জেগে উঠা নতুন চর থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় অবাধে মাটি কেটে বিক্রি চলছে।

0 ৬৮৮,০২৮

জেগে উঠা নতুন চর থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় অবাধে মাটি কেটে বিক্রি চলছে।রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনের নিরবতাকে পুঁজি করে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।সিন্ডিকেটের সদস্যরা উপজেলার সরকারি খাস জমি এবং খাল থেকে প্রকাশ্যে এসব মাটি কেটে বিক্রি করে চলছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে মাটি বিক্রি বন্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও তাতে কোন সুফল আসেনি।ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সিন্ডিকেট সদস্যরা সামনে আসেনি।

উপজেলার রহমতপুর,গাছুয়া,মগধরা,কালাপানিয়া, বাউরিয়া,সন্তোষপুর,দীর্ঘাপাড়,পৌরসভার কিছু অংশ ও সারিকাইত ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের চর এবং কয়েকটি সরকারি খাল ও কৃষি জমির টপ সয়েল প্রতিদিন মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে।অবৈধ এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে সেগুলো ট্রাকে করে বিক্রি করা হয়।নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ,পুকুর ও জলাশয় ভরাট ও ব্রিকস ফিল্ডের ইট তৈরিতে এসব মাটি ব্যবহার করা হয়।প্রতি ট্রাক মাটি এক হাজার তিনশ থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হয়।এলাকাগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় পাচ শতাধিক ট্রাক মাটি বিক্রি হয়।পুরো সন্দ্বীপ জুড়ে চারটি সিন্ডিকেটের এসব মাটি বিক্রি করে।

মাসে দুই একবার অভিযান পরিচালনা করলেও বেশিরভাগ সময় অদৃশ্য কারণে প্রশাসনের নিরবতার কারণে এসব দিন দুপুরে প্রকাশ্যে চলছে চর কাটা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।রহমতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল মাওলা কিশোর বলেন,আমার ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকার বাইর থেকে দিনে রাতে মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে।বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সবাইকে জানিয়েছি।

সরোজমিনে দেখাযায় রহমতপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের চরের মাটি কেটে বিশাল এলাকায় ডোবা বানানো হয়েছে।কোথাও চরের উপরের স্তরের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।এতে জোয়ারের পানিতে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।আবার এসব মাটি পরিবহনের সুবিধার জন্য পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ কেটে রাস্তা করা হয়েছে।বেড়িবাঁধ কাটার চিত্র অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতেও রয়েছে।সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় সন্দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে এসব কাটা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ফসল,মাছের প্রজেক্ট,রাস্তাঘাটের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গতবছর মগধরা ইউনিয়নে খাল সংস্কারের নামে মানুষের কৃষি জমি কেটে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। খালের পাশের ফসলি জমি ও বাড়িঘর খালের মধ্যে ফেলার ভয় দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজীর অভিযোগ রয়েছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

এছাড়া ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে মাটি কেটে বিক্রি করার সময় ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু মগধরা ইউনিয়নে গত দুই বছরে প্রায় চার কোটি টাকার মাটি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

মাটি কাটা ও বিক্রি বন্ধে উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে দুএকবার অভিযান পরিচালনা করে। তবে এসব অভিযান এবং জরিমানার তোয়াক্কা করেনা মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট। দু-তিনটি স্পটে জরিমানার পর তারা পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে মাটি কেটে বিক্রি করছে।তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এপর্যন্ত সিন্ডিকেটের কোন সদস্যদের আটক হতে দেখা যায়নি।কৌশলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আড়ালে থাকে।তাদের পরিবর্তে আদালতের মুখোমুখি হয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপাররা।আদালত তাদের অর্থদণ্ড প্রদান করলেও এপর্যন্ত মাটি কাটা ও পরিবহনে ব্যবহৃত কোন এস্কেভেটর ও ট্রাকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা জানান, বেশিরভাগ সময় অভিযানের সময় কাটি কাটা চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়।আমরা যাকে পাই তাদের জরিমানা করি যেসব ট্রাক আটক করা হয়েছে সেগুলো আর মাটি পরিবহন না করার শর্তে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাঈন উদ্দিন বলেন,সন্দ্বীপে এস্কেভেটর টেনে আনা এবং নিরাপদে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই।

আবাদি কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি হলেও সেই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই উপজেলা কৃষি অফিসের।জমির টপ সয়েল বিক্রির কোন খবরও জানা নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসাইন বলেন,কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করা জমির জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে আমরা জমির মালিককে বাধা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।আমরা শুধুমাত্র অনুরোধ করতে পারব।এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভূমি অফিস ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!