উত্তর কাট্টলীতে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, থানা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0 ১০৬

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীতে গলায় ফাঁস লাগানো এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে আকবরশাহ থানা পুলিশ।আকবরশাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলীর আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়।বুধবার(২৯শে জুলাই)রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লাশ উদ্ধার করে আকবরশাহ থানা পুলিশ।নিহত যুবকের নাম শহিদুল রহমান রনি(২৮)।তিনি আমানত উল্লাহ শাহ পাড়ার কসাই বাল্লা মিয়ার ছেলে। রাত ১ টায় সিএমপির ফরেনসিক দল লাশটির সুরতহাল তৈরি শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

নিহত শহিদুলের পরিবারের দাবি,তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল সিদ্দীকি,শহিদ মেম্বার,স্থানীয় জব্বার আলী সেরাং এর বাড়ির বদিউল আলমের ছেলে মোহাম্মদ শহিদসহ আরো দু’জন যুবক।তারা শহিদুলের বোন রেশমী আক্তারকে(২১)কু-প্রস্তাব দিয়ে নানানভাবে উত্যক্ত করতো বলে জানান তার পরিবার।শহিদুল রনির পরিবার আরো জানায় রেশমি কে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোহাম্মদ শহিদ কিন্তু রেশমির বিয়ে তারা অন্য জায়গায় দেওয়ার পর থেকেই আমাদের পিছনে লেগে আছে।

এই ঘটনায় আজ বুধবার(২৯ জুলাই)আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার।মামলা নং-৪১
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নিহতের বোন রেশমি আক্তার ও তার মা-বাবা থাকতেন পাশাপাশি আরেকটা কলোনিতে।আর শহিদুল রহমান রনি তার ছোট ভাইকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের আমানত উল্লাহ শাহ পাড়ায় হায়দারের ভাড়া ঘরে বসবাস করছেন।রনি ও তার ছোট ভাই রায়হান স্থানীয় হায়দার জমিদারের এক রুমের একটি বেড়ার ঘরে বসবাস করতেন।দীর্ঘদিন ধরে রেশমীকে উত্যক্ত করছিলো স্থানীয় মোহাম্মদ শহীদ আর এতে সহায়তা করতো আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল সিদ্দিকী,শহিদ মেম্বার সহ নাম না জানা আরো ৩/৪জন।বিভিন্ন সময় এই মেয়েকে শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে।এই বিষয়ে প্রতিবাদ করে শহিদুল রনি। তার বোনকে শহীদের কাছে বিয়ে দিতে নানান ধরণের চাপ প্রয়োগ করা হতো।কিন্তু রেশমী বিবাহিত,সে কেন আবার বিয়ে করবে এমনটি জানালেও শহীদ তাকে উত্যক্ত করতো সব সময়।

নিহতের পরিবারের ভাষ্যমতে,জলিল মিস্ত্রী বাড়ির জুয়েল সিদ্দিকী,স্থানীয় জব্বার আলী সারেং বাড়ির বদিউল আলম প্রকাশ লেদুর ছেলে মোহাম্মদ শহীদ, ফতেহ আহমদ চৌধুরীর নতুন বাড়ির মৃত আব্দুল মান্নান প্রকাশ মন্নাইয়ার ছেলে মোহাম্মদ শহীদসহ বেশ কয়েকজন যুবক নিয়মিতভাবেই ওই এলাকায় আড্ডা দিতো।মাদকের সাথেও তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।তারা দীর্ঘদিন ধরে রেশমীকে কু-প্রস্তাব দেয়া ছাড়াও শহীদকে বিয়ে করতে চাপ দিচ্ছিল।

এসবের প্রতিবাদ করেছে ভাই শহিদুল রহমান রনি।এতে ক্ষীপ্ত হয়ে সর্বশেষ সোমবার(২৭ জুলাই)রাতে রনিকে তুলে নিয়ে যায় শহীদ ও তার সহযোগিরা।এতে সরাসরি সঙ্গ দেয় জুয়েল সিদ্দীকিসহ অন্যান্যরা।সারারাত তাকে আটকে রেখে মারধর করা হয় তাদের সাথে যেন সে তার বোনকে শহীদের প্রস্তাবে রাজি করায়।এ দিন রাতে রনি ঘরে না ফেরায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি করেন।পরের দিন মঙ্গলবার(২৮শে জুলাই)ভোরে রনি অনেকটা ক্লান্ত হয়ে ফেরেন।নিজ ঘরে না গিয়ে রনি প্রতিবেশী সিরাজ ড্রাইভারের ঘরে যায়।তাকে সবকিছু খুলে বলে।পরিবারও খবর পেয়ে ছুটে আসে এবং রনির কাছ থেকে রাতের ঘটনা শোনেন।পরে বেলা ১১ টায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা আকবরশাহ থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলা করতে যান।প।তারা থানায় দুপুরে থানা থেকে ঘরে ফেরেন।

এরপর তার বোন ও মা রাতের রান্না করতে নিজেদের ঘরে চলে যান।রাত সোয়া আটটার দিকে রনি ও তার ছোট ভাইয়ের জন্য রাতের খাবার নিয়ে রনির ঘরে গেলে তাকে দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।সাথে সাথেই তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়।এরপর খবর পেয়ে আকবরশাহ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

নিহত রনির বোন রেশমী আক্তার জানান,আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল সিদ্দীকির সহযোগিতায় বখাটে শহীদ,স্থানীয় খোকনের ভাই শহীদসহ আরো এক যুবক আমার ভাইকে সারারাত আটকে রেখে মারধর করেছে।তারা অনেকদিন ধরে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।সর্বশেষ আমার ভাইকে আটকে রেখে মারধরের ঘটনা ও আমাকে কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ জানাতে মঙ্গলবার সকালের দিকে আকবরশাহ থানায় যাই।

নিহতের বোন রেশমি আরো বলেন,আমার ভাই সারাদিনই ভয়ে ছিল।জুয়েল সিদ্দীকি,শহীদ তাদের ছেলেদের নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে।আমরা সবাই আমাদের ঘরে চলে যাওয়ার পর একা পেয়ে আমার ভাইকে তারা হত্যা করে দড়িতে ঝুলিয়ে দিছে।আমার ভাইয়ের পায়ে জখমের চিহ্ন আছে।তার দুই পা যে অবস্থায় ছিল তাতে কোনোদিন ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার মতো বোঝাবে না।আমার ভাইয়ের সাথে কি হয়েছে আমি জানি।তিনি বলেন,আমি বিবাহিত,আমাকে কিছুদিনের মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে তুলে নেয়ার কথা।আমি কি করে আবার বিয়ে করবো?তারা বিভিন্ন সময় আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রতিবেশি মোহাম্মদ সিরাজ সাংবাদিকদের জানান,
সোমবার রাতে রনি যখন ঘরে আসেনি সবাই চিন্তায় ছিল।পরেরদিন ভোরে(মঙ্গলবার)রনি ফিরে আসে এবং আমার ঘরে বসে।সে কিছু নিয়ে ভয়ে ছিল,ক্লান্ত ছিল,সে আমাকে সব ঘটনা বলে।পরে আমি তাকে বিশ্রাম নিতে বলি।এরপর আমি কাজে চলে যাই।রাতে এসে শুনি সে মারা গেছে।

আকবরশাহ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ জুয়েল সিদ্দীকি সাংবাদিকদের জানান,আমি রাজনীতি করি,আমার বিপক্ষের কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে,যে পরিবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাদের নিয়েও এলাকায় খারাপ গুঞ্জন আছে,আমি চাঁদাবাজি করি না,বরং মাদকের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমি কিছু প্রতিবাদ করেছিলাম আর তাই কিছু শত্রু তৈরি হয়েছে।
অনেকেইতো রাজনীতি করে,আপনার বিরুদ্ধে কেন এতো অভিযোগ জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি এসবের সাথে জড়িত না।থানায় মামলা হয়েছে।তদন্ত হোক।তখন যদি আমি অপরাধী প্রমাণিত হই যা হবে তাই মেনে নিবো।

এই বিষয়ে জানতে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় রেশমী আক্তারসহ তার ভাই থানায় গিয়েছিল মামলা করতে।বিকেল ৪.১৫মিনিটে আমরা মামলা রেকর্ড করি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,তারা সকালে যে অভিযোগে মামলা করতে গিয়েছিল সেখানে শহীদ নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল আমরা সেটা গ্রহণ করেছি।তখন জুয়েল সিদ্দীকির বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ করেনি।এরপর রাতে যখন আমরা খবর পাই তার ভাই(শহিদুল রনি)মারা গেছে,তখন আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি।আমাদের ফরেনসিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে তার ময়না তদন্ত করতে লাশ মর্গে প্রেরণ করেছি।তার গলায় দাগ দেখা গেছে।তবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়না তদন্ত শেষে বলতে পারবো।এই ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন,আজ(বুধবার)ভোরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার।সেখানে জুয়েল সিদ্দীকি,মোহাম্মদ শহীদসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।আমরা তদন্ত করছি।ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!