ভূমিসেবাকে দালালমুক্ত করতে এসি ল্যান্ডের উদ্যোগ।

0 ৫১০,২৯৩

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা ভূমি কার্যালয় ‘দালাল ও হয়রানিমুক্ত’ হওয়ায় এলাকার লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।গত তিনমাসে প্রায় ৩০ জন ‘দালাল’কে আইনের আওতায় এনেছেন বাঁশখালীর সহকারী কমিশনার(ভূমি)খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।ফলে ভূমি অফিসের চিত্র পাল্টে গেছে।ভূমি কার্যালয়ে সেবা নিতে গিয়ে আগের মতো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। দালালও তেমন নেই।

গত ৩ মাসে এসি ল্যান্ডের হাতে আটক হওয়া ‘দালাল’দের সিংহভাগই কালীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব দালালদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ নথিও পৌঁছে যেত বলে অভিযোগ।কিন্তু সাড়ে তিনমাস আগে যোগদানের পর দালাল প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছেন এসি ল্যান্ড খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।

বাঁশখালী ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়,গত তিনমাসে যেসব দালালকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন কালীপুর ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে ইমরান,গন্ডামারার মৃত মোবারক আলীর ছেলে আমির উদ্দিন,উত্তর জলদীর সাহেদের ছেলে রিদুয়ান,শীলকূপের আবুল হাসানের ছেলে গিয়াস উদ্দিন,দক্ষিণ জলদীর রনজিত সুশীলের ছেলে শুভ সুশীল,জালিয়াঘাটার মৃত আমির হামজার ছেলে আব্দুল মতলব,কালীপুরের আবদুল্লাহর ছেলে হেলাল আহমদ।তাদেরকে জরিমানা ও মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়।

এছাড়া কালীপুর ইউনিয়নের কোকদন্ডী গ্রামের ভেট্টা মিয়ার ছেলে রিপন,গুনাগরীর নুর আলমের ছেলে সেলিম,একই এলাকার ফজল করিমের ছেলে বশির আহমদ,শাহিন পারভেজের ছেলে মহিরুল কাদের জাবেদ,সজল গুহের ছেলে প্রণব গুহ,পূর্ব চাম্বলের নুরুল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন,সরলের আব্দুল করিমের ছেলে জমির উদ্দিন,বৈলছড়ির নুরুল ইসলামের ছেলে আজিম উদ্দিন,সরল ইউনিয়নের একরাম আলীর ছেলে আবুল বশর,পশ্চিম চাম্বলের মরহুম মোনাফ আলীর ছেলে আমির উদ্দিন ও সিদ্দিককে জরিমানা ও মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর কালীপুর ইউনিয়নের কুতুবউদ্দিনের ছেলে আকবরকে(৬০),১১ই সেপ্টেম্বর চাম্বল ইউনিয়নের পূর্ব চাম্বল গ্রামের নুরুল হোসেনের ছেলে ইমরান,সরল ইউনিয়নের একরাম আলীর ছেলে আবুল বশর,পশ্চিম চাম্বলের মৃত মোনাফ আলীর ছেলে আমির উদ্দিনকে জরিমানা করা হয় ও মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়।

দালাল প্রতিরোধে এসব কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন এসি ল্যান্ড খোন্দকার মাহমুদুল হাসান।গত ২৫শে সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান একটি চিঠি পাঠিয়ে তার কাজের প্রশংসা করেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ওই চিঠিতে লিখেছেন,বাঁশখালী উপজেলায় আপনার উদ্যোগে ‘দালালমুক্ত ভূমি সেবা’ প্রদান সম্পর্কে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি।এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই স্থানীয় সেবাপ্রার্থী ও মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।চমৎকার এই কার্যক্রমের জন্য আপনাকে এবং আপনার সকল সহকর্মীকে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও লিখেছেন,আপনার এ উদ্যোগ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।ভূমি সেবা সহজিকরণ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে ভূমি মন্ত্রণালয় যে সকল উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে আপনার মত কর্মকর্তাবৃন্দ ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

এদিকে মঙ্গলবার(২৭চে সেপ্টেম্বর)বাঁশখালী ভূমি অফিসে সেবা নিতে যাওয়া ছনুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শফিক আহমদ বলেন,এখন ভূমি অফিসে দালাল চোখে পড়ে না।যে কেউ গিয়ে এসি ল্যান্ডের সাথে কথা বলে সেবা পাচ্ছেন।দালাল না ধরে এসি ল্যান্ডের কাছে গেলেই সেবা মিলছে।তবে কর্মচারী পর্যায়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।কাজের ক্ষেত্রে তাদেরকে আরও বেশি উদারতার পরিচয় দিতে হবে।

বাঁশখালী উপজেলার এসি ল্যান্ড খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন,দালালদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভূমি অফিসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।আগে সিসিটিভির মনিটরে সমস্যা ছিল,সেটা দূর করেছি। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন দালালকে আইনের আওতায় এনেছি।আমি বাঁশখালী ভূমি অফিসে যোগদানের পরপরই দালালমুক্ত করতে কাজ শুরু করি।সেবা নিতে আসা অনেকেই হয়রানির অভিযোগ করেন।আমরা তাদের কথা শুনে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

দালালদের সাথে সখ্যতা থাকা অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,যদি আমাকে কেউ অভিযোগ করে আমার কোন কর্মচারী তাদেরকে হয়রানি করছে তাহলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।আমি তো এ পর্যন্ত ভূমি অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পাইনি।শুধু দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনছি।ভূমি অফিসের কর্মচারীরা যেমন এটার জন্য দায়ী,সাধারণ মানুষও কম দায়ী নয়।তারা দালালদের কাছে যাচ্ছে কেন।

এসি ল্যান্ড খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন,সাধারণ মানুষ দালালদের কাছে যাচ্ছে।এ জন্য দালাল সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।আমরা আস্তে আস্তে দালাল সংস্কৃতি মুছে ফেলতেছি।সাধারণ মানুষ যদি ভূমি অফিসের কর্মচারীদের কাছে সার্ভিস না পায়,আমি তো আছি। আপনাদের কাছে যারা অভিযোগ করছে তাদেরকে সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন। আমি যদি মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পাই তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!