প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগের পাহাড়

0 ২৪৬

অনলাইন ডেস্কঃ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযোগ আসছে, অভিযোগের স্তূপ হচ্ছে। কেউ টেলিফোনে, কেউ এসএমএস বা কেউ লিখিত কাগজের মাধ্যমে এই অভিযোগ পাঠাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে যে, শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাক্তিগতভাবে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনেকে লিখিতভাবেও অভিযোগ পাঠাচ্ছে। এই অভিযোগগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন, নথিভুক্ত করছেন এবং যেখানে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছেন। গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, যে সমস্ত অভিযোগগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে আসছে, সেই অভিযোগগুলোকে মোটা দাগে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথম অভিযোগ হলো, চিকিৎসা না পাওয়া সংক্রান্ত। এই অভিযোগগুলো করছেন সাধারণ মানুষ। যারা বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা, তাঁরা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আশা-ভরসার শেষ স্থল। এজন্য তাঁরা লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানাচ্ছে যে, হাসপাতাল অব্যবস্থাপনার কথা, হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না, করোনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি হচ্ছে, টাকা লেনদেন হচ্ছে, করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে- এই ধরণের বহু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে যে, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবহিত। তাঁরা এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছে এবং যেখানে যে নির্দেশনা দেওয়া দরকার, সেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষা পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। যেখানে একটি মাত্র ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছিল, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণে সারাদেশে এখন ৬৬ টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রী ঢাকার বাইরে পরীক্ষা বাড়ানোর যে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

দ্বিতীয় যে অভিযোগগুলো আসছে সেগুলো করছে স্থানীয় এমপি, জনপ্রতিনিধি এবং মন্ত্রীরা। এই অভিযোগের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো হলো তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার সঙ্কট। হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, ডাক্তার না থাকা, করোনা চিকিৎসা না করা এবং আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানোর আবেদনসহ নানারকম অভিযোগ। এই অভিযোগগুলো করেছেন মূলত যেসমস্ত এলাকায় করোনার প্রকোপ বেশি এবং যেসব মন্ত্রী-এমপিরা কাজ করছেন তাঁরা অনন্যোপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এই সমস্ত অভিযোগগুলো যতটা না লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসেছে, তাঁর থেকে বেশি এসেছে টেলিফোনে এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে। এই অভিযোগগুলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে, তাঁদের কাছে বারবার স্বাস্থ্য উপকরণ, চিকিৎসকদের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সামগ্রী চাওয়ার পরেও তাঁরা কিভাবে দিতে ব্যর্থ হয়েছে সে সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তড়িৎ নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং যেখানে যা প্রয়োজন তা মেটানোর জন্য যতটুকু পারা যায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রগুলো।

তৃতীয় যে অভিযোগগুলো আসছে তা হলো, দূর্নীতি সম্পর্কিত অভিযোগ। এই অভিযোগগুলো আসছে বিভিন্ন সূত্র এবং বিভিন্ন মাধ্যমে। এই অভিযোগগুলোর মূল বক্তব্য হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনা সঙ্কটের সময়েও যে নানাবিধ দূর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়ন ঘটছে সেই সম্পর্কিত। অনেকে তথ্য-প্রমাণসহ তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছেন।

চতুর্থ অভিযোগ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি একটি হাসপাতাল থেকে এন-৯৫ মাস্ক সম্পর্কিত একটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা তদন্ত করে দেখেন যে, অভিযোগ সত্য। এরকম প্রতিদিনই দূর্নীতি নিয়ে নানারকম অভিযোগ আসছে। যে অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

পঞ্চম অভিযোগ হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের গা ছাড়া ভাব এবং দায়িত্ব পালন না করা সংক্রান্ত। বিএনপির এমপি হারুন অর রশিদ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ফোন করলে পাওয়া যায় না। ক্ষুদে বার্তা দিলেও তাঁর জবাব দেয়ার সৌজন্যতা দেখায় না। সরকার দলীয় আরেক এমপি অভিযোগ করেছেন যে, তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে টেলিফোনে পাননা এবং তিনি কোন কথাই রাখেন না। বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, তাঁদের এলাকায় যে চিকিৎসক, সেই চিকিৎসকের সঙ্কট, চিকিৎসকদের পাওয়া যায় না, চিকিৎসকরা থাকেন না ইত্যাদি সংক্রান্ত।
সর্বশেষ যে অভিযোগটি উঠেছে তা হলো, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো কি পরিমাণ অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা করছে সেই সম্পর্কিত। এই হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিট চালু করা হয় এবং সেখানে বিন্যামূল্যে করোনা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হয়। এই জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছে। কিন্তু অনেকগুলো হাসপাতাল সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার জনগণের পকেট থেকেও টাকা নিচ্ছে।এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নিজেই অসন্তোষ জানিয়েছেন এবং অভিযোগগুলো যাচাইবাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!