শীতে চট্টগ্রামে বাড়ছে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ।

শীত আসতেই চট্টগ্রামে বাড়ছে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগ।নিউমোনিয়া,সর্দি-কাশি,শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছেন শিশুরা। এতে উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবক ও চিকিৎসকদের মধ্যে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ(চমেক)হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিনই ভর্তি থাকে আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী।সর্বশেষ সোমবার(৮ ডিসেম্বর)হাসপাতালটির শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে ভর্তি ছিল ২৭৬ জন।যার মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয় ৫৯ জন শিশু।অধিকাংশ শিশুই নিউমোনিয়া,শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত জটিলতায় ভুগছে। এছাড়া গত সাত দিনে ঠাণ্ডাজনিত কারণে মারা গেছে অন্তত ৭ জন শিশু।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত সাত দিনের তথ্যে দেখা যায়— ১ ডিসেম্বর হাসপাতালে ৬৬ জন শিশু ভর্তি হয়, যার মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগী ছিল ২২ জন। একইভাবে ২ ডিসেম্বর ভর্তি হয় ৬১ জন, যার মধ্যে শীতজানিত রোগী ছিল ২২ জন। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর ৫৬ জন রোগীর বিপরীতে ১৬ জন ঠাণ্ডাজনিত রোগী, ৪ ডিসেম্বর ৫৬ জনের বিপরীতে ৩০ জন ঠাণ্ডাজনিত রোগী। এছাড়া ৫ ডিসেম্বর ৪১ জনের বিপরীতে ১৩ জন, ৬ ডিসেম্বর ৮১ জনের মধ্যে ২৩ জন এবং ৭ ডিসেম্বর ৫৮ জনের মধ্যে ২৬ জন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়।

শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মূসা জানান, শীত মৌসুমে শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ফলে নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। দেরি করে হাসপাতালে আনা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। তাছাড়া, ঠান্ডাজনিত এ রোগগুলো মানুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এজন্য ঠান্ডা, ধুলোবালি ও ধোঁয়াকে এড়িয়ে চলতে হবে। সব সময় গরম কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নবজাতকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্তকে খাবারের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ঘরে বসে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। সময়মতো চিকিৎসা নিলে অধিকাংশ শিশুকে সুস্থ করা সম্ভব। আমাদের দেশে অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া বাড়ে। শিশুদের যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে ব্যাপারে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। নিউমোনিয়া ছাড়াও এসময় শিশুদের হাঁপানি থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাতমোজা, পা মোজা পরিয়ে রাখতে হবে।

ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় এক বেডে একাধিক শিশুকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলে জানান কর্তব্যরত নার্সরা।

রোকসানা আক্তার নামে চট্টগ্রামে আনোয়ারা থেকে আসা আবিদ নামে এক শিশুর মা জানান, শ্বাসকষ্ট হওয়ায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে আমার ছেলে কিছুটা সুস্থ আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, দুই একদিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারবো।

চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন—নবজাতক ও শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখা, গরম কাপড় পরানো, বুকের দুধ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া। শীত আরও বাড়লে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Comments (০)
Add Comment