শেষ বলে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা হার

0 ৫৮,৮৩৫

রোমাঞ্চের চোরাবালিতে বারবার ডুবলো ম্যাচ। চিত্রনাট্যে লেখা হলো বৃষ্টিও।লিটন দাস অসাধারণ হলেন আরও একবার। মনে করিয়ে দিলেন তাকে নিয়ে করা ইয়ান বিশপের ‘মোনালিসা আঁকা’ ধারাভাষ্য।তার এনে দেওয়া মোমেন্টাম কাজে লাগাতে পারলেন না পরের ব্যাটাররা।বৃষ্টির পর লিটন দ্রুত ফিরতেই ছন্দ হারালো বাংলাদেশ।

আরও একবার হতে হতেও হলো না বাংলাদেশের ভারতকে হারানো।তবুও ম্যাচের পর উজ্জ্বল হয়ে থাকল তাসকিন আহমেদের গতি,হাসান মাহমুদের ঘুরে দাঁড়ানো,লিটন দাসের শিল্পীর তুলিতে আঁকা কার্যকর ইনিংস।শেষ অবধি ফলে অবশ্য লেখা থাকবে না-বাংলাদেশের হারটা ছিল হৃদয় ভাঙা।

বুধবার অ্যাডিলেইড ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৪ রানের সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মার দল।মাঝে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকায় ১৬ ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫১ রান।কিন্তু ১৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা।

বোলিংয়ে নেমে শুরুতে তাসকিনের হাতে বল তুলে দেন সাকিব।ব্যাক অব লেন্থের হালকা বাউন্স পাওয়া বলে ইনিংসের শুরু করেছিলেন তাসকিন।প্রথম ওভারজুড়েই তিনি করেছেন দুর্দান্ত বোলিং,দিয়েছেন কেবল এক রান।এটুকু বললে কমই বলা হয় বোধ হয়।তাসকিন আদতে দুর্দান্ত ছিলেন তার পুরো স্পেলজুড়ে।৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন, উইকেট অবশ্য পাননি।

সেটা তিনি পেতে পারতেন নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই।তাসকিনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে রোহিত শর্মা সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা হাসান মাহমুদের হাতে।সোজা বাংলায় ‘লোপ্পা’ ক্যাচ ছেড়ে দেন তিনি।

পুরো ইনিংসজুড়েই ক্যাচ ছাড়ার মিছিলে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।কখনো মোস্তাফিজুর রহমান-সাকিব আল হাসান হাফ চান্স মিস করেছেন,কখনো আবার নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটের পেছনে।

পরের ওভারে এসেই অবশ্য প্রায়শ্চিত্তও করে ফেলেছেন হাসান।তাকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব।আপার কাট করতে গিয়ে ইয়াসির আলির হাতে ক্যাচ দেন রোহিত।৮ বলে ২ রান করে ফেরেন তিনি।

এই চাপ বাংলাদেশের বোলাররা ধরে রাখেন পাওয়ার-প্লের পুরোটাজুড়ে।৬ ওভারে কেবল ৩৭ রান তুলতে পারে ভারত।কিন্তু ওই চাপ অষ্টম ওভারে এসে সরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম।নো বল,ওয়াইড,ছক্কা হজমে তিনি এক ওভারেই দেন ২৪ রান।দলের সবচেয়ে খরুচে এই বোলার ৪ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য।

সাকিব অবশ্য নিজেদের প্রতি চাপ আটকে দেন লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়ে।নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে শর্ট ফাইন লেগের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি।৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩২ বলে ৫০ রান করেন রাহুল।

একপ্রান্তে আগলে রেখে এগিয়ে যান কোহলি।অন্যদিকে কিছুক্ষণ তাকে সঙ্গ দিয়ে দারুণ সব শট খেলছিলেন সূর্য কুমার যাদবও।মাঝে দুই দফা জীবন পাওয়ার পর সাকিবের বলেই থামেন ১৬ বলে ৩০ রান করে বোল্ড হয়ে।

শেষ অবধি ক্রিজে থাকা কোহলি ৪৪ বল খেলে করেছেন ৬৪ রান।৮ চারের সঙ্গে হাঁকিয়েছেন এক ছক্কা।বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট পেয়েছেন সাকিবও।

জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ প্রথম ওভারে রান করতে পারেনি তেমন,ভুবনেশ্বরের করা ওভারে আসে কেবল দুই রান।দ্বিতীয় ওভার থেকেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন লিটন।টাইমিংয়ে মুগ্ধ করে দুর্দান্ত সব শট খেলেন তিনি।

মাত্র ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন।বাংলাদেশের পক্ষে যেটা টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দ্রুততম।একটা কীর্তি অবশ্য ঠিকই গড়েছেন এই ব্যাটার।তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পাওয়ার-প্লেতে।আগের দুজন ছিলেন  ২০১৪ সালে স্টিফেন মাইবার্গ ও গত বিশ্বকাপে লোকেশ রাহুল।

লিটনে ভর করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভার থেকে যথাক্রমে ১২ ও ১৬ রান পায় বাংলাদেশ।রান তোলার এই গতি অব্যাহত থাকে বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগে অবধি।সপ্তম ওভারের এসে যখন খেলা বন্ধ হয় তখন কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৬ রান করেছে বাংলাদেশ।বৃষ্টি আইনে এগিয়ে ছিল ১৭ রানে।

বৃষ্টির পর লক্ষ্য বদলে যায়।বাংলাদেশও হারায় ব্যাটিংয়ের ছন্দ।এর মধ্যে লিটনও হয়ে যান রান আউট।অশ্বিনের বলে দুই রান নিতে গিয়ে লোকেশ রাহুলের সরাসরি থ্রোতে আউট হয়ে যান লিটন।শেষ হয় ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ২৭ বলে তার ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

শুরুর দিকে অত্যন্ত স্থিরভাবে খেলা শান্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।হাঁকান কয়েকটি বাউন্ডারিও।কিন্তু মোহাম্মদ শামির বলে সূর্য কুমার যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২৫ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে যান তিনি।

মাঝে কিছুটা আশা জুগিয়েছিলেন সাকিব।অশ্বিনের করা ওভারে দুই বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছিলেন তিনি।কিন্তু অর্শ্বদ্বীপ সিংয়ের বলে আউট হন ১২ বলে ১৩ রান করে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক।মাঝে আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন ও ইয়াসির আলির কেউই হাল ধরতে পারেননি।

শেষদিকে আবারও বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাসকিন আহমেদ।ছক্কা ও চারে তিনি হার্দিকের ১৫তম ওভারে চার বল নেন ১১ রান।কিন্তু পরের দুই বলে কোন রান করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান।শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২০ রান।

প্রথম বলেই সোহানকে স্ট্রাইক দেন তাসকিন।পরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আশাও জাগান তিনি।শেষ দুই বলে ১১ রান দরকার ছিল।সোহান বাউন্ডারি হাঁকান পঞ্চম বলে।শেষ বলে দরকার হয় ৭ রান।কিন্তু সোহান এক রানের বেশি নিতে পারেননি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!