পার্বত্য চুক্তির দুইযুগ পূর্তি: পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কাঙ্খিত শান্তি ফিরেনি।

0 ১৭৩

রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি: পাহাড়ের মানুষগুলো আজ যেনো নিজ দেশে পরবাসী। রোহিঙ্গাদের মত নিজদের ভাগ্য বরণ করে নিয়েছে। পাহাড়ে চলছে হত্যা, অপহরণ, খুন-গুম, ধর্ষণ ও অস্ত্রের লড়াই এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সর্বত্র চাঁদাবাজির মহা উৎসব চলছে। চারদিকে গুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ আর রক্তের দাগ। অধিকাংশ মানুষ স্বজন হারিয়েছে এই নৃশংস বর্বর জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে। সন্ত্রাসীদের হাতে শুধু বাঙ্গালীরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি, শিকার হয়েছে সাধারণ হাজারো উপজাতি। পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের এতটাই ক্ষমতার দাপট, যার ফলে প্রশাসনও তাদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিগতবছর গুলোতে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাস্ট্রীয় সম্পদের উপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে- বাঘাইছড়ি নির্বাচন শেষ করে কেন্দ্র থেকে ফেরার পথিমধ্যে ইউপিডিএফ ব্রাশ ফায়ার করে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকা ৭জনকে হত্যা সহ ১৬জনকে আহত করে: রাজস্থলী সেনা সদস্য মো. নাছিম-কে হত্যা করে: মানিকছড়িতে সেনা মেজরকে রক্তাক্ত করেছে: নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা সহ ৬জনকে হত্যা করেছে। সবই এই বিশ্বাসঘাতক উপজাতি সন্ত্রাসীদের রাস্ট্রদ্রোহীতার বহিঃপ্রকাশ। এ বছরের ঘটনা বলি- রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস রুমে ঢুকে গুলি করে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে হত্যা করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। নিহতের নাম সমর বিজয় চাকমা (৩৮)। তিনি উপজেলার রূপকারি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। কতবড় দুঃসাহস হলে সরকারি অফিসে প্রবেশ করে গুলি করে জনপ্রতিনিধি হত্যা করে?? এবার আসি চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে- পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির পরিমাণ এতটাই যে, বৃদ্ধি পেয়েছে যা কল্পনা করা যায় না। বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা (নয় শত কোটি টাকা) সমপরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এই চাঁদাবাজির ৩০% ইউপিডিএফ-জেএসএসের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের হাতে চলে যায়৷ অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তাদের বেতন-ভাতা ও অস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ, এবং দেশবিরোধী অপশক্তিকে ভরণপোষণ করা হয়। পরিতাপের বিষয় যে, উপজাতি সন্ত্রাসীরা জাতির অধিকারের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। সেই চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে নিজেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা মত চাঁদা পরিশোধ করতে করতে নাভিশ্বাস। চাঁদাবাজি সম্পর্কে আরো একটি ভয়ঙ্কর তথ্য হল- পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রসারিত করতে চাঁদা দিতে হয়! চাঁদাবাজির মহা উৎস গুলো হল: গাছ, বাঁশ, আদা-হলুদ, জুম চাষ, কাঠাল, হাঁস-মুরগী, গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়, এবং যানবাহন, ঠিকাদার ও ব্যবসা-বাণিজ্য। সাধারণ জনগন ইউপিডিএফ-জেএসএস’কে মোটা অংকের চাঁদা দিতে বাধ্য হয়। এই চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি থেকে পরিত্রাণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই পাহাড়ের মানুষগুলোর। প্রশ্ন আসতে পারে পাহাড়ে প্রশাসন কি করে? বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে পাহাড়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নামে মাত্র আছে। এখানে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদা নীরবতা পালন করতে হয়। নানান চাপের কারণে তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। আরো একটি বড় কারণ হল উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়না মূলত আন্তর্জাতিক মহলের চাপের কারণে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজাতি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পার্বত্য ভূখণ্ডকে নিজেদের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উপজাতি সন্ত্রাসীদের শক্তির মূল উৎস কোথায়? শক্তির উৎস খুঁজতে গিয়ে গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, প্রতিবেশী রাস্ট্রগুলো পার্বত্য উপজাতি সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে প্রতিবেশী রাস্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার অংশ হিসেবে উগ্রবাদী উপজাতি একটি অংশকে অস্ত্র দিয়ে লেলিয়ে দিয়েছে। যার উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, প্রতিবেশী দেশের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর সীমান্তে কাঁটা তাঁরের বেড়া না থাকা। প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অবাধে সীমান্তে উপজাতি সন্ত্রাসীদের অস্ত্র পারাপারে সহযোগিতা করে আসছে, তাদের মাটিতে জেএসএস-ইউপিডিএফকে ঘাঁটি করতে দেওয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য সীমান্তে বিএসএফ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও গরু চোরাকারবারি ঠেকাতে পশুর মত গুলি করে মানুষ হত্যা করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার সীমান্তে কখনো তাদেরকে গুলি ছুঁড়েনি দেখা যায় না! মূলত সীমান্তে অবাধে আসা যাওয়ার জন্য সীমান্তে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই এই থেকে প্রতিয়মান হয় যে, প্রতিবেশী রাস্ট্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে এবং এদেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ২-রা ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুইযুগ পূর্তি, অথাৎ ২৪ বছর পূর্তি হচ্ছে। দুঃখজনক যে, ২৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও অবৈধ অস্ত্রধারীদের কারণে পাহাড়ে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আসেনি। এখনো অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ ও সারি সারি লাশ দেখা যায়। পাহাড়ে দীর্ঘদিনের হানাহানি ও রক্তারক্তি সংঘর্ষ বন্ধ করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), এবং বাংলাদেশ সরকার মধ্যকার ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তিতে সরকারের পক্ষ হতে বাড়তি শর্ত ছিল না। এদিকে জেএসএসের পক্ষ হতে অসংখ্য শর্ত ও দাবিদাওয়া ছিল। যা সরকার শর্তহীনভাবে মেনে নিয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার ও জেএসএস সন্তু ৭২টি ধারা মোতাবেক চুক্তি সম্পাদিত করে। এই চুক্তির ফলে সকলের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিলো পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়েই যাবে, আর কোন মায়ের বুক খালি হবে না। এর মধ্যদিয়ে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্ত হবে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সমস্যা ও যুদ্ধের অচল অবস্থার অবসান ঘটবে। কিন্তু তার কোনটার প্রতিফলন ঘটেনি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!