চট্টগ্রামে চলছে পাহাড় কাটার উৎসব,বিপন্ন চট্টগ্রামের পরিবেশ।

কয়েকটি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।এই সুযোগে ওই সড়কের আশপাশে পাহাড় কেটে বসতঘর বানাচ্ছেন স্থানীয় একশ্রেণির মানুষ।

সড়কটির আশপাশে এখন বিভিন্ন ব্যক্তি পাহাড় কাটছে।অন্তত ছয়টি স্থানে বিভিন্ন আকারে পাহাড় কাটতে দেখা গেছে।খাড়াভাবে কাটার কারণে যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।এদিকে পাহাড় কাটার মহা উৎসব চলছে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানা আওতাধীন আরফিন নগর,সীতাকুণ্ড থানা আওতাধীন জঙ্গল লতিফপুর,আকবর শাহ থানা আওতাধীন শাপলা আবাসিক ও তার আশপাশের এলাকায়।বর্তমানে পাহাড় কাটা চলছে অন্তত ৭টি স্থানে।

স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে।একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি।এরপরের ১৩ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন।

চট্টগ্রামের আবাসিক এলাকা গুলোতে ইটভাটা, কারখানা নির্মাণ ও মাটি বিক্রির জন্য এসব পাহাড় কাটা হয় বলে গবেষণায় বলা হয়।বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তি,আবাসন ব্যবসায়ী, ইটভাটার মালিক,রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে পাহাড় নিধন করার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,পাহাড় কাটার কারণে ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকা।এ ছাড়া বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।নিঃশেষ হচ্ছে বনাঞ্চল।একই কারণে পলি জমে নালা-নর্দমা ভরাট ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে একাধিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পাহাড় কাটা দুর্বলের কাজ নয়।যাঁরা বড় বড় কথা বলেন,তাঁরাই পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত।বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।পাহাড় রক্ষা করা খুবই দরকার।পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়।পরিবেশ অধিদপ্তর একটু তৎপর হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

আকবর শাহ থানাধীন শাপলা আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে দুজনকে কিছুদিন আগে জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।ওই এলাকায় আরও দুটি নতুন স্থানে পাহাড় কাটা চলছে।এ ছাড়া জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় পাহাড় কেটে প্রতিদিন উঠছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি।সেখানে খাস জায়গা বেচাকেনাও চলছে।দিনের বেলায় সেখানে কাউকে দেখা যায় না।রাতে এই পাহাড় কাটা হয় বলে স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপপরিচালক জানান বলেন,যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি,সেখানে অভিযান চালাচ্ছি।২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় পাহাড় কাটার দায়ে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬০ টাকা জরিমানা করেছে।

পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।বন জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে।এ জন্য বানর,সাপ,হরিণ,মেছো বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণীর আবাস হুমকির মুখে পড়েছে।পাহাড় কাটা,পাহাড়ে বসতি এবং পাহাড় ধসের জন্য সংশ্লিষ্ট পাহাড়ের মালিককে দায়ী করা দরকার।যদি তা করা হয়,তাহলে পাহাড় রক্ষা হবে।এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর কেবল তদারকির দায়িত্বে থাকতে হবে।

Comments (০)
Add Comment