টিসিবি ডিলারদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

0 ৯৮,৭২৬
নির্দিষ্ট সময়ে আসে না কোনো ট্রাক অর্ধেক পণ্য বিক্রি করে চলে যায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না পাওয়ার দাবি ডিলারদের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের(টিসিবি)ট্রাক সেলে(ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি)ডিলারদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের বিস্তর অভিযোগ।নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় টিসিবির ট্রাক সেলে ক্রেতা বেড়েছে।বাজারের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন।তবে আগের তুলনায় টিসিবির ডিলারদের ট্রাক সেলে এখন পণ্য অর্ধেক করে দেওয়ায় লাইনে দাঁড়ানো অর্ধেক ক্রেতাও পণ্য পাচ্ছেন না।
টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস থেকে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে টিসিবির ৫৫ জন ডিলার রয়েছে। নগরীর ১৭টি স্পটে ধারাবাহিকভাবে এই ৫৫ জন ডিলারকে ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রির জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দেয় টিসিবি।টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়ানো প্রতিদিন শত শত ক্রেতাদের অভিযোগ সকাল ১০টার মধ্যে পণ্য নিয়ে ট্রাক স্পটে আসার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ট্রাক আসে না।কোনো দিন সাড়ে ১১ টায় আবার কোনো দিন ১২ টায়ও আসে।
জামালখান এলাকায় টিসিবির ট্রাক সেল থেকে পণ্য কিনতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাননি বলে অভিযোগ করেছেন মো. ইদ্রিস বলেন,ট্রাক এসেছে পৌনে ১২টার দিকে।আমার আগে ৮ জন থাকতেই ট্রাকের মাল শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে ডিলার ট্রাকটি নিয়ে চলে যায়।একই অভিযোগ করেছেন মাজেদা বেগমও।তিনি বলেন,ট্রাকের অর্ধেক মাল থাকতেই ট্রাক নিয়ে চলে গেছে।এজন্য আমরা মাল পাইনি।এরকম প্রায় সময়ই করে থাকে তারা।এদিকে কাজীর দেউড়ি মোড়ে টিসিবির ট্রাক সেল থেকে পণ্য কিনতে প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাজীর দেউড়ির বাসিন্দা আবদুর শুক্কুর।তিনি বলেন,ট্রাকে মাল থাকলেও নেই বলে চলে যায়। প্রতিদিন শত শত মানুষ টিসিবির মালের জন্য লাইন ধরেও মাল পায় না।
বর্তমানে টিসিবির ট্রাকসেলে মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে।মজুদ না থাকায় এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না।প্রতিটি ট্রাকসেলে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়,৬৫ টাকায় মসুর ডাল,১১০ টাকায় প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে।একজন ক্রেতা দুই কেজি করে মসুর ডাল ও চিনি এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন।প্রতিটি ট্রাকে ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল,৫০০ কেজি চিনি ও ৫০০ কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে।নগরীর যেসব স্পটে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে জামালখান,কাজীর দেউড়ি,কাটঘর,ইপিজেড,কাস্টমস,আগ্রাবাদ,হালিশহর, কোতোয়ালি,বহদ্দারহাটসহ কয়েকটি স্পটে।
এই ব্যাপারে টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের সহকারী কার্যনিবাহী হাবিবুর রহমান বলেন,কোনো ডিলার যদি ঠিক সময়ে তার নির্দিষ্ট স্পটে না যায় এবং বিক্রির জন্য দেয়া ট্রাকের মালামালের মধ্যে অর্ধেক মাল বিক্রি করে চলে যায়;এমন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
জামালখান-কাজীর দেউড়িসহ নগরীর বিভিন্ন স্পটে ডিলাররা সকল ১০ টার পরিবর্তে টিসিবির পণ্য নিয়ে আসে বেলা সাড়ে ১১টা এবং ১২ টায়; এমন অভিযোগ টিসিবির শত শত ক্রেতাদের।
এই ব্যাপারে হাবিবুর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা ঠিক মত সব জায়গায় মনিটরিং করতে পারছি না,যতটুকু পারছি করছি। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকেও মনিটরিং করা হচ্ছে।আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।গত সপ্তাহে কাজীর দেউড়ি-সার্কিট হাউস এলাকায় ট্রাকের অর্ধেক পণ্য বিক্রি করে চলে যাওয়ার অভিযোগ উপস্থিত ক্রেতাদের কাছ পাওয়া যায়।তখন ঘটনার সত্যতা পেয়ে জাহাঙ্গীর স্টোর নামে এক ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।এছাড়াও ঠিক সময় ট্রাক নিয়ে স্পটে না পৌঁছানোর অভিযোগে আরো ২ ডিলারকে নোটিশ করা হয়েছে।এই মুহূর্তে ট্রাকের সংখ্যা এবং পণ্য বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন,মার্চে ট্রাকের সংখ্যা বেড়ে হবে ৩০, পণ্যের পরিমাণও বাড়ানো হবে।তখন প্রত্যেক ডিলারকে ৩ হাজার কেজি করে পণ্য দেয়া হবে।
এদিকে টিসিবি ডিলার সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম রাশেদ আজাদীকে বলেন,টিসিবির ট্রাক সেলের প্রতিটি ডিলারকে সকাল ৮ টায় টিসিবি অফিসে এসে ৯ টায় পণ্য নিয়ে স্পটে চলে যেতে হবে।টিসিবির এমন নির্দেশনা রয়েছে।অনেক ডিলার স্পটে দেরি করে যান এবং ট্রাকের অর্ধেক মাল বিক্রি করে আর অর্ধেক নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে ডিলার সমিতি সভাপতি বলেন,আমাদের কাছে এরকম অভিযোগ আছে,অনেক ডিলার নির্দিষ্ট সময়ে স্পটে যান না।অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ইতোমধ্যে ২ জন ডিলাকে নোটিশ করা হয়েছে।এই ব্যাপারে মনিটরিং দরকার।টিসিবির মনিটরিংয়ের লোকবল কম।
তিনি জানান,ঢাকায় প্রতিদিন ৬০টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হয়।অথচ ঢাকার পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাত্র ১৭টি ট্রাকে এবং উপজেলাগুলোতে ১৩টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।আগে চট্টগ্রামে ৪০টি ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রি করা হতো।তিনি বলেন,চট্টগ্রাম বৃহৎ নগরী।এখানে ট্রাক সেল ও মালামাল বাড়ানোর জন্য আমরা বারবার দাবি জানাচ্ছি।আগে আমাদেরকে প্রতিদিন ট্রাকে বিক্রির জন্য ৩ হাজার কেজি মালামাল দেয়া হতো।এখন দেয়া হচ্ছে মাত্র ১৬শ’ কেজি।আমাদের প্রতিদিন দরকার ১২শ’ কেজি তেল, ১ হাজার কেজি চিনি, ৫শ’ কেজি মসুর ডাল ও ৩শ’ কেজি পেঁয়াজ।অথচ এখন প্রতিটি ট্রাকে দেয়া হচ্ছে ৫শ’ কেজি চিনি, ৫শ’ কেজি মসুর ডাল এবং ৬শ’ কেজি তেল।পেঁয়াজ মজুদ থাকলে দেয়া হয়।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!