বাঁশখালীর পাহাড়ি জনপথ বনদস্যুর দখলে।চলছে পাহাড় কাটার রমরমা উৎসব! নিরব ভুমিকায় বন বিভাগ।

0 ৯৮

সরওয়ার আলম চৌধুরী: চট্টগ্রাম বাঁশখালীতে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে চলছে সরকারী পাহাড় কাটার রমরমা মহোৎসব। বাঁশখালীর পুর্বে রয়েছে পাহাড় ও কিছু কিছু এলাকায় রয়েছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম আসলেই নির্বিচারে একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই বড় বড় ডাম্বার ও স্কেবেটর দিয়ে মাটি কাটার অভিয়োগ অহরহ। পাহাড় কাটার ফলে ভরা বর্ষার মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে পড়ার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটছে। পাহাড়ের মাঠি বোঝাইকৃত ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা গুলো দিন দিন বেহাল অবস্তা হয়ে পড়ছে ।

সাধারণ মানুষ টিক মতো চলাচল করতে পারছে না। এই পাহাড় একদিকে যেমন ক্ষতি করছে পরিবেশের অন্য দিকে বন জঙ্গল উজাড় করে ক্ষতি করছে বন্যা প্রাণীর। খাবারের অভাবে বন্যা প্রাণি গুলো লোকালয়ে চলে আসতেছে এবং মানুষকে আক্রমণের ঘটনা প্রায় সময় ঘটে। বাংলাদেশের আইন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ১নং আইন মোতাবেক পাহাড় কাটা সম্পর্কে বাধা-নিষেধ রয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোন পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইতে পারে। অন্যতায় পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

পাহাড় খোকো স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়াতে মামলা ও হচ্ছে না সেই সাথে সরেজমিনে কোন ব্যক্তি মুখ খুলে কথা বলার সাহস করছে না। সরেজমিনে গিয়ে গতকাল ২৩ মার্চ ২০২১ সকাল ১০ টায় বাঁশখালীর পাহাড়ি জনপদ ঘুরে দেখা যায়, বিশেষ করে সাধনপুর, বানীগ্রাম, পাইরাং, চাম্বল, নাপোড়া, পুঁইছড়ী সহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় শুধু পাহাড় কাটা নয়, পাহাড়ে আগুন দিয়ে নির্মম ভাবে পুড়িয়ে কালো করে দেয়া হচ্ছে পাহাড়। সেই সাথে এক বিশেষ জরিপে দেখা যায় বাঁশখালীর বানীগ্রামে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন লোক বলেন, প্রশাসন ও বন বিভাগ প্রতিটি ট্রাকের টাকা পৌছে যায় বলে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নাই।

 

সেই সাথে পাহাড় কাটার সময় তাদের কল দিলে কল রিসিভ করে না কিংবা আমি ছুটিতে আছি বলে এডিয়ে যায়। পাহাড়ের মাটি বোঝাইকৃত ট্রাক চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। যদি পাহাড় কাটা বন্ধ না হয় আমাদের এলাকা গুলো পাহাড় শূন্য হতে আর বেশি দিন লাগবে না। সেই সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত হাতির আক্রমণের স্বীকার হতে হচ্ছে। অন্য দিকে গাছ ও জীববৈচিত্র গুলো মধ্যে নানা ধরনের পাহাড়ি ঔষধি গাছ ও আমাদের ঐতিহ্যবাহী ছন হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার ফলে শীতকালে মাত্রাতিরিক্ত শীত এবং গরমের দিনে মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়বে বলে ধারনা করছে বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা বলেন, বানীগ্রাম ৪ নং ওয়ার্ড নতুন পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন এই পাহাড় কাটছে।

প্রতি ট্রাক মাঠি আটশ থেকে নয়শ পর্যন্ত নিয়ে থাকে। ইউপি সদস্যের ভাই জেবুল কোম্পানির ট্রাক যোগে ড্রাইবার শুক্কুর সহ অনেকে রয়েছে পাহাড় কাটাতে ও মাঠি পরিবহনে। এই ব্যাপারে সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন চৌধুরী খোকা বলেন, আমাদের এলাকায় যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে জেলে পাটানো হয়েছে। পরে জেল থেকে এসে আবারো পাহাড় কাটে। নতুন করে কোন ব্যক্তি পাহাড় কাটছে কিনা আমি জানি না। যদি পাহাড় কাটে তাহলে আমরা উপজেলা প্রশাসনকে সহয়োগিতা করে সবাইকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করবো। এই ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমেনা আক্তার বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার দায়িত্ব আমরা সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে অবশ্যই আমাদের, আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমরা আসলে আমাদের দিক থেকে অবহেলা করছি না করবো ও না।

আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিয়ান পরিচালানা করে আইনের আওতায় আনবো। চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, পাহাড় কাটার যদি কোন অভিয়োগ থাকে তাইলে আপনারা আমাদের নির্দিষ্ট ফরম আছে এগুলো পূরণ করে অভিয়োগ দেন। অন্য দিকে আমাদের বাঁশখালীতে কোন অফিস না থাকার কারণে এই অবস্থা হচ্ছে। যদি আপনারা কেউ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিয়োগ দেন তাইলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!