
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে শিপন হত্যার ১২ ঘন্টা না পেরোতেই আবারও সন্দ্বীপে শিউলী আকতার(৪৫)নামের এক গৃহবধূকে গলা কেটে আহত অবস্থায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে বুধবার ভোরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
আহত শিউলী আকতার উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।তাঁর স্বামীর নাম মশিউর রহমান।তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।মশিউর রহমানের অভিযোগ,রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাঁর স্ত্রীকে গলা কেটে আহত করা হয়েছে।
আহত নারীর স্বামী মশিউর রহমান বলেন,তিনি কিছুদিন ধরে এলাকায় থাকেন না।তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়িতে থাকে।খবর নিয়ে জেনেছেন,ফজরের নামাজ পড়ার জন্য অজু করতে ঘরের বাইরে থাকা পানির কলের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী।এ সময় চার থেকে পাঁচ ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর স্ত্রীর গলা কেটে পালিয়ে গেছে।চিৎকার শুনে তাঁর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে বাইরে এসে আর্তনাদ করতে থাকে।এরপর প্রতিবেশীরা এসে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
সন্দ্বীপ থানার উপপরিদর্শক চয়ন দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন,সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে,তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
আহত অবস্থায় শিউলী আকতারকে প্রথমে নেওয়া হয় সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে।সেখানকার আবাসিক চিকিৎসক রায়হান জামিল বলেন,ভোর সাড়ে ৫টায় ওই নারীকে হাসপাতালে আনা হয়।তাঁর গলায় তোয়ালে জড়ানো ছিল।তোয়ালে সরিয়ে দেখা গেছে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে(৩জুন)সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের নোয়াহাট এলাকায় শিপন(৩৫)নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে মঙ্গলবার(৩ জুন)বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।নিহত শিপন নোয়াহাট এলাকার তহসিলদার বাড়ির বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,শিপন বিকেলে স্থানীয় বাজারের পাশে বসে ছিলেন।এ সময় হঠাৎ করে কয়েকজন অস্ত্রধারী যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়।এরপর প্রকাশ্য রাস্তায় ছুরি দিয়ে কনুই থেকে তার দু’হাত বিচ্ছিন্ন করে এবং ঘাড়ে এলোপাতাড়ি ছুরি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
এদিকে ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পুরো নোয়াহাট এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত শিপনের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তবে এলাকাবাসীর ধারণা,পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)এ কে এম শফিকুল আলম চৌধুরী জানান,ঘটনার পেছনে কী কারণ রয়েছে,তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে দুটি ঘটনার এখনো কোন অভিযোগ থানায় আসেনি বলেও জানান তিনি।
এছাড়া আইন শৃঙ্খলার অবনতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।১৫দিনে ২টি হত্যাকান্ড ও ১টি হত্যাচেষ্টার পরেও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে স্বাভাবিক থাকেব এবিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি নিয়ে বিভিন্ন পোস্টের জবাবে তিনি বলেন মানুষতো কত কিছু লিখে এখানে আমার কি বলার আছে।
সন্দ্বীপের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এডিশনাল এসপি(মিডিয়া)আসাদুজ্জামান রাসেল বলেন,একটি হত্যার পর আরেকটি হত্যাচেষ্টা বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।দুটি ঘটনারই এখনো কেউ থানায় অভিযোগ দিতে আসেনি।অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম(ফেসবুক)কে পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।সন্দ্বীপ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে।এক কথায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন বলে সরাসরি পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন।তিনি বলেন,পুলিশ কন্ট্রোল করতে পারছেন সন্দ্বীপের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন।পুলিশ প্রশাসনের উচিত এইসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া।আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,যারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
উল্লেখ্যে যে,সরকার পতনের পরও প্রথম ২-৩ মাস তেমন কোন ঘটনা না ঘটলেও বিগত ৩-৪মাস ধরে শান্তিপ্রিয় সন্দ্বীপে অশান্তি বিরাজ করছে।৫ আগষ্টের পর যেভাবে সন্দ্বীপ থানার সাবেক ওসি কবির হোসেন জনগণকে সাথে নিয়ে সন্দ্বীপের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রেখেছিলেন এখন কিন্তু পারছেন বর্তমান ওসি এমনটাই দাবি করছেন অনেকেই।