উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে পদ-প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে,দুই সন্দ্বীপির নাম নেতাকর্মীর মুখে মুখে।

দীর্ঘ দেড় যুগ পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন।২৯ মে এই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্র।আর এ নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।সরব হয়েছেন দীর্ঘদিন দলের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা নেতাকর্মীরাও।

 

তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন। শেষ মুহুর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে।আবার কেউ কেউ ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে।

 

দলটির কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়,যোগ্যতায় যারা এগিয়ে থাকবেন-তারা শীর্ষ পদ পাবেন।সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দলের প্রতি নিবেদিতরাই পদে আসবেন। বিতর্কিতরা কোনোভাবেই যেন পদে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় একপ্রকার হতাশ হয়ে পড়েছিলেন উত্তর জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পদপ্রত্যাশীসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছিল।তবে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে নতুনভাবে চাঙ্গা হয়েছেন ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা।

 

প্রায় ১৯ বছর আগে উত্তর জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।৭২ সদস্যবিশিষ্ট মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির সভাপতি এস এম আল মামুন ইতিমধ্যে চলে গেছেন আওয়ামী লীগে।বর্তমানে তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান।

 

এছাড়াও কমিটিতে থাকা সাতজন সহ-সভাপতিও চলে গেছেন মূল দলে।আবার কমিটির একাধিক সদস্য এখন যুবলীগে থাকতে চান না বলে জানা গেছে।তারা সবাই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী।

 

তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম ২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহম্মদকে সভাপতি ও এস এম শফিউল আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন।এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও গত ১৯ বছরেও কমিটি হয়নি।

 

ব্যক্তিগত কারণে সভাপতি সৈয়দ মফিজ উদ্দীন আহম্মদ পদত্যাগ করলে কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সহ-সভাপতি জাফর আলম।২০১৩ সালের দিকে ওমর ফারুক যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সহ-সভাপতি এস এম আল মামুনকে সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে পুরাতন কমিটি বহাল রাখা হয়।

 

গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী নেতাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়।এতে সভাপতি পদের জন্য ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ২২ জনের আবেদন জমা পড়ে।এসব আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

 

এছাড়াও গত ১০মে আওয়ামী যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত অন্যান্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়।আগামী ১৪মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হবে।

 

উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম,সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বপন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন,নুরুল মোস্তফা মানিক,কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়(চবি)ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাছির হায়দার বাবুল।

 

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন,উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মিজানুর রহমান মিজান, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব,এস এম আল নোমান,কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও সিটি কলেজের সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন,রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ,রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামসুদ দোহা সিকদার আরজু,চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রা্প্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ,চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী ও উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম প্রমুখ।

 

উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন দৈনিক জাগ্রত চট্টগ্রামকে বলেন,আজকের যুবলীগ সকল অনৈতিক ও অপরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবদমন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে চলেছে।জেলা,উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অসংখ্য মামলায় বার বার গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমার অতীত ত্যাগ,শ্রম ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করবেন বলে আমি মনে করি।

 

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী উত্তর জেলা যুবলীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মিজানুর রহমান মিজান দৈনিক জাগ্রত চট্টগ্রামকে বলেন,ছাত্র রাজনীতি থেকে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্য ছিলাম এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসময়ে উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হয়ে পুলিশী নির্যাতন উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলাম,যুবলীগ কে সংগঠিত করতে কাজ করে আসছি,তাই আসন্ন ২৯শে মে সন্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন আশাকরি মানবিক যুবলীগ আমার সাংগঠনিক ও মানবিক কাজগুলোর মূল্যায়ন করবেন।

Comments (০)
Add Comment