আব্দুল করিমঃ যে মাঠে এক সময় কয়েকটি ক্লাব ও একাডেমি ফুটবল আর ক্রিকেট একসাথেই খেলতো, অনুশীলন করতো, সেই আউটার স্টেডিয়ামটি এখন মুমূর্ষু। নগরায়নের এই সময়ে খোলা জায়গার পরিমাণ দিনদিনই কমছে, শিশু-কিশোরদের বিচরণের জায়গা সেই খেলার মাঠের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। এরমধ্যে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হারিয়ে যেতে বসেছে নগরীর খ্যাতনামা মাঠগুলো। সেগুলির অন্যতম কাজীর দেউড়িস্থ আউটার স্টেডিয়াম। আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, তামিম ইকবাল, আশীষ ভদ্রদের মতো খ্যাতনামা তারকাদের জন্ম যে মাঠে সেই আউটার স্টেডিয়ামের রুগ্নদশায় হতাশ ক্রীড়ামোদিরা। মাঠটিকে ঘিরে আলো ঝলমলে ব্যানারে বাণিজ্য মেলা থেকে শুরু করে সবকিছু হলেও, এদিক সেদিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও, মাঠের অবস্থা যাচ্ছেতাই। ভবঘুরে থেকে শুরু করে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের দোকানের বর্জ্য, সুয়ারেজ লাইনের বর্জ্যেরও শেষ ঠিকানা এই আউটার স্টেডিয়াম। মাঠের এখানে-ওখানে বিক্ষিপ্ত আবর্জনা, মাঝে জলাশয় আকৃতিতে জমে থাকা পানি, ভ্যানের স্টেশন আর ভবঘুরেদের আড্ডার ফাঁক-ফোকরে শিশুকিশোররা এখনও এখানে দাঁপিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করে। এমন যে পরিবেশ, তাতে তাদের রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার আশংকাও প্রবল। এই মাঠে আর যাই থাক, খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। মাঠের আশপাশ জুড়ে পরিকল্পনার নামের অনেক কিছু হলেও যে মাঠকে ঘিরে এত আয়োজন সেই মাঠে প্রশাসনের কার্যত কোনো সুদৃষ্টি লক্ষণীয় নয়। অনেকেই বলছেন, কর্তৃপক্ষের গাফেলতি অবশ্যই ছিল। আবার এও সত্য মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন আ জ ম নাছির উদ্দিন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আউটার স্টেডিয়ামের বর্তমানের রুগ্নদশা দেখতে হতো না। মাঠটির মুমূর্ষাবস্থা সম্পর্কে সিজেকেএস সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা সবাই চাই, মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী থাকুক। যে-ই দায়িত্ব নিক না কেন, শিশু-কিশোরদের জন্য মাঠটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রবীন কাউন্সিলর মকছুদুর রহমান বুলবুল মনে করেন কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে মাঠের আধুনিকায়ন অসম্ভব নয়। পুরো নগরীতে খেলার মাঠের সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। ফলে অনেক ক্লাব/একাডেমি তাদের ইভেন্টগুলোতে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছে না। অন্য কোনো চাওয়া নয়, কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া আউটার স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করে তোলা হোক।একই লক্ষ্য জেলা ক্রীড়া সংস্থারও। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন চান যেকোনো মূল্যে আউটার স্টেডিয়ামকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। টেন্ডারও আহ্বান করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সেটি আলোর মুখ দেখলে আউটার স্টেডিয়াম ফিরে পাবে আগের রূপ। এ প্রসঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম বলেন, সিজেকেএস সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি আন্তরিকভাবেই চান আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার। তবে সংস্কার কাজটি কে করবে, সিটি কর্পোরেশন নাকি সিজেকেএস’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়- সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যেই করুক না কেন, ক্রীড়ামোদি মহল চায় আগের রূপ ফিরে পাক আউটার স্টেডিয়াম। শোনা যাচ্ছে কোনো সংস্থা এগিয়ে না এলে সিজেকেএস নিজেই এই শীতের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে মাঠটি খেলার উপযোগী করার ব্যবস্থা নেবে।শুরুতে প্রায় ৬.২ একর জায়গা নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম থাকলেও, শপিং কমপ্লেক্স ও সুইমিংপুল গড়ে উঠার পর আকারে আয়তনে অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে মাঠটি। তবে যেটুকু আছে তা-ই যদি পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার করা যায় তাহলে শিশু-কিশোররা উপকৃত হতো।