খাল দখল ও অপরিকল্পিত স্থাপনায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে সন্দ্বীপে।
খাল দখল ও অপরিকল্পিত স্থাপনায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে সন্দ্বীপে

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় বর্ষার শুরুতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।কয়েকটি ইউনিয়নের বেশকিছু ওয়ার্ডের নিচু এলাকা ও প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
শিক্ষার্থী,কৃষক,ব্যবসায়ী ও সাধারণ পথচারীরা প্রতিনিয়ত এই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন।বর্ষা মৌসুমে এ পরিস্থিতি প্রতিবছর ঘটলেও যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ না থাকায় সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও খাল ভরাট দায়ী
স্থানীয়দের অভিযোগ,গত ৭-৮ বছর ধরে সন্দ্বীপে পরিকল্পনাবিহীনভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।বহু জায়গায় খাল-বিল ভরাট করে বসতঘর,দোকানপাট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।আগে যেসব খালে পানি নেমে যেত,এখন সেগুলোর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না।
এছাড়া পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নাজুক।অনেক জায়গায় ড্রেনগুলো অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে,কিছু ড্রেন আবার আবর্জনায় পরিপূর্ণ।এতে পানির স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,সন্দ্বীপ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খাদ্য গুদাম রোড,হারামিয়া ৯ নম্বর ও মুছাপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী সড়ক,এনামনাহার মোড়সহ অনেক এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে আছে।এসব রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে,যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষ করে এনামনাহার মোড় এলাকার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।এখানে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে, কিন্তু কোনো কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই।ফলে পানির সঙ্গে ময়লা,পচা আবর্জনা মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং মশার উপদ্রব বেড়েছে।স্থানীয়দের মধ্যে ডেঙ্গু ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
এছাড়া কৃষিকাজেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।জলাবদ্ধতা শুধু শহরাঞ্চলেই নয়,গ্রামাঞ্চলেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে।নিচু এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন,তাদের চাষের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।অনেক ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে,কিছু জমি আবার দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় আগামী মৌসুমেও চাষের উপযোগী থাকবে না।
ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়ে বলেন,বারবার প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা পাননি।স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভিজে কাপড়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় দোকানদার আবদুল খালেক বলেন,প্রতিদিন আমাদের দোকানের সামনে পানি জমে থাকে।ক্রেতারা আসতে চায় না।বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।
একই কথা বলেন এনাম নাহার এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার,আমাদের কলেজে যেতে ভয় লাগে,কখন পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে যাই।পানি আর কাদার মধ্যে নাকাল অবস্থা।
এবিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)রিগ্যান চাকমা বলেন,সরকারি খাল বা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও খাল উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দরকার বলে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।শুধু সাময়িক সংস্কার নয়,জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে,অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ,খাল পুনঃখনন, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি। না হলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সন্দ্বীপবাসীকে একই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হবে।