চট্টগ্রামের রাউজানে পুকুর সেচে মিলল ‘থানা থেকে লুট’ হওয়া চায়নিজ রাইফেল।

চট্টগ্রামের রাউজানে এক বিএনপি কর্মীকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবকের তথ্যের ভিত্তিতে পুকুর সেচে একটি চায়নিজ রাইফেল,একটি শটগান ও সাতটি গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া এসব অস্ত্র-গুলি গত বছরের ৫ আগস্ট রাউজান থানা থেকে লুট হয়েছিল।

সোমবার(১০ নভেম্বর)বেলা দুইটার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বাজারসংলগ্ন আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির পেছনের পুকুর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়,উদ্ধার করা অস্ত্র-গুলি প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়িয়ে পুকুরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন নোয়াপাড়ার চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ির মুহাম্মদ শওকতের ছেলে সাকিব(২০) ও মুহাম্মদ সোবহানের ছেলে শাহেদ (২৫)।সোমবার ভোরে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সাকিব ও শাহেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এর আগে ভোরেই অভিযান চালিয়ে ৪টি বিদেশি পিস্তল,১টি রিভলবার,৪২টি রাইফেলের গুলি,১৯টি পিস্তলের গুলি,শটগানের ১৬টি কার্তুজ,৭টি খালি ম্যাগাজিন,১টি রকেট ফ্লেয়ার,২টি রামদা,৫০টি ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে।এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে ৯৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিম হত্যা মামলায় সাকিব ও শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের মাত্র ২০০ মিটার দূরে আবদুল হাকিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী।তিনি রাউজানে নিজের খামার থেকে চট্টগ্রাম নগরে ফিরছিলেন।

মোটরসাইকেলে আসা ওই অস্ত্রধারীদের গুলিতে আবদুল হাকিমের গাড়িটির চালক মুহাম্মদ ইসমাইলও (৩৮) আহত হন।পুলিশ জানায়আবদুল হাকিমের শরীরে ১০টি গুলির আঘাতের চিহ্ন এবং গাড়িতে ২২টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।ঘটনার দুই দিন পর আবদুল হাকিমের স্ত্রী তাসফিয়া আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।

এই হত্যা মামলাটিতে পুলিশ গত সপ্তাহে আবদুল্লাহ খোকন,মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান,মুহাম্মদ মারুফ ও মুহাম্মদ সাকলাইন নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল।সে সময় একটি একনলা বন্দুক ও একটি এলজি উদ্ধার হয়।ওই আসামিদের তথ্যেই সাকিব ও শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান,পুকুর সেচে যে দুটি অস্ত্র এবং গুলি উদ্ধার করা গেছে,সেগুলো গত বছর রাউজান থানা থেকে লুট করা হয়েছিল।

অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।তিনি বলেন,রাউজানের আবদুল হাকিম হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত মোট ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।তাঁরা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।ঘটনার পরিকল্পনাকারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম আরও বলেন,রাউজানে মোট ছয়টি দল সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে।তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,পুলিশ সন্ত্রাসী একসঙ্গে থাকতে পারে না। হয় পুলিশ থাকবে,না হয় সন্ত্রাসী থাকবে।

Comments (০)
Add Comment