সন্দ্বীপে যুবতীর মৃত সন্তান প্রসব,ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই বাচ্চার দাফন,এক সপ্তাহ পর সেই যুবতীর মৃত্যু।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে শিউলি নামের এক যুবতীর মৃত সন্তান জন্ম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই বাচ্চার দাফন করার অভিযোগ উঠেছে।এক সপ্তাহ পর সেই যুবতীর মৃত্যু হয়।অভিযোগ উঠেছে লাল্টুর উপর।ঘটনাটি ঘটেছে সন্দ্বীপ পৌরসভা-২নং ওয়ার্ডের মুন্সি বাড়িতে।মৃত সিরাজুল ইসলাম ও ফাতেমা বেগমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস শিউলি।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,জান্নাতুল ফেরদৌস শিউলির মৃত সন্তানের পিতা কে সেই বিষয়ে যাচাই না করেই ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করেন এলাকাবাসী।এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ পৌরসভা কাউন্সিলরের সিদ্ধান্তে বাচ্চাটিকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিউলির অভিযোগ তার মৃত সন্তানের বাবা পাশের ঘরের মাহমুদ প্রকাশ লালু।সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে এ রায় প্রদান করেন কাউন্সিলরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।মাহমুদ প্রকাশ লালুর পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান মেয়েটিকে।সুস্থ হলে মাহমুদ প্রকাশ লালুর সাথে শিউলির বিয়ে দেওয়ার কথাও সিদ্ধান্ত হয় শালিসি বৈঠকে।

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,শিউলি সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরেও বিষয়টি গোপন করে রেখেছে তার পরিবার।এমনকি সন্তান নষ্ট করার জন্য তারা ঔষধ খাওয়ানোর কথাও উঠে এসেছে।

এবিষয়ে জানতে মাহমুদ প্রকাশ লালুর মোবাইলে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।মাহমুদ প্রকাশ লালুর মা নাছিমা বেগম জানান,শিউলির সাথে অসংখ্য ছেলের সম্পর্ক ছিলো এটা কার বাচ্চা আমরা জানিনা।উল্টো কিছুদিন আগে শিউলির অবস্থা দেখে তার মাকে আমি বলেছিলাম শিউলির এ অবস্থা কেন।কিন্তু এখন তারা ইচ্ছে করে আমার ছেলের গায়ে দোষ চাপাচ্ছে।ডিএনএ টেস্ট করলেই বুঝা যাবে কার বাচ্চা।

এবিষয়ে শালিসি বৈঠকে উপস্থিত মাহমুদ প্রকাশ লালুর ভগ্নিপতি ফয়সাল বাঙালি বলেন,শালিসি বৈঠকে শিউলিকে আমার লালু বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা হয়নি।লালুর নাম এসেছে বলে লালুর পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে এবং পরে ফেরত দিয়ে দিবে বলেছে।আমরা বলেছি ডিএনএ টেস্ট করেন লালু যদি দোষী হয় আইনি ব্যবস্থা নিন।

এবিষয়ে শালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা পৌরসভা-১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলাউদ্দিন বাবলুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা বিষয়টি আগে জানতাম না,তাছাড়া আমার ওয়ার্ডের ঘটনাও না।ওইদিন মেয়েটির সন্তান হওয়ার খবর পেয়ে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসপাতালে ভর্তি থাকায় আমি ওখানে যায়।ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ মহিলা কাউন্সিলরের স্বামীসহ আমরা বাচ্চার এবং মেয়েদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রশাসনকে না জানিয়ে লাস দাফন করে ফেলেছি।

তিনি আরও বলেন,আমরা শালিসি বৈঠকে সিদ্ধান্ত দিয়েছি যেহেতু মেয়েটি অসুস্থ তাই সুস্থ হওয়ার পর লাল্টুর সাথে তার বিয়ে হবে এবং মেয়েটির চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক আমরা লাল্টুর পরিবারের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে আমার নিজ উদ্যেগে এবং আমার পরিবারের সহযোগিতায় চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।

এবিষয়ে শালিসি বৈঠক উপস্থিত থাকা পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সাল জানান,ছেলে এবং মেয়ে দুজনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং লাস পচন ধরার কথা চিন্তা করে প্রশাসনিকভাবে কাউকে জানানো হয়নি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র মোক্তাদের মাওলা সেলিম বলেন,আমি ঢাকায় ছিলাম।শালিসি বৈঠক থেকে আমাকে ফোন করলে আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।কিন্তু তারা কিভাবে প্রশাসনকে না জানিয়ে ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই দাফন করেছে আমি জানিনা।তাছাড়া আজকে মেয়েটিও মারা গেছে শুনলাম।বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক।

এবিষয়ে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)কবির হোসেন জানান,এ ঘটনায় পৌরসভা-২নং ওয়ার্ডের মাহমুদ প্রকাশ কালুকে আসামি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।এছাড়া আজ মেয়েটি মারা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,আইনি পক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Comments (০)
Add Comment