বাঁশখালীতে হাতি মেরে মাটি চাপা দেয়ার ১৭ দিন পর জানাজানি,এ নিয়ে ৭ বছরে ১৯ হাতির মৃত্যু।

0 ৫১০,৭৭৮

বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য জঙ্গল পুঁইছড়ি পাহাড়ে একটি হাতি মেরে মাটিতে পুঁতে দেয়ার ১১দিন পর বনবিভাগ জানতে পেরে ময়নাতদন্ত শেষে থানায় দায়সারা জিডি করেছে। গভীর জঙ্গলের এ অপ্রকাশিত ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানতে পেরে গত ২০শে সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্তের ৬ দিন পর অর্থাৎ ১৭ দিন পর ২৬শে সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে।এরই মধ্যে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাতিটি মাটিতে পুঁতে দেয়ায় জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছে।

বনবিভাগ জানিয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসার আগে কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না কিংবা মামলা করা যাবে না।এ পর্যন্ত ৭ বছরে ১৯টি হাতি বাঁশখালীর পাহাড়ে মারা গেলেও কোনটির সঠিক তদন্ত হয়নি এবং কারো বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বনবিভাগ।

অভিযোগ আছে,নিরাপরাধী মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে দাগী ও চিহ্নিত অপরাধীরা পার করিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ।গতকাল সোমবার ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত পুঁইছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল পুঁইছড়ি বান্দরমারা এস্তফিজুর রহমান চৌধুরীর খামার বাড়ীর পাশে পাহাড় ও ধানী জমি ঘুরে দেখা গেছে,১৭ দিন আগে মারা যাওয়া হাতিটি যেখানে দুস্কৃতিকারীরা মেরে মাটিচাপা দিয়েছিল সেখানেই ময়নাতদন্ত শেষে বনবিভাগ ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারা আবার মাটি চাপা দিয়ে গাছের ডালপালা চাপা রেখেছে।

স্থানীয় কৃষক আলী নবী,নেছার আহমেদসহ অনেকে বলেন, হাতিটি অনেকদিন আগে কে বা কারা মেরে বান্দরমরা পাহাড়ের সমতল অংশে মাটিচাপা দিয়ে রাখে।গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর বনবিভাগ ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা এসে হাতিটি মাটিচাপা থেকে উঠান।পরে ময়নাতদন্ত করিয়ে আবার ওই স্থানে মাটিচাপা দেয়া হয় এবং গাছের বিশাল বিশাল ডাল-পালা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান,ওই পাহাড় এবং ধানী জমির মৌরশী সূত্রে মালিক ফরহাদ মিয়া, ফারুক সিকদার,হানে আলম ও মঞ্জুর মিয়া।ওরা বিশাল ওই পাহাড়ি সম্পত্তি স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর, দেলোয়ার,আজিমকে বর্গা হিসেবে দিয়েছেন।অভিযোগ ওঠেছে জমির মালিক ফারুক সিকদার ও ফরহাদ মিয়া হাতি মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বনবিভাগ ও প্রাণীসম্পদক কর্মকর্তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে।

এ কারণে গত ২০ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্ত করা হলেও বাঁশখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে গতকাল সোমবার(২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)ময়নাতদন্তের নমুনা কুমিল্লা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়নি। বিশাল হাতিটিকে হাতির বাচ্চা উল্লেখ করে বনবিভাগ থানায় জিডি করেছে।এমন কী মৃত হাতিটি মাটির ভিতর থেকে তোলে ময়নাতদন্ত করারও বিষয় উল্লেখ করেনি এবং হাতিটি মেরে পুঁতে রাখার জায়গার মালিক কারা তাও উল্লেখ করেননি।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা.তানভীর হোসেন বলেন,ময়নাতদন্তের সময় হাতিটির পঁচা গন্ধ ছড়িয়েছিল।ধারণা করা হচ্ছে,ময়নাতদন্তের দিনের অন্ততঃ ১১/১২ দিন আগে হাতিটি মারা গিয়েছিল।প্রাথমিক ধারণা,কেউ মেরে হাতিটিকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল।ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর বোঝা যাবে হাতিটি কিভাবে মরেছে।গতকাল সোমবার বিকালে তিনি বলেন এখনো ময়নাতদন্তের সুরতহাল প্রতিবেদন কুমিল্লায় পাঠানো হয়নি।

পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন,থানায় জিডি করার পর হাতিটি কিভাবে মারা গেছে,তা তদন্ত করছি।তবে জিডিতে হাতি মেরে মাটিতে পুঁতে রাখার বিষয় এবং হাতি মারার স্থানের ব্যক্তিদের নাম নেই কেন প্রশ্নের কোন সদুত্তর তিনি দেননি।তিনি নানামুখি ভয়ে আছেন বলে শংকা প্রকাশ করেন।কিছুদিন আগে তাকে স্থানীয় এক দস্যু চাকু দিয়ে মারতে এসেছিলেন বলেও জানান।

পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ বলেন,হাতি মৃত্যুর ঘটনাটি জোরালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।হাতিটি যদি কেউ হত্যা করে থাকে কাউকে রেহায় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য,বনবিভাগের দেয়া তথ্যে জানা গেছে,২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গত ৭ বছরে বাঁশখালীর বনাঞ্চলে মারা গেছে ১৯টি হাতি।গত ৭ বছরে কালীপুর রেঞ্জে মারা গেছে ১২টি বন্য হাতি। জলদী ও পুঁইছড়ি রেঞ্জে ৭টি।অসুস্থ হয়ে পড়া ৩টি হাতিকে সুস্থ করে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১১শে জুন কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কালীপুরে গভীর জঙ্গলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মারা হয়েছে একটি হাতি।এর আগেও জঙ্গল কালীপুরে মৃত হাতির শাবক পাওয়া গেছে।এর ৪ মাস আগে গত বছরের ৩০শে নভেম্বর বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নে লটমনি পাহাড়ে ১টি হাতিকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় দুস্কৃতিকারীরা এবং ১২ই নভেম্বর বাঁশখালীর চাম্বল বনবিট অফিসের অদূরে আরও ১টি হাতি মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!