ধান তলিয়ে গেছে।
রঘুনাথপুর বিলের অন্তত ১০০ বিঘা জমির ধান পানির নিচে রয়েছে, বলেন এ কৃষক।

আমন চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, খেতে আগের পানি ছিলো। ১৫ কাঠা জমির ধান কেটে ওপরে তুলতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন সেই ধান পানিতে ভাসছে। এ ধানের ভাত খাওয়া যাবে না। বিচালিও কোনো কাজে আসবে না।

মাহমুদকাটি গ্রামের দিনমজুর নূর আলম বলেন, মাঠে ধান তোলার কাজ। দুই দিনের বৃষ্টিতে কাজে যেতে পারছি না। অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
ভ্যানচালক আলম হোসেন বলেন, এ অবস্থায় কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। দুই দিন কোন ভাড়া নেই।
টেংরামারী বিলের সরিষা চাষি আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাড়ে তিন বিঘা সরিষার চাষ করেছি। সরিষায় ফুল ও ফল এসে গেছে। দেড় বিঘা ডুবে গেছে। বাড়ি দুই বিঘায় পানি জমেছে। বৃষ্টি থেমে পানি টান ধরলে সবগাছ মরে যাবে।

মাহমুদকাটি গ্রামের চাষি নূর ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে মসুর বুনেছি। দুই একটা গাছ উঠেছে। পানি জমে মসুর খেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানির নিচে আছে দুই বিঘা আমন ও দুই বিঘা সরিষা।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১ হাজার ৪০১ হেক্টর জমিতে সরিষা ও ৮৭৫ হেক্টর জমিতে মসুর চাষ হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, আমন ধানের ৯৫ শতাংশ ইতোমধ্যে কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছেন। বৃষ্টিতে বাকি ৫ শতাংশ ধানের ক্ষতি হবে।তিনি বলেন, যাদের সরিষায় ফুল এসেছে বৃষ্টিতে তাদের ক্ষতি কম হবে। তবে তলিয়ে যাওয়া মসুর খেতের ক্ষতি হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!