গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে জিনের বাদশা পরিচয়ে চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করলো পিবিআই যশোর।

0 ৭০

স্টাফ রিপোর্টার: যশোর কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৭২, তারিখ-২৬/১১/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৪০৬/৪২০/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭ পেনাল কোড এর বাদী এ.এস.এম সোহরাব হোসেন (৫৬), পিং-মৃত মতিয়ার রহমান, সাং-পাগলাদহ, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর এর কন্যা মোসাঃ সাজনিন খাতুন ধৃত অভিযুক্তদের কর্তৃক প্রতারিত হলে পুলিশ সুপার, পিবিআই, যশোর বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানকালে বাদীর আনিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তৎপ্রেক্ষিতে উক্ত মামলাটি রুজু হয় এবং পিবিআই, যশোর স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এসআই (নিঃ)/ মোঃ মিজানুর রহমান এর উপর অর্পণ করা হয়। মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/ মিজানুর রহমান সঙ্গীয় এসআই (নিঃ)/স্নেহাশিস দাশ, এসআই (নিঃ)/ ডি এম নুর জামাল ও ফোর্স সহ গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ইং ২৬/১১/২০২১ তারিখ বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ১। মোঃ সেলিম সরকার(৩২), ২। দুদু মিয়া(৫৫) ও ৩। তাপস মহন্ত(৩৮) দেরকে বিভিন্ন স্থান হতে গ্রেফতার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের সাথে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নিজেদেরকে কখনও ফেরেশতা, কখনও জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে মানুষের সরলতার সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে নগদ অর্থসহ ¯^র্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। অভিযুক্ত মোঃ সেলিম সরকার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৮৬০০৮১৯২৯ থেকে ইং ০৪/১১/২০২১ তারিখ গভীর রাতে অত্র মামলার বাদীর মেয়ে সাজনিন খাতুন এর ব্যবহৃত মোবাইল নং ০১৭৭০৪০৪৭৭০ এ ফোন দিয়ে নিজেকে ফেরেশতা পরিচয়ে সে আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে বলে জানায়। তারপর সাজনিন খাতুনকে জায়নামাজ ও কোরআন শরীফ নিয়ে বসতে বলে এবং সাজনিনের মায়ের অসুস্থতা ও পরিবারের অনেক সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে তার মনকে দুর্বল করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় এবং বলে এই বিষয়ে যেন সে কাউকে কিছু না জানায়, যদি কেউ জানে তাহলে বাদীর মেয়েসহ পরিবারের সকলের ক্ষতি করার ভয় দেখায়। অতঃপর সাজনিন খাতুন এর নিকট অভিযুক্ত সেলিম সরকার জায়নামাজ ও উট কেনার কথা বলে বিকাশ নং ০১৮৩২৫৮২৭০২, ০১৮৮৪৫২৮৮৭০ এর মাধ্যমে টাকা চায়। সাজনিন খাতুন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার জন্য ঘরে থাকা তার পিতার বেতন ও জিপিএফ এর উত্তোলনকৃত টাকা হতে অভিযুক্তদের দেওয়া মোবাইল নং ০১৮৩২৫৮২৭০২, ০১৮৮৪৫২৮৮৭০ এ বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৯২,৫০০/-(বেরানব্বই হাজার পাঁচশত) টাকা এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ইং ০৬/১০/২১ তারিখ অভিযুক্তরা সাজনিন খাতুনকে কোতয়ালী থানাধীন পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানীর শো-রুমের সম্মুখে আমগাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতরে একটি স্বর্ণের মুর্তি আছে বলে জানিয়ে মুর্তিটি সাজনিন খাতুনকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে এবং নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত স্বর্ণের গহনা রেখে আসতে বলে। উক্ত গহনা রেখে আসার সময় সাজনিন যেন পেছন ফিরে না তাকায় এই জন্য সতর্ক করে, যদি তাকায় তাহলে আগুনের ঝলক পড়ে পুরো শরীর ঝলসে যাবে বলে ভয় দেখায়। অভিযুক্ত সেলিম সরকার এর কথায় ভয়ে ভীত হয়ে বাদীর মেয়ে সাজনিন খাতুন কোতয়ালী থানাধীন পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানীর শো-রুমের সম্মুখে আম গাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়া থেকে পটেটো চিপসের প্যাকেটে থাকা কথিত স্বর্ণের মুর্তি বাসায় নিয়ে আসে এবং সরল বিশ^াসে পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণের ৪টি কানের দুল ওজন ২ ভরি ২ আনা, স্বর্ণের গলার চিক ২টি ওজন ১ ভরি ১২ আনা, ০১টি স্বর্ণের আংটি ওজন ৮ আনা সর্বমোট ওজন অনুমান ৪ ভরি স্বর্ণ নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের কাগজে মুড়ে রেখে আসে। পরবর্তীতে সাজনিন খাতুন আসামীদের মোবাইলে ফোন করলে অভিযুক্তদের দেয়া সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পায়। ঘটনার বিষয়ে সাজনিন খাতুন তার পিতাকে জানালে সে কথিত স্বর্ণের মুর্তিটি দেখে বুঝতে পারে স্বর্ণের রঙের মুর্তিটি আসলে পিতলের তৈরী। অভিযুক্তরা আরো জানায়, সেলিম সরকার বাদীর মেয়ে সাজনিন খাতুন এর সাথে কথা বলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোনে টাকা আদায় করে। ইং ০৬/১১/২০২১ তারিখ অভিযুক্ত দুদু মিয়া আসামী সেলিম সরকার এর কথামত যশোর পালবাড়ী মুর্তির মোড়ে সিঙ্গার কোম্পানীর শো-রুমের সম্মুখে আমগাছের পাশে বিদ্যুতের খাম্বার গোড়ায় পটেটো চিপসের প্যাকেটের ভেতরে একটি স্বর্ণের মুর্তি রেখে আসে এবং নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক স্কুলের গেটের ভেতরে পূর্ব পাশের মেহগনি গাছের গোড়ায় প্রাচীরের পাশের্^ থেকে সাজনিন খাতুন এর রেখে যাওয়া সোনার গহনা নিয়ে যায়। অভিযুক্ত সেলিম সরকার এবং দুদু মিয়া উক্ত স্বর্ণ ও টাকা পয়সা ভাগ করে নেয় এবং প্রতারণা পূর্বক আদায়কৃত স্বর্ণ অভিযুক্ত তাপস মহন্তর নিকট বিক্রয় করে মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। অভিযুক্ত ১। মোঃ সেলিম সরকার(৩২), ২। দুদু মিয়া(৫৫) ও ৩। তাপস মহন্ত(৩৮) দেরকে অদ্য ২৭-১১-২০২১ খ্রিঃ জনাব মোঃ সাইফুদ্দীন হোসাইন, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রে ২য় আমলী আদালত, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!