গ্যাসের অভাবে চলছে না চুলা,চলছে না গাড়িও,বেড়েছে লোডশেডিং।

0 ৭৯৭,৫৮৬

চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।এর ফলে চট্টগ্রামে গতকাল শনিবার থেকে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।নগরীর অধিকাংশ বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টে চুলা জ্বলেনি।

গতকাল শনিবার থেকে ফিলিং স্টেশনগুলোতেও বন্ধ হয়ে যায় গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ।ফলে শনিবার বিকেল থেকে রাস্তায় সিএনজিচালিত যানবাহনও কম।ফলে রিকশায় এখন চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গী।

এদিকে চালকরা জানান,এটা আমাদের আগে জানানো দরকার ছিল।রাতে জানালে আমরা গ্যাস নেব কিভাবে?এখন গাড়ি বের করেছি,মালিককে তো ঠিকই টাকা দিতে হবে।কিন্তু গাড়ি চালাতে না পারলে টাকা কোথা থেকে দেব?আমাদের তো এখন নানা সমস্যায় পড়তে হবে।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শঙ্কার কথাও জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।যদিও বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট,হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ও আংশিক চালু থাকতে পারে।চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে নগরীসহ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের(কেজিডিসিএল)আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।সকাল ৮টার দিকে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

কেজিডিসিএল’র উপ মহাব্যবস্থাপক(জনসংযোগ ও সমন্বয়)মীর মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান,এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় পাইপলাইনে গ্যাস সঞ্চালন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।এ জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

কেজিডিসিএল’র বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক(উত্তর)প্রকৌশলী শফিউল আজম খান জানান,গ্যাস সরবরাহে সংকট কখন কমবে সেটা এই সঠিকভাবে বলতে পারছি না।এক সপ্তাহ লাগতে পারে,এর বেশিও লাগতে পারে।তবে কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে,সেটা মন্ত্রণালয়ে উর্ধ্বতনরা চিন্তাভাবনা করছেন।শিগগরিই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(বিপিডিবি)সূত্রে জানা গেছে,গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০ মেগাওয়াট,উৎপাদন হয় ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট।এ সময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল এক হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ সূত্র বলেছে,এলএনজি সরবরাহ বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।এটি আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।তাই সব বিতরণ সংস্থাকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাচ সেন্টারের(এনএলডিসি)নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে তারা।বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করে এনএলডিসি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।প্রতিষ্ঠানটি জানায়,বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সব গ্রাহকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে রবিবার(আজ)কক্সবাজার ও অন্যান্য স্থানে আঘাত হানতে পারে।এ সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়,স্পষ্টতই দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন,বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা নানাভাবে ব্যাহত হয় ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।ফলে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে শনিবার গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।এ সময় চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট,হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকবে।তবে পরবর্তীতে ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।

এ ছাড়া বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার দরুণও প্রায়ই বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে।বৈদ্যুতিক লাইনে ডালপালাসহ গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে।এতে বৈদ্যুতিক লাইন ও পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটি।সুতরাং এরূপ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে গাছ সরানোসহ যান্ত্রিক ক্রটি সারাতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়এমতাবস্থায়ও বিদ্যুত সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সব কারিগরি কর্মীরা সদা তৎপর আছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!