শার্শা-বেনাপোল পুটখালী সাদিপুর সীমান্তে মাদকের জমজমাট ব্যবসা রাঘববোয়াল ধরাছোঁয়ার বাইরে

নজরুল ইসলাম: তারিখ ১৩!১১।২০২০রোজ শুক্রবার শার্শা-বেনাপোল সীমান্তবর্তী গ্রাম পুটখালী, ভবের বের দৌলতপুর, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, বাহাদুরপুর, দাউদ খালী, রুদ্রপুর, গোগা, হরিশ্চন্দ্রপুর, অগ্রভুলোট ও পাঁচভুলোট সীমান্ত গলিয়ে অবাদে মাদক দ্রব্য আসছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। মাদক নিয়ন্ত্রনে প্রশাসন জিরো টলারেন্স ঘোষনা করলেও, অসাধু কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহযোগীতায় চলছে দেদারসে মাদকের কারবার। আর মাদকের গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিদিন বিপুল পরিমানের মাদক পাচার হয়ে আসলেও ধরা পড়ছে সীমিত। মাদকের ছোট ছোট চালান সহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বহনকারী আটক হলেও, ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা ও ঘাটমালিকরা। এ এলাকায় মাদক পাচারের সাথে জড়িত থাকায় সম্ভবত ৫/ ৭ জন নারী ও ১ শিশু সহ ২৫/৩০জনকে গ্রেফতার করেছে বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা। সেই সাথে মাদক পাচারের কাজে ব্যবহৃত ৫/৬ টি মোটর সাইকেল ও ২ টি ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে শার্শার দক্ষিন বুরুজ বাগান, নিউ কাতপুর, দাউদখালী, রুদ্রপুর, গোগা হরিশ্চন্দ্রপুর, অগ্রভুলোট, পাঁচভুলোট, সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমানে মাদকদ্রব্য আসছে বাংলাদেশে। এছাড়া কলারোয়া সীমান্তের চান্দুড়ীয়া, সুলতানপুর ও চন্দনপুর সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করছে দক্ষিন শার্শার মাদকের গডফাদাররা। মাদক পাচারকে কেন্দ্র করে বাগআঁচড়া, কোটা, কায়বা, রাড়ীপুকুর ময়নার বটতলা, ইছাপুর, মহিষাকুড়া, টেংরা, সামটা, আমতলা (সাতমাইল) ও জামতলা এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। বাগআঁচড়া পুলিশের অভিযানে প্রতিদিন মাদক সহ বহনকারী ধরা পড়লেও মাদকের মালিক পাচারকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। পুলিশ জানিয়েছে বাগআঁচড়া এলাকায় গতমাসে মাদকসহ ২৪/২৫ জন ধরা পড়লেও এরা সকলেই বহনকারী। আটককারীদের ভাষ্য তারা মালিক কে তা জানেনা। সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের মাদকের চালান ধরিয়ে দেয়। তাদেরই লাইনম্যান দ্বারা গন্তব্যে পৌঁছে দেয় এবং তাদের দ্বারা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে গডফাদাররা। পুলিশের হাতে আটক হওয়া মাদক বহনকারী রানা জানায়, আমরা প্রতি বোতল ফেনসিডিল দুরুত্ব ভেদে ২৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বহন খরচ পাই। বাগআঁচড়ার মাদক সেবনকারী শাহীন জানান, ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে প্রতি বোতল ১৮০ টাকায় খরিদ করলেও, তারা বোতল প্রতি ফেনসিডিল বাগআঁচড়ায় ৬ শ’ টাকায় বিক্রি করে। এলাকার সচেতন মহল জানায়, করোনাকালে মাদকের কারবার দ্বিগুন হারে বেড়েছে। আগের তুলনায় বহুগুনে দক্ষিন শার্শায় মাদকের কারবার ও সেবনকারী বেড়েছে। যা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে এলাকার অভিভাবকরা। প্রতিদিন দক্ষিন শার্শার বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক অচেনা বাইকারদের দেখা যায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের আনাগোনা চলে দক্ষিন শার্শার দক্ষিন বুরুজ বাগান, নিউ কাতপুর, দাউদখালী, রুদ্রপুর, গোগা হরিশ্চন্দ্রপুর, অগ্রভুলোট, পাঁচভুলোট, বাগআঁচড়া, কোটা, কায়বা, রাড়ীপুকুর ময়নার বটতলা, ইছাপুর, মহিষাকুড়া, টেংরা, সামটা, আমতলা (সাতমাইল) ও জামতলা এলাকায়। বাগআঁচড়ার যুবলীগ নেতা আব্দুল হাই সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মহিশাকুড়ার শাহাবাজ আলী, মোস্তাজুল মোড়ল ওরফে মুন্না, বাবলু মিয়া, দক্ষিন বুরুজ বাগান গ্রামের জয়নাল ও আয়লান বক্স, রজনী আক্তার, রুবেল, শহিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, বারোপোতা গ্রামের ইয়াব আলী, কন্যাদহের শফিয়ার রহমান শফি, হাসানুর বদ্দি, জদ্দিন হোসেন, টেংরা গ্রামের কামাল হোসেন, সামটা গ্রামের খোকন, রবিউল ইসলাম, পশ্চিম কোটা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, জাহান আলী সরদার, শরিফুল ইসলাম (ড্রাইভার), লুৎফর রহমান, বাগআঁচড়া কলেজ রোডের নজরুল ইসলাম, রানা, গাজীর কায়বা’র রফিকুল ইসলাম, দাউদখালীর ডাবলু হোসেন, রুদ্রপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, পাড়ের কায়বা গ্রামের আমজাদ হোসেন, কালিয়ানী গ্রামের আব্দুল হামিদ সহ শতাধিক মাদক গডফাদার রয়েছে দক্ষিন শার্শায়। যারা প্রত্যেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত। তাদের নামে ডজন ডজন মাদক মামলা থাকলেও, প্রত্যেকে রয়েছে পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে। বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ উত্তম কুমার বিশ্বাস জানান, মাদক নিয়ন্ত্রনে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। এবং শক্ত হাতেই এলাকার মাদক চোরাচালান নির্মুল করা হবে। এ ব্যাপারে দক্ষিন শার্শার গোগা ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাদক নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তে মাদক বিরোধী প্রচারনা সহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেও কোন প্রকার দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থ্যার সদস্যরা মাদক নির্মূলে কাজ করে চলেছে। শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, সামাজিকভাবে সচেতন না হলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। করোনাকালীনএইভাবে মাদকের ব্যবসা বেড়ে যাবে এইটা আমাদের নজর বিহীন সময়ে মাদকের পাচার বেড়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনই মাদকের লাগাম না টানতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পঙ্গু হয়ে পড়বে। মাদক নির্মূলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থ্যা সহ সকলকে এগিয়ে আসা বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

Comments (০)
Add Comment