যশোরের মনিরামপুরে বিয়েতে পুলিশের বাঁধা, হাঁড়িতে করে খাবার পাঠানো হলো বরের বাড়িতে

 মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে পাশাপাশি গ্রামে বাড়ি বর ও কনের। দুই পরিবারের মতেই ঠিক হয়েছে বিয়ের দিনক্ষণ। কনের বাড়ি বরযাত্রী যাওয়ার জন্য প্রস্তুত পাঁচটি মাইক্রোবাস। কনের বাড়িও চলছিলো ৩০০ লোকের রান্নাবান্নার আয়োজন। আনন্দঘন এত আয়োজন পণ্ড হলো পুলিশের তৎপরতায়। কনের বয়স ১৫ বছর হওয়ায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করে দিলো পুলিশ।

পুলিশের ভয়ে বরযাত্রী ঢোকার সাহস পাননি কনের বাড়িতে। অবশেষে কনের বাড়ি থেকে ভ্যানে করে মাংশ ভাত পাঠানো হলো বরের বাড়িতে। সেখানে খেয়েদেয়ে বিদায় হলেন বরযাত্রী।
রবিবার (১২ ডিসেম্বর) যশোরের মনিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের ঘটনাটি ঘটে।
বরের নাম বিপ্লব হোসেন (২৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের মনোহরপুর বিশ্বাস পাড়ার মৃত আহাদ আলীর ছেলে। বিপ্লব পেশায় সাইকেল ব্যবসায়ী।
কনে একই এলাকার হানুয়ার গ্রামের প্রবাসি তৌহিদুল ইসলামের মেয়ে। স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসার ১০ শ্রেণির ছাত্রী সে।
এদিকে বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে মনিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমি আক্তার তার দপ্তরের ক্রডিট সুপারভাইজার শহিদুল ইসলামকে কনের বাড়িতে পাঠিয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পাওয়ার আগে পুলিশ এসে বিয়ে বন্ধ করে দেন। ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি বরপক্ষ আসেননি। কনের বাড়ির আশপাশের লোকজন খাওয়া দাওয়া করছেন। কনের বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার ভ্যানে করে বরের বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, কনে পক্ষ আমাদের লিখিত দিয়েছেন মেয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না। কনের অভিভাবকদের মুচলেকা নিয়ে আমরা চলে এসেছি।
স্থানীয়রা বলেন, মেয়েটির সাথে বিপ্লবের আগ থেকে জানাশোনা ছিলো। পরে পরিবারের মতে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। মেয়েটির বাবা বিদেশে কাজ করেন। এজন্য নানা জমসেদ আলী ও মা খাদিজা খাতুন দায়িত্ব নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। আজ রবিবার দুপুরে মেয়ের বাড়ি রান্নাবান্নার কাজ চলছিলো। ওই সময় রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্র থেকে পুলিশ এসে বিয়ে না দেয়ার জন্য বলেন। বরযাত্রী সেজেগুজে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুলিশ আসার খবর পেয়ে বরপক্ষ ভয়ে আর আসেননি।

রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজমল হোসেন বলেন, বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে আমি হানুয়ার গ্রামে মেয়ের বাড়িতে যাই। মেয়ের নানা ও মা কথা দিয়েছেন তারা এখন মেয়েটির বিয়ে দেবেন না। বরপক্ষকেও নিষেধ করা হয়েছে।
মনিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার বলেন, শুনেছি, পুলিশ বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ করেছে। বিষয়টি খোঁজ নেয়ার জন্য অফিস থেকে লোক পাঠিয়েছি। বাল্যবিয়ে না দেয়ার শর্তে মেয়ের পরিবার লিখিত দিয়েছেন।

Comments (০)
Add Comment