সন্দ্বীপের চারদিকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করলেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে কিছু ভূমিদস্যুদের মাটি বিক্রির মহা-উৎসবে তা আজ হুমকির মুখে।

0 ৫০৬,৭৩৪

সন্দ্বীপের চারদিকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করলেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে কিছু ভূমিদস্যুদের মাটি বিক্রির মহা-উৎসবে তা আজ হুমকির মুখে।চট্টগ্রাম জেলার উপজেলা সন্দ্বীপে সরকারি খাঁসের জমি থেকে মাটি কাঁটার দৃশ্য দেখলে মনে হয় স্থানটি যেন মাটি বিক্রির পাইকারি হাট।প্রতি বছরের এই শীত মৌসুমে সন্দ্বীপে পূর্ব ও পশ্চিম বেঁড়িবাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটার প্রতিযোগিতায় নামেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।

সন্দ্বীপে পশ্চিম ভেঁড়িবাঁধের পাশে সরকারি জায়গা কেটে বিকট শব্দে ওঠানামা করছে শত শত ট্রাক্টর। রাতদিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।ধুলাবালুর কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে আশপাশে বসবাস করা শত শত পরিবার।ধুলায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।একসময় এই খরস্রোতা মেঘনা নদীকে বলা হতো সন্দ্বীপের দুঃখ।

পরে সন্দ্বীপের চাঁরপাশে জনপদকে বন্যার তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ভেঁড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়।কিন্তু কিছু প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যেই।আর এতে হুমকির মুখে পড়েছে ভেঁড়িবাঁধ।উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়ন থেকে রহমতপুর সহ পৌরসভা পর্যন্ত নদীর দুই পাশে চলছে মাটি কাটার মহা উৎসব।

সরেজমিন দেখা গেছে,বেরীবাঁধের ভিতরের মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধ,সড়ক ও সেতু।এক শ্রেণীর স্বার্থন্বেষী মহল নিয়মের তোয়াক্কা না করে অর্থের লোভে মেঘনা নদীর ভেতর থেকে ভিবিন্ন যন্ত্র মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।এলাকাবাসী আরো বলেন,ট্রাক্টরের আওয়াজে আমাদের রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে,রাস্তা ধ্বংস হচ্ছে,বেরীবাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে অথচ এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নিরবতা দেখা যাচ্ছে।

ট্রাক্টরে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটের ভাটা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে নেয়া হচ্ছে। মাটি আনা-নেয়ার কারণে পশ্চিম সাগর পারের ভেঁড়িবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক জায়গায় পাকা সড়কের পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত,ধুলাবালুতে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।পৌরসভা ও রহমতপুরের পশ্চিম সাগর পাড় থেকে প্রায় ৩ শতাধিক ট্রাক্টর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। সড়ক কেটে নদীর বাঁধের ভেতর দিয়ে এসব ট্রাক্টর ওঠানামা করছে এবং মাটি বোঝাই ট্রাক্টর ব্রিজের ওপরে চলাচল করলে পুরো ব্রিজ প্রচণ্ড বেগে কাঁপুনি দেয়।এতে ধীরে ধীরে সেতুর পিলার থেকে মাটি সরে গিয়ে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নদ তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান,প্রভাবশালী ভূমিদ্যস্যুরা অনুরোধ সত্ত্বেও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন।সারা দিনরাত ট্রাকে মাটি ও পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছেন।মাটি কাঁটার কারণে নদীর তীরবর্তী,ভেঁড়িবাঁধ,ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

তারা আরও বলেন,প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি।মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে মেশিনপত্র জব্দ করা হলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে নদীর পাশের ভেঁড়িবাঁধ,ফসলি জমি,ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদগর্ভে বিলীন হবে।

সচেতন মহলের দাবি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!