সন্দ্বীপে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। কয়েকটি ইকো রিসোর্ট স্থাপন করলে হতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।

0 ২৫৬
বাদল রায় স্বাধীন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সন্দ্বীপ দিন দিন ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠছে একটি আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।চারদিকে বিশাল জলরাশি, সন্দ্বীপের প্রবেশ পথে বিশাল কেওড়াবন, পশ্চিমে ব্লক বেড়িবাঁধের নান্দনিকতা,পাশাপাশি জেগে উঠা নতুন চরে সারি সারি নারিকেল গাছ,চড়ের মাঝে জেগে উঠা নোনা উদ্ভিদ,মাঝে মাঝে ভেড়া ও মহিষের পাল, চরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালে জেলেদের মাছের নৌকা,গোবরের বিষ্ঠা হতে গই নামে একটি বিশেষ ধরনের জ্বালানী প্রস্তুতের দৃশ্য, কিছু কিছু জায়গায় দড়ি বেঁধে চেউয়া শুটকি শুকানো,নতুন চরে পলি জমা চাষের জমির মাটি বিক্রয়,নৌকা ও ট্রলার তৈরির দৃশ্য, সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পুর্ব মুহুর্তে গাছগুলো সংগ্রাম করে টিকে থাকার দৃষ্টান্ত দেখে প্রকৃতি প্রেমী মানুষরা নিজের অজান্তে বলে উঠেন বাহ এমন ব্যাতিক্রম দ্বীপ কোথাও খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর। আর সেই নদীর কূলে তাবু খাটিয়ে পুর্নিমার চাঁদ দেখা, পড়ন্ত বিকালে সুর্যাস্তের দৃ্শ্য, সুনশান নীরবতা কক্সবাজার ও কুয়াকাটার সৌন্দর্যকেও হার মানায়। এ সমস্ত বিষয় গুলো ফেইসবুকের সুবাদে ব্যাপক প্রচারনার ফলে সন্দ্বীপে প্রায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। তাবু খাটিয়ে উপভোগ করেন সে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।মুগ্ধ হয়ে দেখে চর ও সাগরের সঙ্গমস্থলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এবং উপভোগ করেন তার পাশে ক্রীড়ামোদী যুবক ও কিশোরদের প্রতিনিয়ত ফুটবল টিমের আয়োজন। অপরদিকে জোয়ারের সময়ে এখন ভ্রমন পিয়াসীরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বা পতেঙ্গা সি-বিচের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য অনুভব করতে পারেননা। বরং সন্দ্বীপে তার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দয্য যোগ করে নতুন ব্যঞ্জনা। তাই এটিকে প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও স্থানীয় সাংসদের আন্তরিক মনোভাব পারে পুর্নাঙ্গ একটি বিনোদন স্পট বা পর্যটন এলাকায় রুপান্তর করতে, এমনটি জানালেন ঘুরতে আসা বিভিন্ন দর্শনার্থী।
আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে হরিশপুর সীমানায়
চট্টগ্রাম সিটি কলেজের স্টুডেন্ট তানভীর আহম্মেদ রাফি প্রবাসী সিঙ্গাপুরের রেমিটেন্সযোদ্ধা ওয়াহিদ মুরাদ সহ ৭/৮ জনের একটি পর্যটক দলের। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানালেন তাদের চমৎকার অনুভুতির কথা রাখলেন কিছু প্রস্তাবনাও ।
তানভীর আহম্মেদ বলেন অপরিসীম সৌন্দর্যের লীলা ভুমি প্রকৃতির রানী সন্দ্বীপ। সারি সারি নারকেল গাছ,নতুন চরের ফাঁকে ফাঁকে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খাল , গবাদি পশুর পাল, রাত্রে এ সুনশান নিরবতায় বসে চাঁদনী রাত উপভোগ করছি প্রান ভরে। শ্বাস নিচ্ছি নির্মল অক্সিজেন গ্রহনের মাধ্যমে। কোন ময়লা আবর্জনা, ধুলি বালি নেই বলে কোন কাকের উপস্থিতিও নেই এখানে। সেটাই প্রমান করে এখানকার পরিবেশ কত নির্মল। এছাড়াও এখানকার মানুষ গুলো খুবই আন্তরিক।তবে এখানে পর্যটকদের সুবিধার্থে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিতে হবে সেগুলো হলো দীর্ঘক্ষন অবস্থান করা দর্শনারর্থীদের জন্য একটি গনশৌচাগার নির্মান, সন্ধ্যার পরও বা রাত্রে যারা অবস্থান করবে তাদের সুবিধার্থে কিছু স্ট্রিট লাইট স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের টহল ব্যবস্থা বা ২/৪ জন আনসার নিয়োগ, বসার জন্য কিছু স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং কিছু হোটেল রেষ্টুরেন্ট স্থাপন। তাহলে পর্যটকরা স্বল্প সময়ের জন্য এসে খাবার সংগ্রহের কাজে যে সময় ব্যয় করতে হয় সেটা থেকে মুক্ত থাকলে নির্ভেজাল আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
ওয়াহিদ মুরাদ বললেন সম্পুর্ন ব্যতিক্রম কথা তিনি বললেন শহরের কোলাহল মুক্ত পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠে মানুষ এখন সন্দ্বীপের মতো জায়গার প্রতি আকৃ্ষ্ট হচ্ছে। এখানে পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে কিছু উন্নয়ন জরুরী তবে সে উন্নয়ন করতে গিয়ে বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমের কোন ক্ষতি করা যাবেনা, পাখীদের অভয়াশ্রম তৈরি করতে হবে এটিকে, তাদের কোন ভাবে বিরক্ত করা যাবেনা তাই কিছু ইকো রিসোর্ট তৈরি করা যেতে পারে। কক্সবাজার বা কুয়াকাটার মতো বানিজ্যিক ভাবে বেশী কিছু করতে গেলে সেখানে টেন্ডারবাজি বা অনৈতিকতার বিষয় এসে যাবে। উচ্চস্বরে মাইকিং বা বা ডিজেগানের তালে আনন্দ করতে গেলে প্রকৃতির ব্যাঘাত ঘটবে। সে সমস্ত ঝন্জাট নেই বলে আমাদের সন্দ্বীপ খুব ভালো লেগেছে। সকল বন্ধুদের বলবো প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখতে হলে সন্দ্বীপ এসে ঘুরে যাও।
অন্যদিকে সন্দ্বীপের দুই যুবক শিমুল ও সৌরভ বললেন চরকে আরো বেশী সম্ভাবনাময় ও অর্থনৈতিক জোনে পরিনত করে সেগুলোকে চাষাবাদ যোগ্য করতে পারলে হাজার হাজার একর ভুমি হবে আমাদের উপার্জনের বড় উৎস। তার জন্য জেগে উঠা চরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত অসংখ্য ছোট ছোট খালের মধ্যে ২/১ টি মুল খাল চিহৃিত করে সেগুলো ড্রেইজিং করে গভীর করে সে মাটি দিয়ে বাকি খালগুলো বন্ধ করে দিতে হবে তার জন্য একটি ড্রেইজিং মেশিন দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করতে হবে। এরপর কয়েকটি নোনা বেড়িবাঁধ বা রিং বেড়িবাঁধ দিয়ে সেগুলোতে সিজনাল সব্জী চাষ করে সন্দ্বীপের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানী করা যাবে এবং বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে ডেকে এনে এখানে মৎস ও গবাদি পশুর চারন ভুমি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দুগ্ধজাত পন্য তৈরি ও রপ্তানী করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন ও বেকারত্ব দুরীকরনে ভুমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!