সন্দ্বীপ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ.বি.এম ছিদ্দিকুর রহমান আর নেই

0 ৩৩৩

ইলিয়াস কামাল বাবুঃ সন্দ্বীপ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের দুই দুইবার নির্বাচিত কমান্ডার ৭১’র বীর লড়াকু সৈনিক এ.বি.এম ছিদ্দিকুর রহমান সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্সস্থ নিজ বাসভবনে(জামান হাউজ) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বিকাল ৪:৩০ মিেিনটর সময় ইন্তেকাল করেন(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

এ.বি.এম ছিদ্দিকুর রহমান ১৯৬৮ সালে সন্দ্বীপ কাটগড় গোলাম নবী হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৭০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।এর আগে ৭০’র নির্বাচনে জাতীয় নেতা এম.আর ছিদ্দিকীর পক্ষে সন্দ্বীপে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।স্কুল জীবন থেকে তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন।৮ম শ্রেণি পড়া অবস্থায় ৬ দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু সন্দ্বীপ এলে স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে সন্দ্বীপ টাউনের জনসেবায় যোগদেন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবানে পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের সময় কাটগড় স্কুলে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শাস্তি স্বরূপ তিনি‘বেড টিসি’পান।সেই সাথে তাকে ৯টি বেত্রাঘাতও করা হয়। মেট্রিক পরীক্ষার্থী হওয়ায় সে যাত্রায় তার শাস্তি মওকুফ হয়।

২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী চট্টগ্রামে হামলা কালে তখন তিনি পূর্ব মাদার বাড়ীর সিটি কলেজ ছাত্র হোষ্টেলে অবস্থান করছিলেন।২৭ মার্চ তিনি সন্দ্বীপ চলে আসেন এবং প্রিন্সিপাল আকতার সাহেবের নেতৃত্বে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন।তখন তিনি সদ্য বিবাহিত।এক পর্যায়ে ২৬ জনের একটি দলের সাথে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং ভারতের উদয় হয়ে হরিনা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পৌঁছেন।পরে তাদের আগরতলা বিমান ঘাঁটি,হাফলং বিএলএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প,শিলিগুরি হয়ে শাহরামপুর নিয়ে যাওয়া হয়।এবং সবশেষে সর্বমোট ১২৬ জনের একটি দলকে ভারতের দেরাদুনে টান্ডুয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে সাক্ষাৎ পান ৪ ছাত্রনেতা-শেখ ফজলুল হক মনি,তোফায়েল আহমদ,সিরাজুল আলম খান ও আব্দুর রাজ্জাকের।

উল্লেখ্য,দেরাদুনের এ ক্যাম্পটি পৃথিবীর বিখ্যাত একটি গেরিলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প।ভারতের জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে তাদের ৩ মাস গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।প্রশিক্ষণে ছোট,বড়,মাঝারি ও ভারী অস্ত্র চালনা,বিষ্ফোরক বিষ্ফোরণের প্রশিক্ষণও দেয়া হয় তাদের।উল্লেখ্য,জেনারেল উবান পৃথিবীর ৩ জন শ্রেষ্ঠ গেরিলা প্রশিক্ষকের মধ্যে একজন।

তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের লোক ছিলেন।নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের ইদ্রিস ভাইয়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অপারেশনের দায়িত্ব পেয়ে ২৬ জনের(রয়েল বেঙ্গল ফোর্স)গ্রুপটি দেশের অভ্যান্তরে ঢুকে পড়ে।পরে ঐ গ্রুপ থেকে তিনি সহ ১২ জন আলাদা হয়ে তারা সন্দ্বীপ চলে আসেন।বিএলএফ’র এ গ্রুপটি সন্দ্বীপের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রথম গ্রুপ হিসেবে স্বীকৃত।এ গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন-রফিকুল ইসলাম।এই ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সবাই ছিলেন ট্রেনিং ইন্সষ্ট্রাক্টর হিসেবে গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং সমমর্যাদা সম্পন্ন।

সন্দ্বীপে যুদ্ধকালীন রাজনৈতিক নেতা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএ সন্দ্বীপ থানা আক্রমন অপারেশনে উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনৈতিক সমর্থন ও উৎসাহ যুগিয়েছিলেন।এ আক্রমন অভিযানে তারা ১২ জন বিএলএফ যোদ্ধা ছাড়াও ২৫ জন বাঙ্গালী মিলিটারী অংশ নেয়।এ ছাড়া সন্দ্বীপে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আরো ৫০/৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়।প্রচুর গোলাগুলি শেষে থানায় অবস্থানকারী পাক বাহিনী অস্ত্র-শস্ত্র সহ আত্মসমর্পন করে। মূলতঃ ৭ ডিসেম্বর থেকেই সন্দ্বীপ মুক্ত অঞ্চল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধাদের হাতে পরিচালিত হতে থাকে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!