সন্দ্বীপে বন্ধ হয়নি চুরির ঘটনা,পুলিশ নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রতিটি বাজারে সিসি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক লাগানোর সিদ্ধান্ত।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে একের পর চুরির ঘটনা ঘটে চলছে । গত এক মাসে অন্তত ৩৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ গত সোমবার দিবাগত রাতে সন্দ্বীপ পৌরসভার সেনেরহাট এলাকায় সেলিম অ্যাণ্ড সন্স নামে একটি রড-সিমেন্ট ও মুদি দোকানে ঢুকে লোহার লকার ভেঙ্গে অন্তত তিন লাখ টাকা নিয়ে চোরেরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত একমাসে এতগুলো চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নির্বিকার।
এদিকে এতগুলো চুরির ঘটনার মধ্যে মাত্র দুটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নানা ঝামেলার কারণে ভুক্তিভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে অনিহা দেখাচ্ছেন। তাছাড়া চুরির মামলায় আসামিকে জেলে পাঠানো হলেও কয়েকদিন পর জামিনে বের হয়ে বাদির উপর নানা ঝামেলার সৃষ্টি করে বলে জানা গেছে।
পুলিশের দাবি, অভিযোগ দেওয়া দুটি ঘটনায় সন্দ্বীপ পৌরসভার পৌরভবনের পেছনে শিবলু নামে এক চোরের বাড়ি থেকে মালামাল উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি শিবলুর পুকুরে ডুবানো অবস্থায় চোরায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ভ্যানগাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের টের পেয়ে শিবলু পালিয়ে গেছে।
চুরি বাড়তে থাকায় সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গত ৩ জানুয়ারী ৩৫টি চুরির বিষয়ে সন্দ্বীপ থানায় লিখিতভাবে অবহিত করেন। কিন্তু এরপরেও চুরি বন্ধ হয়নি।
গতকাল বুধবার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় চুরির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা। এসময় তারা পুলিশের টহল বাড়িয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করেন।
মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম বলেন, চুরির কারণে প্রবাসীরা বেশ অতিষ্ট। চুরি কোনমতেই ঠেকাতে পারছে না পুলিশ। গতকালের আইনশৃঙ্খলা সভায় তিনি বলেছেন, কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ চোর গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু গ্রেপ্তার চোরেরা কয়েকদিন পর জেল থেকে জামিনে ফিরে এসে আবারও এলাকা অতিষ্ট করে তুলছে। তাই তাদের দীর্ঘদিন জেলে কিভাবে রাখা যায়, সেবিষয়ে ওসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ সন্দ্বীপের জনতা মার্কেট ৫টি, মগধরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সরকারি পুকুর পাড় ও আদর্শ মার্কেট একসঙ্গে ১০টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন বুধবার দিবাগত রাতে সারিকাইত ইউনিয়নের শিবের হাটের দক্ষিণ মাথা থেকে বলির পোল পর্যন্ত ৮টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এর পর ৩ জানুয়ারী রাতে সন্দ্বীপ থানা কার্যালয় এলাকায় একটি দোকান, আবুল কাশেম মহিলা কলেজে চুরির চেষ্টা। এর কয়েকদিন পর রহমতপুর এলাকায় একাধিক দোকানে চুরি হয়। এরমধ্যে কয়েকটি অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চুরি হয়।
সারিকাইত ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, শিবেরহাটে চুরির ঘটনার খবর পেয়ে তখন পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলামের দাবি, চুরির ঘটনা ৩০-৩৫টা বলা হলেও ঘটনা এতবেশি নয়। তবে দুয়েকটি ঘটনা হচ্ছে না যে, তা নয়। পুলিশ ইতোমধ্যে দুটি চুরির ঘটনায় মালামাল, অটোরিকশা, ভ্যান উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারও করেছে একজনকে। চুরির মূল হোতা শিবলুকে গ্রেপ্তার করতে পারলে চুরির ঘটনায় আরও কে কে জড়িত তা বের করা যেত। তারা শিবলুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওসি বলেন, তাদের জনবল ও যানবাহন সংকট আছে। এরমধ্যে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। তবুও তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। সেনেরহাট, শিবেরহাট ও উপজেলা এলাকায় স্থায়ীভাবে পুলিশ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বড় বড় বাজারগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত। শিবেরহাট এলাকায় একটা মিনি শহর। সেখানে আরও নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানোর জন্য তিনি ইতোমধ্যে মাইটভাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে বলেছেন।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, গতকালের আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রতিটি বাজার সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও নিরাপত্তাপ্রহরীদের আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া পুলিশের টহল আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চোরদের ধরতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাজারে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্তটি নোটিশ আকারে প্রতিটি বাজার কমিটির কাছে পাঠানো হবে জানান তিনি।