দুদকের ঘরেই দুর্নীতির হানা

0 ৯০০,০০৫

আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস।অথচ খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক)ভেতরেই এখন দুর্নীতির দীর্ঘ ছায়া। যাদের কাজ দুর্নীতিবাজদের ধরা,তাদের বিরুদ্ধেই উঠছে ঘুষ গ্রহণ ও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ।২০২৫ সালেই সংস্থাটির পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে,গত ১৭ বছরে ঘুষ, অনৈতিক সুবিধা ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের ২৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ৩৪ জন।এছাড়া বাধ্যতামূলক অবসর,পদাবনতি ও বেতন কর্তনের মতো শাস্তিও পেয়েছেন অনেকে।বর্তমানে ১০ জনেরও বেশি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই পরিচালক খন্দকার মিজানুল ইসলামসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়। মিজানুলের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তাধীন এক বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের কাছ থেকে চিকিৎসা খরচ নেওয়ার অভিযোগ ছিল।এছাড়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা দাবির অভিযোগে উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম এবং মামলার সুরাহার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জুলিফিকারকে অপসারণ করা হয়। জুলিফিকার ও তার পরিবার বিনা ভাড়ায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে গত আগস্টে উপ-পরিচালক আহসানুল কবির পলাশ এবং জুলাইয়ে উপ-পরিচালক কমলেশ মন্ডলকে তদন্তে অবহেলার দায়ে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া ভুয়া নথিপত্র তৈরি ও সিন্ডিকেট করার অভিযোগে গত ৫ অক্টোবর সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

শুধু বর্তমান কর্মকর্তা নয়,দুদকের সাবেক শীর্ষ কর্তারাও এখন তদন্তের আওতায়।সংস্থার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এছাড়া বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান ও দুদকের সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধেও মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বহাল রেখে কমিশন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা বা বরখাস্ত করাই যথেষ্ট নয়; তাদের প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মঈন বলেন, আমার কমিশন যদি দুর্নীতিমুক্ত না হয়, তবে অন্যের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকার আমি হারাব। যখনই প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে দুদক সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দুদকের নিজস্ব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!