নরসিংদীতে বেলাবতে পড়ালেখার ফাঁকে সবজি চাষে সাফল্য আরমানের।

0 ১৩৮

নরসিংদী জেলা বেলাব উপজেলা বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন চর কাশিম নগর গ্রামের মোঃ মোতাহার হোসেন (মুক্তার) মিয়ার ৬ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে সংসার। বড় ছেলে মালোশিয়া প্রবাসী আর বাকী ৫ ছেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। সংসার বড় হওয়ার পিতার পক্ষে সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়ে পরেছে।করোনার কারণে বড় ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পয়সা পাঠাতে পারে না। সে সময়ে বাবার সাথে পরিবারের হাল ধরেন অনার্স ৩য় বর্ষ পড়ুয়া ছেলে মুহাম্মদ আরমান। বাবার পাশাপাশি জমিতে গিয়ে চাষাবাদ করে আরমান। বেকার না থেকে ভোর থেকে ১১টা পর্যন্ত আর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্থ থাকে। বাবাকে তার কাজে সহয়তা করেন ছেলে আরমান।

সোমবার (১৭ জানুয়ারী) সবজী চাষ নিয়ে কথা বলেন মুহাম্মদ আরমান। তিনি মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়। আরমান জমি থেকে এ বছর প্রথমে ফুলকপি ৮০ শতাংশ, লাউ ৫০ শতাংশ, মিষ্টি কুমড়া ৪০ শতাংশ, বেগুন ৯০ শতাংশ, টমেটো ২০ শতাংশ, ঢেড়শ ৩০ শতাংশ, পুইশাক ৩০ শতাংশ, বরবটি ২৫ শতাংশ, শিম ২৫ শতাংশ। এগুলো চাষ করে সফলতা মুখ দেখতে শুর করেছেন আরমান।

প্রথমে ফুলকুপি চাষ করেন। খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি নেমেছে প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। লাউ খেতের বিপরীত দিকে ২৫ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। মূলধন ছিল ১২ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। খেতে এখনও শিম আছে। শিম খেতের পাশেই ২০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছেন যা এখন বিক্রির উপযুক্ত হচ্ছে। বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা।

নরসিংদী জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন চর কাশিম নগর গ্রাম। আরমানের বাবা মোঃ মোতাহার হোসেন মুক্তার বলেন, আগে জমিতে শুধু ধান চাষ করে থাকতাম। তখন সংসারে অভাব যাচ্ছিল না। আমার ২য় ছেলে আরমান করোনা কালীন সময়ে সিন্ধান্ত নেয় সবজি চাষ করবে।

সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তখন থেকে আমার ছেলেরা আমার সাথে লেখাপড়ার পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব সবজি চাষে সময় দেয়। এবার লাউ টমেটো ও ফুলকফি চাষ করে লাভবান হয়েছি। লাউ ও মিষ্টি কুমড়া ভালো দাম পেয়েছি, লক্ষ টাকার মতন বিক্রি করেছি এখন আবার টমেটো ও ফুলকপি বাজারদর ভালো পাচ্ছি। এখন থেকে সবজি চাষ করে ছেলেদেরকে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি এখন আর সংসারে অভাব নেই।

ছেলে মুহাম্মদ আরমান হাসান বলেন, কলেজ করোনার জন্য বন্ধ থাকার ফলে বাবার কাজের পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করছি। একসময় আমি ভাবতাম সরকারি চাকরি করব। এখন আর চাকরির কথা ভাবি না। আমি সবজির চাষ নিয়েই খুশি। সবজির চাষ করার পর থেকে আমাদের পরিবারের অভাব নেই। আমি সকাল বিকাল বাবাকে তার কাজে সহযোগীতা করে থাকি।

সবজি বিক্রি করে যে মুনাফা অর্জন হয় তা থেকে আমাদের পরিবারের খরচ করে কিছু টাকা সঞ্চয় করা যায়।কৃষি অফিসের মাধ্যমে সবজি চাষের উপর বিভিন্ন সময়ে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমাদের এলাকার দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের পাশাপাশি নতুন কোন সবজীর জাত এলে তা চাষ করতে উদ্ধুদ্ধ করেন।

বেলাব উপজেলা কৃষি-উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, আধুনিক চাষাবাদের উপরে তাদেরকে বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিয়ে থাকি। কৃষক যাতে কম খরচে ভাল ফলন পেতে পারে এবং ভাল জাতের বীজ ফলন করার জন্য বলে থাকি। আমরা তাদের জমি পরিদর্শন করে থাকি।

বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর-রউফ-খান বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে নতুন নতুন চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করতে আমরা চেষ্টা করছি। কৃষি উপ-সহকারী অফিসারদের দিয়ে আমরা তাদের বিভিন্ন রকমের প্রণোদনা দিয়ে থাকি। এই মৌসুমে বেলাবতে প্রায় ২,৫০০ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা হয়েছে।

আমরা বেশির ভাগ সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি কৃষকরা যাতে ফসল থেকে লাভ করতে পারে। সৃজন থেকে একটু আলাদা ভাবে যেমন আগাম ও শেষের দিকে সবজির দাম সব সময় বেশি থাকে তাই সে সময় ফসল আবাদ করার জন্য বলে থাকি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!