আজমল হক হেলালঃ জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতিতে আসছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। এতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার মৌন সম্মতি রয়েছে। বিদিশার রাজনীতিতে আসার বিষয়টিও ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত রংপুরের তৃণমূলের নেতারাও। ফলে সময়-সুযোগ বুঝে যে কোনো সময় রাজনীতিতে অভিষেক ঘটতে পারে বিদিশার। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে এমনটি জানা যাচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে বিদিশার সম্পর্ক এখন গভীর। তিনিও চাইছেন জাতীয় পার্টির ছায়াতলে আসুক বিদিশা। বিভিন্ন বিষয়ে রওশন এরশাদ বিদিশার সঙ্গে নিয়মিত আলাপচারিতাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ফোন করে দুজন দুজনার খোঁজ-খবরও রাখছেন।
বিদিশার রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনার বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘বিদিশাকে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাপা থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। সেই থেকে বিদিশা জাতীয় পার্টির সঙ্গে নেই। এরপরও যদি তিনি নিয়ম-কানুন মেনে আসতে চান তাহলে তাকে স্বাগত জানানো হবে। আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় পার্টি সবার দল, সব মানুষের দল। যে কেউ যে কোনো সময় জাতীয় পার্টিতে আসতে পারেন।’
এদিকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত রংপুরের নেতাকর্মীরাও চাইছেন বিদিশা রাজনীতিতে আসুক। রংপুরের মেয়র ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদিশা যদি রাজনীতিতে আসেন তাহলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। তার জন্য আমাদের গ্রিন সিগন্যাল আছে।’
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজনীতি কখন কে আসবে-যাবে তা বলা মুশকিল। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা যদি রাজনীতিতে আসতে চান তাহলে তাকে স্বাগত জানাব। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাইছেন তিনি রাজনীতিতে আসুক।’
তবে বিদিশার রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে তার আসার কোনো সম্ভাবনা এখনও নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে তার কোনো প্রয়োজনও দেখছি না।’
তবে বিদিশা বলেন, ‘কে রাজনীতিতে আসবে আর কে আসবে না এ বিষয়ে জি এম কাদের একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন। জনগণ যদি আমাকে চান আর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি আমাকে চান তাহলে অবশ্যই রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে পারি।’
বিদিশা আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কারও একার সম্পত্তি নয়। এখানে জি এম কাদেরের একক আধিপত্য নিশ্চয় চলবে না। জি এম কাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন। আজকে জাতীয় পার্টির যে অবস্থা তার জন্য তিনি দায়ী। পার্টিতে ন্যূনতম গণতন্ত্র নেই।আমরা চাই জাতীয় পার্টিতে তারুণ্য নির্ভর রাজনীতি আসুক, গণতন্ত্রের ধারার রাজনীতি আসুক। তৃণমূল যদি আমাকে চায় তাহলে আমি এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে রাজি আছি’ বলেন বিদিশা সিদ্দিক।উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশাকে তালাক দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই সময় জাতীয় পার্টির সদস্যপদ থেকে বিদিশাকে বাদ দেওয়া হয়। তালাক হওয়ার পর ছেলে এরিখ এরশাদকে নিয়ে ছিলেন বিদিশা।
গতবছর এরশাদের মৃত্যু হওয়ার কিছুদিন পর ছেলে এরিখকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে বসবাস শুরু করছেন বিদিশা। এরশাদ ট্রাস্ট থেকে অর্জিত আয়ে এরিখের খরচ নির্বাহ করা হয়।২০১৯ সালে এরশাদ নিজের নামে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুও আগে তার সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে উইল করে যান।
সূত্রঃসারাবাংলা।