এক লেবুর দাম ২০ টাকা

রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারিতে অবশ্যই থাকা চাই লেবুর শরবত।শুক্রবার লেবুর ডজন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা।তাতে একটি লেবুর দাম পড়ে ২০ টাকা।পাশাপাশি বেগুন,শসা,করলা,কাঁচামরিচ,কুমড়োসহ অন্যান্য শাক-সবজি ও মাছের দামও বেশ বাড়তি।বেড়েছে পাকা কলার দামও।শুক্রবার(২৪ মার্চ)সকালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাজারসহ বিভিন্ন বাজারগুলো ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।

রমজান মাসে মানুষ কিছু পণ্য কিনতে ‘বাধ্য’ থাকায় এসব পণ্যের দাম যতই বাড়ানো হোক না কেন,এগুলো মানুষ কিনবেই।আর ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগায় দেশের চক্রবদ্ধ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।মজুত করে বিভিন্ন দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়।এর বড় একটা প্রভাব পড়ে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ওপর।এ আয়ের মানুষগুলো তখন খাবারের তালিকায় কাটছাঁট শুরু করে।

বহদ্দারহাট এলাকায় বসবাস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল আলম।তিনি জানান,এবারের রমজানে খাবারের তালিকা থেকে অনেক কিছু বাদ দিতে হচ্ছে।তিনি যে পরিমাণ আয় করেন,তা দিয়ে চাইলেও বাড়তি কিছু খাওয়া সম্ভব না বলে জানান।

তিনি বলেন,যে টাকা স্যালারি পাই তা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছি।তবে এই আয়ের মধ্যে গত বছর মোটামুটি ভালোভাবে চলতে পেরেছিলাম।কিন্তু এবার যে হারে সবকিছুর দাম বেড়েছে,এতে চাইলেও অনেক কিছু ইফতারি আর সাহরিতে খেতে পারব না।

সাইফুল আলম বলেন,গত বছর ইফতারিতে যেমন কয়েক ধরনের ফল,একটু ভালো মানের খেঁজুর,তরমুজ রাখতে পেরেছিলাম।কিন্তু এবার আর তা হবে না।এখন নিম্নমানের খেঁজুরই আগের ভালো মানের খেঁজুরের দামের সমান।তারপর তরমুজের দাম তো বেড়েই চলেছে। একটা তরমুজ কিনতে গেলেই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা চলে যাচ্ছে।এভাবে প্রত্যেকটা জিনিসেরই দাম বাড়তি থাকায় এবার অনেক ফলমূল বাদ দিয়েছি তালিকা থেকে।

সাহরিতেও অনেক কাটছাঁট করতে হয়েছে জানিয়ে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন,আগে দেখা যেত রমজানের পুরো মাসের মধ্যে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার গরুর গোশত খেতাম।আর বাকি দিনগুলো মাছ-মুরগি তো থাকতই।কিন্তু এবার গরুর গোশতের যে দাম,তাতে বড়জোর একবার বা দুবার পুরো মাসে খেতে পারব কি না তাই ভাবছি।আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষদের ভরসা ছিল ব্রয়লার মুরগি, সেটাও চলে গেল অনেকটা হাতের নাগালের বাইরে।

বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে,ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে।বেগুনি আর আলুর চপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বেসন।বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা আর খেসারি ডালের বেসন ১০০ টাকা কেজি।মুড়ি ৮০ টাকা কেজি,বেগুনের দাম গত সপ্তাহের থেকে ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা,লেবুর হালি ৪০-৪৮ টাকা,খোলা পোলাওয়ের চাল ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাছের দাম কিছুটা কমেছে।আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা,যা গত সপ্তাহেও ৩০০ টাকার বেশি ছিল।এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা।পাঙাশ মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।দাম বাড়াতে বিক্রি কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে,গত সপ্তাহের তুলনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি মাংসের দামে।হাড়সহ গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা,খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা আর বকরির মাংস ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে মুরগির দামেও পরিবর্তন নেই।সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি।ডিমের হালি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের(টিসিবি)তথ্য অনুযায়ী,গত বছর রোজায় মোটা চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে,চিকন চাল ৬০ থেকে ৭০,লখোলা আটা ৩৪ থেকে ৩৬,রিফাইন্ড সয়াবিন তেল ১৫২ থেকে ১৫৮,পাম অয়েল ১৪৩ থেকে ১৪৬,মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫,চিনি ৭৮ থেকে ৮০,আলু ১৬ থেকে ২০,পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ এবং লবণের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি।

তথ্য থেকে জানা যায়,এবারের রোজায় মোটা চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি,চিকন চাল ৬০ থেকে ৭৫,আটা ৫৫ থেকে ৫৮,রিফাইন্ড সয়াবিন অয়েল ১৬৮ থেকে ১৭২,পাম অয়েল ১২৫ থেকে ১৩০,মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫,চিনি ১১৫ থেকে ১২০,আলু ১৬ থেকে ২০,পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ এবং লবণের দাম নির্ধারণ করা আছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা কেজি।

এতে দেখা যায়,গত এক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে অনেকাংশে,যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনযাত্রাকে আরেকটু কঠিন করে দিয়েছে।

এদিকে রমজানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার(২৩ মার্চ)চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বিআরটিসি এলাকার ফলমন্ডিতে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।এ সময় নানা অনিয়মের দায়ে বিভিন্ন দোকানিকে মোট ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের নেতৃত্বে বাজারে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নির্ধারিত মূল্যের বাইরে বিক্রিসহ অন্যান্য পণ্য সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে কী না তা তদারকি করা হয়েছে।বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Comments (০)
Add Comment