কুমিরা-গুপ্তছরা ঘাটের ৪০ লাখ টাকার সেতু বিফলে।

0 ৩০০,৪৭৪

যাত্রীদের ওঠানামার অসুবিধা দূর করতে চট্টগ্রামের কুমিরা অংশে ভেঙে যাওয়া জেটির সঙ্গে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে বিকল্প একটি সেতু নির্মান করে বিআইডব্লিউটিএ।সেতুটি নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও ঘাটের একশ্রেণীর অসাধু কর্মচারীর অপতৎপরতার কারণে জোয়ার ও ভাটা উভয় সময়েই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম আসা যাত্রীদের।নির্মাণের পরপরই অকার্যকর হয়ে পড়েছে বিপুল অর্থে নির্মিত বিকল্প এ সেতুটি।

গতকাল মঙ্গলবার(১৯ জুলাই)সকাল ৯টা চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা এমভি তাজউদ্দীন নোঙর ফেলেছে চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাটে।জাহাজ থেকে নেমে লাইফবোটে(লালবোট)চড়ে যাত্রীরা আসছেন কূলের দিকে।জোয়ারের কারনে নতুন নির্মিত সেতুতে লালবোট ভেড়ানো যাবে না জানিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয় কোমরপানিতে।

শনিবার(১৬ জুলাই)সকাল ১০ টায় দেখা যায় যাত্রী দূর্ভোগের ভিন্ন চিত্র।নদীতে ভাটা থাকায় নির্মিত সেতুটির সিঁড়ির সর্বশেষ ধাপের সঙ্গে নদীপৃষ্ঠের দূরত্ব তৈরী হয় প্রায় ৬ ফুটেও বেশি।সেতু ও নদীপৃষ্ঠের উচ্চতার পার্থক্যের কারনে জাহাজ থেকে যাত্রী নিয়ে আসা লালবোট সেতুর সঙ্গে ভীড়তে না পারায় যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয় কোমরপানিতে।

বৃহঃপতিবার(১৪ জুলাই)সন্দ্বীপ থেকে আসা যাত্রী আহসানউল্লাহ বলেন,নদীতে জোয়ারের অযুহাত দেখিয়ে আমাদের সেতুতে না নামিয়ে কোমরপানিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।এখানে অনেক বৃদ্ধ,নারী,শিশু, অসুস্থ রোগী আছেন।সবাইকে এখন পানিতে ভিজতে বাধ্য করা হচ্ছে।

শনিবার(১৬ জুলাই)সন্দ্বীপ থেকে আসা আরেক যাত্রী স্বপ্না বেগম বলেন,লালবোট থেকে সেতুর সিঁড়ির সর্বশেষ ধাপের উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট।কারো পক্ষেই বোট থেকে লাফিয়ে এত উঁচুতে ওঠা সম্ভব নয়।তাই বাধ্য হয় কোমর সমান পানিতে নেমে যেতে হয়েছে।সিঁড়ি যদি আরও কয়েকধাপ নিচে নামানো হতো নিরাপদে সেতুতে উঠতে পারতাম।

নতুন নির্মিত সেতুটির নির্মানে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে উল্লেখ করে কুমিরা ঘাটের পরিচালক শামছুল আলম দুলু বলেন,সেতু করা হয়েছে পুরাতন সেতুর দক্ষিণ পাশে।জোয়ারের পানিও আসে দক্ষিণ দিক থেকে।এই অবস্থায় কোনভাবেই লালবোট সেতুর কাছে ভেড়ানো যায় না।লালবোট সেতুর কাছে আনলেই স্রোতের কারণে সেতুর নিচে ঢুকে দূর্ঘটনা ঘটবে।আর ভাটার সময় পানি সিঁড়ির অনেক নিচে নেমে যায়।তখনও সেতুতে যাত্রী ওঠানো যায় না।

তিনি আরও বলেন,সেতুটি দক্ষিণ দিকে আরও বর্ধিত করে তারপর ১৫০ ফুট পশ্চিমে বর্ধিত করে একটি চত্বর তৈরী করে দিলে আমরা ডান-বাম দুই পাশেই সুন্দরভাবে লালবোট ভীড়াতে পারবো।

আমরা সন্দ্বীপবাসী সংগঠনের সমন্বয়কারী খাদেমুল ইসলাম বলেন,পরিপূর্ণ জোয়ারের সময় সার্ভিস বোট ও স্টিমারের যাত্রী নিয়ে লালবোট খালের ভেতরে জেলা পরিষদের জেটি দিয়ে ওঠানামা করতে পারে।ভাটা ও অল্প জোয়ারে প্রায় সময় সার্ভিস বোট ও স্টিমারের যাত্রীদের কোমড়পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।সেতুটির সিঁড়ি আরও কয়েক ধাপ নিচে নামানো হলে অন্তত ভাটার সময় যাত্রীরা নিরাপদে ওঠানামা করতে পারতেন।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়,যাত্রীদের ওঠানামার দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সরকার ২০১২ সালে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করে দুটি জেটি।

বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে চট্টগ্রামের কুমিরা অংশে নির্মিত জেটিটির আগ্রভাগের ওঠানামার সিঁড়ির অংশ ভেঙে যায় গত মে মাসে।যাত্রীদের ওঠানামার দূর্ভোগ দূর করতে ভেঙে যাওয়া জেটির সঙ্গে বিকল্প আরেকটি সেতু নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ।প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০০ ফুট দীর্ঘ এই বিকল্প সেতু তৈরি করা হয়েছে। স্টিল পাইলিং করে ওপরে দেওয়া হয়েছে কাঠের পাটাতন।

জোয়ার ও ভাটা দুই অবস্থাতেই ৪০ লক্ষ টাকার সেতু কেন কাজে আসছে না জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন,আমরা যেভাবে সেতুটি তৈরী করেছি অবশ্যই লালবোট ভীড়তে পারার মত উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে।ঘাট কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ওঠানামার সময় কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করে বোঝাতে চাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএর সেতুটি কোন কাজে আসছে না।ঘাট কর্তৃপক্ষ অান্তরিক হলে জোয়ার-ভাটা দুই সময়েই সেতুর মাধ্যমে সুন্দরভাবে যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!