
সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে জমি দখলের মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।হোসনে আরা বেগম নামে এক নারী এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।২ আগস্ট (মঙ্গলবার)দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাক প্রতিবন্ধী হোসনে আরা বেগমের উপস্থিতিতে তার পক্ষে লিখত বক্তব্যে তার কণ্যা রহিমা বেগম বলেন,গতকাল ১ আগস্ট (সোমবার)মাজাহারুল ইসলাম নামে একজন সংবাদ সম্মেলন করে দাবি তুলেছেন মিজানুর রহমান মিজান এবং তার ভাই মাকসুদুর রহমান তাদের জমি অবৈধভাবে দখল করেছে।আসলে তাদের এই বক্তব্য অসত্য।বিএস খতিয়ানের ২০২১২ দাগের ওই জমি ১৯৮০ সালে আমার বাক প্রতিবন্ধী মা হোসনে আরা বেগমকে তার ভাই-বোনেরা রেজিষ্ট্রি করে দান করেন।পরে ২০১৬ সালে আমরা মিজানুর রহমান ও মাকসুদুর রহমানের নিকট জমিটি সাফ কবলায় বিক্রি করি।এরপর মিজানুর রহমান ও মাকসুদুর রহমান তাদের নামে আলদা খতিয়ান সৃজন করে খাজনা প্রদান করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হোসনে আরা বেগম,তার কণ্যা রহিমা বেগম,জামাতা নুরজামান বেচন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়,মিজানুর রহমান মিজান উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার পর থেকে যুবলীগের পদ ঠেকাতে প্রতিপক্ষ একটি কু-চক্রী মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন তথ্য অপপ্রচার চালিয়ে তার জনপ্রিয়তা ঠেকানো যাবেনা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,মজহারুল ইসলাম জামাত নেতা।তাকে দিয়ে মার্শালসহ কয়েকজন মিলে মিজনুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনটি ছিল সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত।আমরা এহেন মিথ্যা সাজানো ও ষড়যন্ত্রমুলক সংবাদ সম্মেলনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নিম্নে সংবাদ সম্মেলনটি পুরো দেওয়া হলঃ
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,আসসালামু আলাইকুম,আমি রহিমা বেগম,হোসনে আরা বেগমের একমাত্র কন্যা। আমার মা একজন বাক প্রতিবন্ধী,তিনি কথা বলতে পারেন না বিধায় তার পক্ষে আপনাদের সাথে কথা বলতে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছি।
সাংবাদিক ভাইয়েরা,আমার মা বাক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আমার নানা জনাব আচিদুল্লাহ প্রকাশ আজিজুল্লাহ আমার মা হোসনে আরা বেগমকে মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার খা রাস্তা সংলগ্ন মাইটভাঙ্গা মৌজার এসএ-৩২০ নং খতিয়ানের এসএ-৫৭৯৫ নং দাগের বিএস ১৪৬ নং খতিয়ান হতে আগত ২০২১২ নং দাগের ১৯ শতক ভূমি মৌখিকভাবে দান করে সন্তানদের অছিয়ত করে যান যাতে রেজিস্ট্রি করে আমার মাকে এ সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।এর কিছুদিন পর আমার নানা মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুর পর তার সন্তানরা পিতার অছিয়ত মোতাবেক আমার প্রতিবন্ধী মা হোসনে আরা বেগমকে ০৯/০৯/১৯৮০ইং তারিখে রেজিস্ট্রি দানপত্র করেন।দানপত্রে স্বাক্ষর করেন আমার মামা সাহেব উল্ল্যা,কামাল উদ্দিন এবং আমার খালা দেলাপ রোজ বেগম,আনোয়ারা বেগম,মোমেনা বেগম ও শামীমা আক্তার।উক্ত দানপত্রে হাকিমের সম্মুখে স্বাক্ষর করেন তারা।এরপর থেকে জায়গাটি আমার মায়ের দখলে ছিল।
২০২১ সালে নির্বাচনের পর ওই জমিতে ফসল আনতে গেলে আমার মায়ের চাচাতো ভাই মাজহারুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হোসেন ও তার ছেলে সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন সহযোগী মিলে আমাদেরকে জমি দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।একইসাথে আমার প্রতিবন্ধী মাকে ব্যাপক মারধর করে ফেলে রেখে যায় তারা। পরে এলাকাবাসী আমার মায়ের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে।প্রতিপক্ষ মাজহারুল ইসলাম গং সন্ত্রাসী প্রকৃতির ও প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা আইনী ব্যবস্থা নিতে গেলেও প্রতিকার পাইনি।উল্টো হুমকি, ধমকি ও অত্যাচারের শিকার হতে থাকে। এ বিষয়ে আমার এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের মুরুব্বিগণ অবগত আছে।গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার তাদের সর্তক করলেও তারা বার বার একইরকম অত্যাচার করতে থাকে।তারা আমাদের নিঃস্ব করতে আমার স্বামীকে আনোয়ারার এক মহিলার সঙ্গে বিবাহের ভূয়া কাবিন সৃষ্টি করে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তিনমাস জেল খাটান।অথচ আমার স্বামী কখনো আনোয়ারা তো দূর থাক,চট্টগ্রাম শহরেই এর আগে আসেনি।জায়গা দখলের জন্য মাজহারুল ইসলামের যোগসাজেশ এ মামলা করে আমার মাকে ঘর ছাড়া করার এ ষড়যন্ত্র করা হয়।
বাদি মহিলা এ যাবৎ আর আদালতে না আসায় এখনো সেই মামলা আদালতে ঝুলছে।তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে যাচ্ছিল।আমাদের জীবন জীবিকায় বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্থ করছিল।পরবর্তী সময়ে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আর্থিক কারণে বাধ্য হয়ে আমরা উক্ত জমি বিক্রির জন্য সিদ্ধান্ত নিই।পরে জায়গা কিনতে আসা একাধিক লোকের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর ২০১৬ সালে মিজানুর রহমান ও মাকসুদুর রহমানের কাছে ১৮ শতক জমি সাফ কবলায় আমার মা বিক্রি করেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় হতে পাঠানো একটি নোটিশের মাধ্যম জানতে পারি, এ জমি দাবি করে শামসুন নাহার,স্বামী মুকুল হোসেন একটি মামলা করেছেন।মামলায় পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দুই পক্ষের দলিলাদি পর্যালোচনা ও সরোজমিনে যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেন জমির প্রকৃত মালিক আমার মা।তাই পরিমাপের পর এলাকাবাসীকে স্বাক্ষী রেখে জমিটি আমাদের বলে বুঝিয়ে দেন।
পরবর্তীতে মাজহারুল ইসলাম বাদি হয়ে জায়গাটি নিজের দাবি করে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের দ্বিতীয় আদালতে দু’টি মামলা করে।এরমধ্যে একটিতে নিষেধাজ্ঞা মামলা অপরটি ডিগ্রি পাওয়ার মামলা। নোটিশ পাওয়ার পর আমরা উপযুক্ত দলিলপত্র সহকারে জবাব দেয়াতে নিষেধাজ্ঞা মামলাটি আদালত খারিজ করে দেয়।দ্বিতীয় মামলাটি বর্তমানে সন্দ্বীপ সহকারি জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়ে বিচারাধীন রয়েছে।
এমতাবস্থায় গত ০১ আগস্ট ২০২২ ইং সোমবার আমরা জানতে পারি মাজহারুল ইসলাম, শামসুন নাহার বেগম ও তাদের সঙ্গী মার্শাল, শাহাদাতসহ একটি পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন,আমার মায়ের বিক্রিত জায়গাটি খরিদদার মিজানুর রহমান ও মাকসুদুর রহমান জোরপূর্বক দখল করেছেন যা পুরোপুরি সাজানো মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।কারন আমার মা ওই জমিটি বিক্রির পর মিজানুর রহমান ও মাকসুদুর রহমান ওই জমির খতিয়ান সৃজন পূর্বক নিয়মিত খাজনা প্রদান করে আসছেন।
ওই জমির বিক্রেতা হিসেবে আমার মা ও আমি মাজহারুল ইসলাম গাংয়ের সংবাদ সম্মেলনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। পাশাপাশি প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, মাজহারুল ইসলাম এলাকায় পূর্বেও নিজের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো।বর্তমানে বহু মামলার আসামী সন্দ্বীপের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও জলদস্যু সর্দার খ্যাত মার্শাল প্রকাশ জলদস্যু মার্শালসহ পুনরায় এলাকায় অশান্তি, ভূমি দখল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শাহাদাত নিজেও একজন চিহ্নিত ভূমি দস্যু হিসেবে এলাকায় পরিচিত।উল্লেখ্য,এই জমির বিষয়ের তদন্তের স্বাক্ষ্য দেওয়ায় শাহাদাত ও মার্শাল আমাকে ও হুমকি দিয়ে আসছে।
আমরা এ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী,সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকলের প্রতি জাতির বিবেক সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জামাই।
কৃতজ্ঞতাসহ,
রহিমা বেগম