লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় আটক দুইজন।

0 ৭৯৭,৬৩৫

র‌্যাব-০৭ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষীপুরের সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার এজাহারভূক্ত একজন আসামিসহ মোট ২ জন আসামী গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গত ২৫শে এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সন্ত্রাসীদের গুলিতে লক্ষীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম নিহত হয়।ঐদিন আনুমানিক রাত দশটায় জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে।

লক্ষীপুর জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জেহাদী গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন।কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে প্রতিদ্বদ্বিতা করেন নিহত নোমানের ভাই মাহফুজুর রহমান।নিহত নোমানের ভাই একজন ব্যবসায়ী এলাকায় তেমন পরিচিতি না থাকায় তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল নোমান ভোটের সময় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে বড় ভাইয়ের জয়ী হওয়ার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে।

যার ফলশ্রুতিতে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদী পরাজিত হওয়ার পর হতে আগের মত তার আধিপত্য বিস্তার করতে না পারায় বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান,তার ভাই আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ তাদের সমর্থকদের উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদর্শন করে আসছিলো।

গত বেশ কয়েকদিন পূর্বে পোদ্দার বাজারে জনসম্মুখে প্রকাশ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদী হুমকি দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে বলে যে,তিন ঘন্টার জন্য পোদ্দার বাজার অবস্থান করে দেখ,তোদের লাশ ফেলে দিব।গত ২৫শে এপ্রিল সন্ধ্যার পরে আব্দুল্লাহ আল নোমান বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রাকিব ইমাম, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক’কে সাথে নিয়ে পোদ্দার বাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য আসেন।

উল্লেখ্য,কয়েকমাস পূর্ব সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর বিশ্বস্ত সহচর তারেক আজিজ ও সবুজের সহিত আব্দুল্লাহ আল নোমানের একটি সু-সম্পর্ক তৈরি হয়।সে সম্পর্কের খাতিরে সাবেক চেয়ারম্যাননের সহচর তারেক আজিজ ও সবুজ কৌশলে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং রাকিব ইমামকে সবুজের অফিসে আসতে বলে।তখন নোমান এবং রাকিব বিশ্বার করে তাদের মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল বশিকপুর ইউপিস্থ পোদ্দার বাজার হতে নাগেরহাট গামী রাস্তার বাজার হতে নন্দীগ্রামস্থ একটি স-মিলের সামনে পৌঁছামাত্রই পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর নির্দেশে ওঁৎ পেতে থাকা ২০-২৫ জনের দুস্কৃতিকারী একটি দল সশ্বস্ত্র আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসীরা আব্দুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।তখন আব্দুল্লাহ আল নোমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা কালে দুস্কৃতিকারীরা বাজারের ব্রীজের পাশে অবস্থান নিয়ে ঘিরে ফেলে ও নোমানের মাথায় গুলি করে তাহার মৃত্যূ নিশ্চিত করে।

সন্ত্রাসীরা আব্দুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।তৎক্ষণাত সংবাদ পেয়ে নোমানের ভাই (চেযারম্যান)এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং রাকিব ইমামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষীপুর সদর হাসপাতালে নিযে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার নোমানকে মৃত ঘোষণা করেন এবং রাকিব ইমামকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করলে পথিমধ্যে সেও মৃত্যূবরণ করে।

উল্লেখিত আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত ভিকটিম নোমানের ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানায় ১৮জন আসামি করে এবং ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার পরপরই বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করে।এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ই মে বিকাল চারটায় র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখিত হত্যা মামলার ১৬নং এজাহার নামীয় আসামী লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগন্জ থানার আওতাধীন নন্দীগ্রামের গোলাম মাওলানার ছেলে শহীদ উল্ল্যাহ(৫০) ও সন্দিগ্ধ আসামী আলাউদ্দিন ওরফে আলো(২৭)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা উল্লেখিত জোড়া খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তথাকার কথা স্বীকার করে।গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!