আবুল কাশেম চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের(সিএমপি)সবচেয়ে আলোচিত ওসি ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীনকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
বুধবার(১৮ আগস্ট)পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক(এআইজি)(পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২)লশাহজাদা মো.আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশে এ বদলি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে,পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসীনকে খুলনা রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য ছাড়পত্র গ্রহণ করবেন।
অন্যথায় আগামী ২৬ আগস্ট থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত বা স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
২০০৫ সালে এসআই হিসেবে যোগ দেন সিএমপির খুলশী থানায়।গত ১৬ বছর ধরে তিনি চট্টগ্রামেই কর্মরত ছিলেন।
প্রথাগত পুলিশিংয়ের ধারণা বদলে দিয়ে মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশিংয়ের নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করা ওসি মহসীন বিভিন্ন সময়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন চট্টগ্রামেই শুধু নন,সারা দেশেই।
তিনি সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।এর আগে বেশ অনেকটা সময় ধরে ছিলেন কোতোয়ালী থানা, বাকলিয়া থানাসহ আরও বিভিন্ন থানায়।
ওসি মহসীন প্রচলিত পুলিশিং কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ,মাদক ও ইভটিজিংবিরোধী জনসম্পৃক্ততামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সিএমপিসহ দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন।বিশেষ করে দেশে প্রথমবারের মত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে পুলিশিং কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিতে থানায় জনগণ নয়,ওসিই যাচ্ছেন জনগণের দ্বারে দ্বারে।তার শুরু করা ‘হ্যালো ওসি’ কনসেপ্টটি দাপ্তরিকভাবেই সিএমপির ১৬ থানাতেই চালু হয়।
২০১৩ সালে মোহাম্মদ মহসীন যখন বাকলিয়া থানার ওসি পদে দায়িত্বরত ছিলেন তখন তিনি নিজ উদ্যোগেই মসজিদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে গিয়ে সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ,মাদক ও ইভটিজিংবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন।যেটি ওই সময়ে নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসিত হয়।পরবর্তীতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর ধারণাটিও সিএমপির সব থানায় অফিসিয়ালি চালু করা হয়।এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোহাম্মদ মহসীন জনপ্রিয় একজন অফিসার হিসেবে পরিচিতি পান।
জনবান্ধব বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিয়ে পুলিশিং করায় ২০১৯ সালের জুন মাসে ‘প্রমোশন অফ জেন্ডার সেনসিটিভিটি’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড পদকে ভূষিত হন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সেবারই একজন পুরুষ কর্মকর্তা এ পদকে ভূষিত হন।
পুলিশ বিভাগে সাহসী অফিসার হিসেবে পরিচিত পিপিএম পুরস্কারপ্রাপ্ত ওসি মোহাম্মদ মহসিনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।২০০১ সালে শিক্ষানবিশ এসআই হিসেবে সারদায় যোগ দেন মহসিন।এরপর ২০০২ সালে যোগ দেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে।২০০৩ সালে একই পদে যোগ দেন নড়াইল সদর থানায়।
২০০৫ সালে এসআই হিসেবে যোগ দেন সিএমপির খুলশী থানায়।এরপর গোয়েন্দা বিভাগ ঘুরে সেখান থেকে কোতোয়ালী থানায় কিছুদিন কাজ করার পর যোগ দেন ফের গোয়েন্দা বিভাগে।সেখান থেকে বোমা নিস্ক্রিয়করণ প্রশিক্ষণ নিতে সিএমপির পক্ষ থেকে তাকে পাঠানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।দেড় বছর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরে তিনি সাব-ইন্সপেক্টর থেকে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান ২০১৩ সালে।
ওই বছর ৫ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) হিসেবে যোগ দেন সিএমপির বাকলিয়া থানায়।পরে বায়েজিদ ও গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব পালন শেষে বাকলিয়া ও কোতোয়ালী থানায় ওসি হিসেবে কাজ করার তার সবশেষ কর্মস্থল ছিল ডবলমুরিং।