চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অবৈধ ১৬টি ইটভাটা,উপজেলা প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ।

0 ৬৮৮,০৭৪

সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় অবৈধভাবে চলছে ১৬টি ইটভাটা।১৬টি ইট ভাটার ১৪টিই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন।তাছাড়া এইসব ইট ভাটায় ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে সরকারি খাল,সরকারি খাস জমি,ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ফসলী জমি থেকে। ব্যহত হচ্ছে চষাবাদ,ধবংস হচ্ছে ফসলী জমিসহ পুকুরের মাছ।সহজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হত-দরিদ্র বেড়ীবাঁধ এলাকা বসতির টিনের চাল।এমতাবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,উপজেলা সন্দ্বীপের ১৬টি ইট ভাটার ১৪টিই বিনা অনুমোদনে চলে।এইসব ইট ভাটা আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে নিজেদের খেয়াল খুশি মতে।এছাড়া রাস্তার পাশে স্কুল,কলেজের পাড় ঘেঁসে,লোকালয়ে,ফসলি জমির উপর এই সব ভাটা গড়ে উঠেছে।চব্বিশ ঘন্টাই চলতে থাকে ভাটার চুল্লী।সেই ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।যা পুরো সন্দ্বীপবাসীকে ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে।হুমকিতে লোকালয় ও কৃষিজমি।

অপরদিকে ইট ভর্তি ট্রাক সড়কে চলার কারণে টেকসই হচ্ছে না সন্দ্বীপের রাস্তা।অবৈধ ট্রাক চলাচলের কারণে বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থাই সংকটাপন্ন।রাতদিন ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তার টেকসই যেমন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে যানজট তৈরি হচ্ছে।রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ফসলী জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ এইসব ইটভাটার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে জমির পরিমাণ।হতে পারে খাদ্য ঘাটতিও।

পরিবেশের আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সন্দ্বীপ উপজেলায় এইসব ইটভাটায় গড়ে উঠার পিছনের কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বহীনতা।এইসব অবৈধ ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ করেন ইট ভাটা মালিক সমিতির নামে একটি সংগঠন।

এই দিকে সরেজমিনে গিয়ে ইটভাটার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,ইটভাটার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।ইটভাটা মালিক সমিতির মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনকে মেনেজ করে চলে এইসব ইটভাটা।অবৈধ ইট ভাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন মালিক জানান ইট ভাটা মালিক সমিতির মাধ্যমে চলে আমাদের ইটভাটা।মালিক সমিতির লোকজনের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন সবকিছু।

পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনানুযায়ী ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন(২০১)ধারায় সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ আছে,জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতিত কোন ব্যক্তি ইটভাটা প্রস্তুত করতে পারবে না।ঐ আইনে আরও উল্লেখ করা আছে যে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ী ঘর ও বসতি এলাকা ফলজ ও বনজ-বাগান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে ইটভাটা অনুমোদন হবে না।কিন্তু সন্দ্বীপ উপজেলার ইটভাটা গুলো মানুষের বসতি বাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ফলজ ও বনজ বাগানের নিকটে গড়ে উঠেছে।

কথিত আছে অবৈধ ইটভাটা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা নেয় সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন।আর তাই অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনের কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও সামান্যতম কর্ণপাত করছেন সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন।

এই বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন,আমাদের ইটভাটার অনুমোদন নেই আর এই বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন সবকিছু জানেন।আমরা প্রশাসনিকভাবে কথাবার্তা বলেই এইসব ইটভাটা গুলো চালাচ্ছি।

অন্যদিকে এই বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের কোন রকম মালিক সমিতি নেই।সবাই অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছে সেই হিসাবে চালাচ্ছে।আমি ইটভাটা মালিক সমিতির কেউ নয়।

অবৈধ ইটভাটা সম্পর্কে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসার মোবাইল ফোনে বার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অবৈধ ইটভাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন,সন্দ্বীপ উপজেলায় অবৈধভাবে ইটভাটা চলে।আমরা ২০১৮ সালে অভিযান করে সব ভেঙে দিয়েছি কিন্তু আবারও তাঁরা ইটভাটা গুলো চালু করেছে।প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অবৈধ ইটভাটায় সম্পর্কে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন,যেহেতু আমাদের বনের কোন ক্ষতি হচ্ছে না সেহেতু এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।

অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে কৃষি জমির উপর কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি কর্মকতা মোহাম্মদ মাসুদ আলম বলেন,ইটভাটার নিয়ম হচ্ছে অনুমোদন নিতে হলে আমার কাছে একটা সার্টিফিকেট নিতে হয় কিন্তু ১৬টি ইটভাটার কোনটার জন্য আমাদের কাছে এমন কোন তথ্য নেই।এগুলো গড়ে উঠেছে কৃষি জমির উপর।কৃষি জমির উর্ভরতা নষ্ট হচ্ছে এইসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে।

সন্দ্বীপের এমন অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি অন্যদিকে তেমন নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।ইটভাটার ধোঁয়ায় জনজীবন আজ হুমকির মুখে।এর থেকে প্রতিকার চাই জনগণ,চাই প্রশাসনের সুদৃষ্টি।যদিও বার বার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ প্রকাশিত হলেও সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!