ইউপি নির্বাচন: মাঠ কাপাচ্ছেন অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী

 কেশবপুর যশোর প্রতিনিধিঃ আগামী ৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলার অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ কাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়নের আশায় প্রার্থীরা ঢাকাতে অবস্থান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন।

১১ ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বৃহত্তর এ উপজেলায় স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীরাই অধিকাংশ ইউনিয়নে জয়লাভ করেছে। গত ২৭ নভেম্বর কেশবপুর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদসহ সারা বাংলাদেশের ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সকল প্রার্থীরা তাদের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমে উঠেছে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচারণা। রং বেরংয়ের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে বাজার, পাড়া, মহল্লা। নেতাদের দৃস্টি আকর্ষণ করতে ১৬ ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্র উপজেলা সদর ও পৗর এলাকায়ও চলে এসেছে বাহারী প্রচারের রেশ।
অধিকাংশ প্রার্থীরা প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, নির্বাচনীসভা করেছেন। ওয়াজ মাহফিল, জানাজা নামাজ, পূজা-পার্বন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অনুরূপ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইউনিয়নবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ আর নিজের পক্ষে অধিক জনসমর্থন প্রদর্শন করতে মাঝে মধ্যে কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে মোটরসাইকেল বহরযোগে গণসংযোগ করতেও দেখা যাচ্ছে। ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখেও চলছে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কখনো কখনো আবার চায়ের আড্ডায় বা রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ দিক, জনসেবা, যোগ্যতার মাপকাঠি আর দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কেশবপুরের ১১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে অর্ধশতাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
তারা হলেন, ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আসিনুর রহমান আনিস, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক বাবুল বিশ্বাস, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ওহেদুজ্জামান মিন্টু ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম খান সুজন, নুরুল ইসলাম ও আব্বাস আলী।


সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, শাহাদাৎ হোসেন, আমানত আলী ও শিক্ষক জাফর ইকবাল।
মজিদপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম সরোয়ার, মাও. আব্দুল হালিম, মনোজ তরফদার, হুমায়ন কবির পলাশ ও রফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান শামছুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক বি এম ইব্রাহীম হোসেন, যুগ্ম-আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক রবিউল ইসলাম, ফারুক হোসেন ও খলিলুর রহমান।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আব্দুল গফ্ফার, আব্দুল্লাহ আল নুর আহসান বাচ্চু ও আব্দুল কাদের বিশ্বাস।


কেশবপুর সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়, জাহাঙ্গীর হোসেন, দফতর সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ, সদস্য শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেহেনা ফিরোজ, আবু নঈম ও রিপন হোসেন।
পাঁজিয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ আল বাহার, মকবুল হোসেন মুকুল, সমাজসেবক জসিম উদ্দিন।
সুফলাকাটি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার আব্দুস সামাদ, সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগনেতা মহব্বত হোসেন, গাউসুল আজম তুহিন, আজাহারুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান।
গৌরিঘোনা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, রবিউল ইসলাম রবি, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহবায়ক মাসুদুর রহমান, আলিমুজ্জামান রানা।
সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন দফাদার, জি এম হোসেন, উত্তম ঘোষ, আবু বক্কার সিদ্দিক, মিজানুর রহমান মিল্টন ও জয়নাল হোসেন।
হাসানপুর ইউনিয়নে শহিদুজ্জামান শাহীন, জি এম আলতাফ হোসেন ও যুবলীগনেতা তৌহিদুর রহমান।
এবারের ইউপি নির্বাচনে যেসকল প্রার্থী মাঠে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন প্রার্থী কোনো দলের ব্যানারে না থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।


এছাড়াও কয়েকজন প্রার্থী সরাসরি বলছেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্যই চেষ্টা করছেন, মনোনয়ন না পেলে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন না।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার বজলুর রশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ০৫ জানুয়ারি পঞ্চম দফায় কেশবপুরের ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমাদানের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর, বাছাই ১২ ডিসেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ১৯ ডিসেম্বর। প্রতDক বরাদ্দ ২০ ডিসেম্বর। ভোট ৫ জানুয়ারি।

Comments (০)
Add Comment