টিউশনি দেওয়ার নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

0 ২০০,৪১৬

টিউশনি দেওয়ার নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম।

গত ১০ই এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ রিদুওয়ানুল হক র‌্যাব-৭,চট্টগ্রামে অভিযোগ করেন যে,তিনি মাইনুদ্দিন হাসান(২৫)এর ‘মাহতির ইসলাম’ নামক ফেসবুক আইডি হতে টিউশন দেয়ার বিভিন্ন পোস্ট দেখতে পান।সেখানে মিডিয়া ফি বাবদ প্রথম মাসের বেতনের ৫০% টাকা অগ্রীম দিতে হবে মর্মে উল্লেখ করে এবং তাদের শর্তে রাজি থাকে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস দিতে বলে।

রিদুয়ানুল উক্ত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে নক দিয়ে টিউশন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।তখন মাইনুদ্দিন তাকে পূর্ণ নাম ঠিকানা দিতে বলে এবং তার অফিসে এসে টিউশনের অভিভাবকের সাথে কথা বলে অগ্রীম মিডিয়া ফি দিয়ে যেতে অথবা বিকাশে পাঠাতে বলে।

রিদওয়নুল মাইনুদ্দিনের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে ২,৫০০/- টাকা বিকাশ করে এবং টিউশনের অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা চাইলে একটি মোবাইল নাম্বার দেয় এবং ০৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখের পরে ফোন করতে বলে।

পরবর্তীতে রিদওয়ান গত ০৮ই এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে উক্ত অভিভাবকের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে নাম্বারটি বন্ধ দেখতে পান।তখন মাইনুদ্দিনের নাম্বারে একাদিকবার ফোন দিলেও সে ফোন ধরে না এবং এক পর্যায়ে তার মোবাইল নাম্বার ব্লক করে দেয়।

কোনভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ভিকটিম নিশ্চিত হন যে মাইনুদ্দিন তার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে উল্লেখিত টাকা আত্মসাৎ করেছে।অতঃপর গত ১০ই এপ্রিল ২০২২ খ্রিঃ তারিখে বর্ণিত বিষয়ে ভিকটিম র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামকে বিষয়টি অবহিত করেন।ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে।

নজরদারীর একপর্যায়ে র‌্যাব-৭,চট্টগ্রাম জানতে পারে যে,উক্ত আসামী চট্টগ্রাম মহানগরীর পাচঁলাইশ থানাধীন কসমোপলিটন আবাসিক এলাকায় অবস্থান করছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ই এপ্রিল ২০২২ইং তারিখ ৬ ঘটিকায় র‌্যাব-৭,চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ মাইনুদ্দিন হাসান (২৫),পিতা-মুকতার আহমদ,সাং-গারংগিয়া,থানা-সাতকানিয়া,জেলা-চট্টগ্রামকে আটক করে।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত আসামী অকপটে স্বীকার করে যে,সে ‘মাহতির ইসলাম’ নামক ফেসবুক আইডি হতে টিউশন দেয়ার বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে ভিকটিমের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে উল্লেখিত টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এছাড়াও ধৃত আসামী আরো স্বীকার করে যে,সে টিউশন পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে টিউশন মিডিয়া ফি বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মূলতঃ বিভিন্ন পেজে এ ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এই লোভনীয় টিউশন বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ছে।টিউশন মিডিয়ার নামে এ ধরনের প্রতারণা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। প্রতারক চক্র ৫০ শতাংশ কমিশনের শর্তে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে স্ট্যাটাস শেয়ার করে বিভিন্ন আইডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপে লোভনীয় টিউশনি দিয়ে আসছে।

যারা এই ধরনের ফাঁদে পড়ছে তাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,সিএমসিএইচ এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিখ্যাত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের খরচ চালানোর জন্য এ ধরনের প্রতারণামূলক টিউশন মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তাদের নিজস্ব খরচের সমস্থ টাকা হারাতে হচ্ছে।বিশেষ করে অনেক নবাগতরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসব ফাঁদে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে,ধৃত আসামী কর্তৃক ইতিপূর্বে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ম্যাসেঞ্জারে ভিকটিমের সাথে কথোপকথনের স্ক্রীন শর্টের ২৫ কপি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!