চুরি ঠেকাতে সন্দ্বীপের প্রতিটি বাজারে সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্ত

0 ৬৮৮,০৪৪

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অন্তত ৩৫টি দোকান ও প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।সবশেষ গত সোমবার দিবাগত রাতে সন্দ্বীপ পৌরসভার সেনেরহাট এলাকার রড-সিমেন্ট ও মুদিদোকানের লকার ভেঙে অন্তত তিন লাখ টাকা নিয়ে যায় চোরেরা।

এই অবস্থায় গতকাল বুধবার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় চুরির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।এ সময় তাঁরা পুলিশের টহল বাড়িয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করেন।পরে ওই সভায় প্রতিটি বাজারে বাধ্যতামূলকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ও নিরাপত্তা প্রহরীদের আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,প্রতিটি বাজারে সিসিটিভি লাগানোর সিদ্ধান্তটি নোটিশ আকারে প্রতিটি বাজার কমিটির কাছে পাঠানো হবে।এ ছাড়া পুলিশের টহল আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।চুরি ঠেকাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

তবে পরপর এতগুলো চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নাদিম বলেন,চুরির কারণে প্রবাসীরা বেশ অতিষ্ঠ।চুরি কোনোমতেই ঠেকাতে পারছে না পুলিশ।গতকালের আইনশৃঙ্খলা সভায় তিনি বলেছেন,কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ চোর গ্রেপ্তার করেছে ঠিকই।কিন্তু গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কয়েক দিন পর জেল থেকে জামিনে ফিরে এসে আবারও চুরি করছে।

স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ সন্দ্বীপের জনতা মার্কেটের পাঁচটি দোকানে চুরি হয়।একই দিনে মগধরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সরকারি পুকুর পাড় ও আদর্শ মার্কেট একসঙ্গে ১০টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।পরদিন বুধবার দিবাগত রাতে সারিকাইত ইউনিয়নের শিবের হাটের দক্ষিণ মাথা থেকে বলির পোল পর্যন্ত আটটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।এরপর ৩ জানুয়ারি রাতে সন্দ্বীপ থানা কার্যালয় এলাকায় একটি দোকানে চুরি হয়।এর কয়েক দিন পর রহমতপুর এলাকায় একাধিক দোকানে চুরি হয়।এর মধ্যে দোকান ছাড়াও কয়েকটি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরি হয়।

চুরির ঘটনা বাড়তে থাকায় সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গত ৩ জানুয়ারি ৩৫টি চুরির বিষয়ে সন্দ্বীপ থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।তবে সরাসরি ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র দুজন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।তবে নানা হয়রানির কারণে চুরির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা থানায় অভিযোগ করতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের দাবি,অভিযোগ পাওয়া দুটি ঘটনায় সন্দ্বীপ পৌরসভার পেছনের এলাকা থেকে শিবলু নামের এক চোরের বাড়ি থেকে মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।পাশাপাশি শিবলুর পুকুরে ডুবানো অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা,ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে।তবে অভিযান টের পেয়ে শিবলু পালিয়ে গেছেন।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের দাবি,চুরির ঘটনা ৩০-৩৫টা বলা হলেও ঘটনা এতটা বেশি নয়।তবে দু-একটি ঘটনা যে হচ্ছে না,তা নয়। পুলিশ ইতিমধ্যে দুটি চুরির ঘটনায় মালামাল, অটোরিকশা,ভ্যান উদ্ধার করেছে।একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।তবে চুরির মূল হোতা শিবলুকে গ্রেপ্তার করতে পারলে চুরির ঘটনায় আরও কে কে জড়িত তা বের করা যেত।শিবলুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন,পুলিশের জনবল ও যানবাহনসংকট আছে। এর মধ্যেই তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে।তবু তাঁরা নিরাপত্তা জোরদার করেছেন। সেনেরহাট,শিবেরহাট ও উপজেলা এলাকায় স্থায়ীভাবে পুলিশ রাখা হয়েছে।এসব বড় বাজারে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা উচিত।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!