সন্দ্বীপে ধারাবাহিক চুরির ঘটনা কি আসলেই চুরি নাকি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র!

0 ৬৮৮,০৭৯

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ধারাবাহিক চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।পুরো সন্দ্বীপ জুড়ে চলছে এইসব চুরির ঘটনা।এই চোর চক্রের সদস্যরা টার্গেট করে একেক দিন একেক এলাকা।আজ মগধরা তো কাল মাইটভাঙ্গা,আরেকদিন কালাপানিয়া।তাই বুঝা যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চুরি এটা।দেখার বিষয় হচ্ছে,একসাথে ৮-১০টি দোকানে চুরি হলেও শুধু ক্যাশবাক্স থেকে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে যাচ্ছে।

এই নিয়ে সচেতন জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে এগুলো কি চোরে চুরি করছে নাকি সংঘবদ্ধ একটা চক্র এমন কর্মকাণ্ড করে অন্য কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত করছে।চোর চুরি করলে তো এমন হওয়ার কথা না।একসাথে ১০/১৫ টা দোকান একসাথে,শুধুমাত্র অল্প টাকা নিয়ে যাওয়া অথবা আজ এই এলাকা কাল ওই এলাকা।

গত ২৮শে ডিসেম্বরের পর থেকেই শুরু হয়েছে এই ধরনের ধারাবাহিক চুরির ঘটনা যা ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি।এই ধারাবাহিক চুরি কি আসলেই চুরি নাকি কাউকে না কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নীল নকশা সেটা বলা মুশকিল।তবে সন্দ্বীপের ইতিহাসে এমন ধারাবাহিক চুরি আর কখনো হয়নি।তাই জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন।

অভিযোগ উঠেছে,ব্যক্তিগত আক্রোশে চুরির অভিযোগ তুলা হচ্ছে,এমনকি কয়েকজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছে এইসব চুরিকে ঘিরে।বাজারের পুরাত কমিটি ভেঙে নিজস্ব লোক দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জন্যেও বাজারে চুরির অভিযোগ আনা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানা যায়,গত ২৮শে ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ সন্দ্বীপের জনতা মার্কেট ৫টি,মগধরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সরকারি পুকুর পাড় ও আদর্শ মার্কেট একসঙ্গে ১০টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।সবমিলিয়ে ক্যাশবাক্স ভেঙে ১৩০০টাকা নিয়ে যায়।

পরদিন বুধবার দিবাগত রাতে সারিকাইত ইউনিয়নের শিবের হাটের দক্ষিণ মাথা থেকে বলির পোল পর্যন্ত ৮টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।তাও সামান্য টাকা নিয়ে যায়।এরপর(৩ জানুয়ারী)রাতে সন্দ্বীপ থানা কার্যালয় এলাকায় একটি দোকান,আবুল কাশেম মহিলা কলেজে চুরির চেষ্টা।এর কয়েকদিন পর রহমতপুর এলাকায় একাধিক দোকানে চুরি হয়।এর মধ্যে কয়েকটি অটোরিকশা,ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চুরি হয়।

জনতা মার্কেট ও শিবের হাটের দক্ষিণ মাথায় সব মিলিয়ে সাত থেকে আটটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে।দোকানে ক্যাশ বাক্সে হয়তো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ছিল।ওই টাকাগুলোই নিয়ে গেছে চক্রটি। এছারা সম্প্রতি বানীরহাটে ১৪ টি দোকানে চুরি হয়।এই চুরিতেও ক্যাশবাক্স হতে মোট ১০/১৫ হাজার টাকা চোরেরা নিয়ে যায়। অথচ অন্য কোন মালামালে হাত দেয় নি। চুরির এই বিষয়গুলো রহস্যজনক।

এদিকে এতগুলো চুরির ঘটনার মধ্যে মাত্র তিনটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।নানা ঝামেলার কারণে ভুক্তিভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে অনিহা দেখাচ্ছেন।তাছাড়া চুরির মামলায় আসামিকে জেলে পাঠানো হলেও কয়েকদিন পর জামিনে বের হয়ে বাদির উপর নানা ঝামেলার সৃষ্টি করে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যেই চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধে সন্দ্বীপ থানায় জনমত গ্রহণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।উক্ত জনমত ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) সুদীপ্ত সরকার(পিপিএম),সীতাকুন্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম নায়হানুল বারী।

পুলিশের দাবি,অভিযোগ দেওয়া দুটি ঘটনায় সন্দ্বীপ পৌরসভার পৌরভবনের পেছনে শিবলু নামে এক চোরের বাড়ি থেকে মালামাল উদ্ধার করেছে।পাশাপাশি শিবলুর পুকুরে ডুবানো অবস্থায় চোরায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা,ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ভ্যানগাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।অভিযানের টের পেয়ে শিবলু পালিয়ে গেছে।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)শহিদুল ইসলামের দাবি,চুরির ঘটনা ৬১টা বলা হলেও ঘটনা এতবেশি নয়।পুলিশ ইতোমধ্যে দুটি চুরির ঘটনায় মালামাল,অটোরিকশা,ভ্যান উদ্ধার করেছে।গ্রেপ্তারও করেছে চারজনকে।এছাড়া পরশুদিন মসজিদে দানবাক্স ভেঙে টাকা চুরির ঘটনায় তিন ঘন্টার ভিতরে দুই চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে,এরপর আরো একজন গ্রেফতার করা হয়েছে।

ওসি আরো বলেন,তাদের জনবল ও যানবাহন সংকট আছে।এরমধ্যে তাদের কাজ করতে হচ্ছে।তবুও তার নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।সেনেরহাট,শিবেরহাট ও উপজেলা এলাকায় স্থায়ীভাবে পুলিশ রাখা হয়েছে।৫০টির ও অধিক বাজার এবং বিচ্ছিন্ন ভাবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অনেক দোকান।পুলিশ দিয়ে সব নজরদারীর মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন,বড় বড় বাজারগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত।শিবেরহাট এলাকায় একটা মিনি শহর।সেখানে আরও নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যে মাইটভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে বলেছেন।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা প্রথম আলোকে বলেন,গতকালের আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রতিটি বাজার সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও নিরাপত্তাপ্রহরীদের আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।এছাড়া পুলিশের টহল আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।চোরদের ধরতে স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।প্রতিটি বাজারে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্তটি নোটিশ আকারে প্রতিটি বাজার কমিটির কাছে পাঠানো হবে জানান তিনি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!