সন্দ্বীপে ৬৫ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার পরও খসকি জালের প্রতিবন্ধকতায় জেলেদের উপার্জন অনিশ্চিত।সেগুলো কেটে ফেলা শুরু করেছেন বলে ঘোষনা দিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা
বাদল রায় স্বাধীনঃ সরকারের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরা বিরত থাকার পর সাগর উন্মুক্ত করা হচ্ছে আজ।আর এখন শুরু হয়েছে ইলিশ ধরার মৌসুম তাই এ নিয়ে জেলে পল্লীতে উৎসব উৎসব আমেজ থাকলেও শান্তি নেই তাদের মনে।দৃশ্যমান আশংকা ভর করছে তাদের মাঝে। আর সে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে খসকি নামে একটি বিশেষ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ।সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেদের জন্য ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ খসকি জাল ব্যবহার করে নোয়াখালীর প্রভাবশালী মহলের ভাড়াটে লোক দ্বারা নিয়মিত ইলিশ মাছ শিকার এর জন্য মেঘনার মোহনায় পুরো নদী জুড়ে বসানো হয়েছে এই বিশেষ ধরনের জাল।এই মাছ ধরায় জড়িত লোক গুলো বেশীর ভাগই রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী লোকজন এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।
উপজেলার সারিকাইত,আজিমপুর ও রহমতপুর ইউনিয়নের মাছ ঘাটে কর্মরত স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায় সন্দ্বীপের পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার দূরে ভাষাণচরের কূল জুড়ে পাতা হয়েছে বেশ কয়েকটি খসকি জাল। প্রতিটি জালের আয়তন ৪ থেকে ৭ কিলোমিটার লম্বা। ভাষাণচরের উত্তরে শেষ সীমানা থেকে আরো ৪-৬ কিলোমিটার উত্তরের ডুবোচর থেকে শুরু করে দক্ষিণের শেষ সীমানার পরেও প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দক্ষিণ সীমানার ডুবোচর পর্যন্ত এসব জাল পাতা রয়েছে। চরের নরম মাটিতে ৮-১০ হাত দূরত্বে প্রতিটি ৬-৮ হাত লম্বা খুঁটি পুঁতে জাল বেধে খসকি জাল বসানো হয়। নদীর কূল থেকে শুরু করে ভাটায় যেখান পর্যন্ত পানি শুকিয়ে যায় সে পর্যন্ত এসব জাল পাতা হয়। ভাষাণচরে বন বিভাগের লাগানো কেওড়া গাছ ঘুষের বিনিময়ে কেটে এসব জালের খুঁটি বানানো হয়। বেশীরভাগ সময় খসকি জালের খুঁটির সাথে জেলেদের ইলিশের জাল পেঁচিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে জেলে নৌকা ফুটো হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা।
আর তাতে রোজগার হারাচ্ছেন এবং ছোট ছোট জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরার জায়গাও পাচ্ছেনা প্রায় দুই হাজার জেলে। যেখানে যাচ্ছে সেখানে দেখছে সব খসকি জালের দখলে। ফলে প্রকৃত জেলেরা মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা এখন জেলের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। ফলে প্রকৃত জেলেরা মৌসুম ভিত্তিক উপার্জন হারিয়ে সে সব খসকি জালে লেবার হিসেবে ভাড়ায় কাজ করছে। আর সে স্বল্প উপার্জনে তাদের পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে তারা অনেকে পেশা পরিবর্তন করে, সেলুন,লন্ড্রি,রাজমিস্ত্রী এদের সাথে কাজ করছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন মৎস্য সংরক্ষন আইন ১৯৫০ সাল এর ৩ ধারা মোতাবেক খসকি জাল কারেন্ট জালের মতোই অবৈধ। কারন নদীতে এ সমস্ত হাজার হাজার খুটির ব্যবহারের কোন বৈধতা নেই তাই এটি নিঃন্দেহে অবৈধ। আর নদীতে এই অবৈধ খসকি জাল পাতার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। কয়েকদিন আগে জাল কাটতে আমি বাংলাবাজার ঘাট গিয়েছিলাম। জাল কাটার জন্য প্রচুর লেবার দরকার তাই ইজারাদারের সাথে কথা বলেছি। একদিন তিনি (ইজারাদার) আসেননি। তাছাড়া নদীতে জোয়ার থাকায় আমি ফিরে এসেছি।এরপর কোস্টগার্ড আরেকদিন গিয়ে একটি বিশাল আকৃতির খসকি জাল কেটে ফেলেছে। পর্যাক্রমে সব গুলো খসকি জাল কেটে ফেলবো।তার জন্য একটু ভালো আবহাওয়াও প্রয়োজন।
জেলেদের দেওয়া তথ্য মতে নোয়াখালীর রহমান মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝিসহ সন্দ্বীপের কয়েকজন প্রভাবশালীরা ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে এসব খসকি জাল বসিয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা অবৈধ এ জাল দিয়ে ইলিশ মাছ ধরছে । প্রতিটি খসকি জালে ৫০-৭০ জনের দল জাল পাহারায় থাকে। কখনো আবার স্থানীয় জেলেদের উপর হামলা করে তারা। সন্দ্বীপের চারপাশেও এসব খসকি জাল দিয়ে প্রতিবছর মাছ ধরা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোস্টগার্ড ভাষাণচরের আশপাশ থেকে নিষিদ্ধ সময়ে প্রতিদিন ইলিশ জাল ও মাছ উদ্ধার করলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানে যাওয়ার পথে সামনে থাকা এসব খসকি জালের বিষয়ে তারা নিশ্চুপ ছিলেন। এখন মাছ ধরার পুরো মৌসুম তাই এ জাল গুলো দ্রুত অপসারন জরুরি। নয়তো দুই হাজার জেলে পরিবার না খেয়ে মরতে হবে।