সাংবাদিকের পিঠের চামড়ার সাথে সুরক্ষাটিও জড়িত বললেন বিএমএসএফ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর।

দৈনন্দিন সাংবাদিকদের জন্য কোন না দূ:সংবাদ যেন শোনতেই হচ্ছে। এবার জামালপুরের এসপি সাহেব তার সভাতে না আসায় ওখানকার প্রেসক্লাবের সভাপতি-সেক্রেটারির পিঠের চামড়া তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। দিতেই পারেন! কেননা; পেশাটির মাঝে ছোট-বড়, মূলধারা-কুলহারা, পেশাদার-অপেশাদার, হলুদ-ভুয়া, অসাংবাদিক-কার্ডধারীতে যেন ছেঁয়ে গেছে। অনৈক্যে ভরপুর গোটা দেশের সাংবাদিকরা। এদের মাঝে অনৈক্যের ফলে রিক্সাওয়ালা থেকে খেয়াঘাটের মাঝিদের বকুনিও খেতে হচ্ছে। মার খাচ্ছে,রক্তাক্ত হচ্ছে অহরহ। মিথ্যা-হয়রাণীমূলক মামলারতো যেন শেষ নেই।

এসপি সাহেবের এই হুমকির ভিত্তি আছে। কারণ, সারাদেশের সাংবাদিক নেতারা ইতিমধ্যে তাদের গায়ের চামড়া প্রশাসনসহ বিভিন্নস্তরের লোকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।

অতএব, ক্রয়কৃত চামড়া যেমন খুশি তেমন করবেন।
এটাই স্বাভাবিক। তবে হ্যাঁ; সাংবাদিক পেশাটির মাঝে ঐক্যটাযে নেই তা আরেকবার প্রমান হলো। তবে ইতিমধ্যে জামালপুরের সাংবাদিকরা চামড়া যেন তুলে নেয়া না হয়; সেজন্য মাঠে নেমেছেন। পুলিশ-সাংবাদিক একই সূতোঁয় গাঁথা, ভাইভাই, বন্ধু প্রবাদটি যেন আজ মাছে ভাতে বাঙ্গালীর মত।

স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীকালে দাঁড়িয়েও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভখ্যাত গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা পেশাটির মাঝে বড় ধরণের অসঙ্গতি, অনৈক্য, সুষম সুবিধা প্রাপ্তিসহ নিজেদের মাঝে কোন্দল ব্যাপক ভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এথেকে উত্তরণের যেন কারো মাথাব্যথা নেই।

অথচ, পেশাটিকে সম্মানের সাথে বাঁচিয়ে রাখতে যেমন উদ্যোগী হওয়া উচিত। তেমনি সাংবাদিক সংগঠনসমুহের মাঝে আরো ঐক্য থাকাটাও জরুরী। রাষ্ট্রের যেমন বিভিন্ন বিভাগ /দপ্তর সংশ্লিষ্টদের সুরক্ষা দেয় তেমনি সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে তথ্য অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসা উচিত। যেমন: একজন পুলিশের প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুমিকা আমরা প্রত্যক্ষ করি তেমনি সাংবাদিকদের প্রয়োজনে তথ্য মন্ত্রণালয়কে পাশে থেকে সহযোগিতা করা উচিত। এজন্য প্রয়োজন গতানুগতিক চিন্তা বাদ দিয়ে পেশাটি রক্ষায় নতুন কিছু উদ্ভাবন করা।

আমরা লক্ষ্য করেছি, জামালপুরের এসপি সাহেব যোগদানের পরপরই ওখানকার কিছু তৈলাক্ত সাংবাদিক এসপি সাহেবকে তৈল দিয়ে ফুলিয়ে
ফাঁপিয়ে সর্বসেরা, কেউ কেউ দেশ সেরা এসপিতে রুপান্তর করে ফেলছেন। আরে ভাই কাউকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলবার জন্যতো সাংবাদিকতা পেশা নয়…। আজকাল সবাই তৈলে বিশ্বাসী। নিজের দোষ তুলে ধরলে তাতে আপনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠবেন, কেন? সাংবাদিকরাতো দোষ-ক্রটি দুটোই লেখবেন, জ্বলবেন কেন?

এই সমাজ,দেশ-রাষ্ট্রতো আপনার-আমার-সকলের। এখানে যেমন আপনি হাজারো কোটির মালিক বাস করবেন তেমনি একজন নিম্ম আয়ের মানুষও বাস করবেন। সকল ধর্ম-বর্নের মানুষ বাস করবেন। উঁচুতলা-নীচুতলায় লোক বাস করবেন। তবে হানাহানী-সংঘাত নয়; সমাজরক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

এদিকে সাংবাদিকতা পেশাটির মাঝে সুরক্ষা প্রশ্নটিও আজ রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র কিংবা সরকার এটিকে কোনভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন না। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ঘোষিত ১৪ দফা দাবির মাঝে সাংবাদিক সুরক্ষার বিষয়টি বিদ্যমান আছে, বাস্তবায়নে সংগঠনটি কাজ করে চলছে।

সাংবাদিক সুরক্ষার বিষয়টি এখন সকল সাংবাদিক এবং সংগঠনের মাঝে গুরুত্ববহ দাবিতে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের উচিত পুলিশ-সাংবাদিকের মধ্যকার অদৃশ্য দ্বন্ধ ঘোঁচাতে দ্বিপাক্ষিক এবং ফলপ্রসূ বৈঠক করা। আর পুলিশের উচিত বৈঠকটিতে সহযোগিতা করা। কেননা; দুটি পেশার মাঝে বন্ধুত্বের যে ঘনিষ্ট আত্মীয়তা দীর্ঘদিনের সেটি খুব সহজেই ম্লান করে দেয়া যায়না।

এছাড়া সরকারের উচিত; সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য চিন্তা করে আইন প্রণয়ন করা।

লেখক: আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম- বিএমএসএফ, কেন্দ্রীয় কমিটি।

Comments (০)
Add Comment